আপনাদের আবার মনে করিয়ে দেই, যেহেতু গোল্ডফিস মেমোরি! চরমোনাই পীর ও হেফাজত ইসলামের নড়াইল হামলায় নিন্দা ও এর সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই বলাটা মিথ্যা হলেও জায়েজ আছে। ১৯৬৫ সালের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হোন মোহাম্মদ আলী জিন্নার বোন ফাতেমা জিন্না। ফাতেমা জিন্না একজন নারী আর ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম এটি আলেম ওলামাদের অজানা নয়। তবু তারা ফাতেমা জিন্নাকে ভোট দিতে মুসলমানদের সুপারিশ করেছিলেন। কেন?
কারণ আইয়ুব খান ইসলামী পার্সোনাল ল’ সংস্কার করে এই দেশের মুসলমানদের বাপের কাজ করে দিয়েছিলো। আইয়ুব খান আইন পাশ করলেন দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু শরীয়া আইনে প্রথম স্ত্রীর কোন অনুমতি নিতে হয় না। আইয়ুব খান বিয়ের জন্য মেয়ে ও ছেলেদের বয়স বেঁধে দিলেন। কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে নাবালিকা মেয়েদের জন্য সেক্স ও সন্তান ধারণ মারাত্মক স্বাস্থ ঝুঁকির। এটাও ইসলামের আইনের বিরুদ্ধে। কারণ ইসলাম মতে ছেলেদের নিন্মাঙ্গের চুল গজালে ও মেয়েদের মাসিক শুরু হলেই তারা বিয়ের জন্য উপযুক্ত। আইয়ুব খান নারীদের তালাকের অনুমতি দিলেন এবং মৌখিক তিন তালাক বাতিল করলেন। এটাও ইসলাম বিরোধী। কারণ ইসলাম নারীদের তালাকের অধিকার দেয়নি। এটি শুধু পুরুষের এবং এর জন্য পুরুষকে কোন কারণও দেখাতে হবে না। আইয়ুব খান আরেকটি সংস্কার করলেন। দাদার মৃত্যুর আগে পিতা মারা গেলে নাতি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এটাই ইসলামী হুকুম। সেই শরীয়া আইন বাতিল করে নাতিকে সম্পত্তিতে অধিকার দেয়া হলো। এগুলো যে ইসলামের সংস্কার সে কারণেই তখনকার আলেম সমাজ আইয়ুব খানের পতনের জন্য আদাজল খেয়ে নামলেন। তারা ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম জেনেও আইয়ুব খানকে ঠেকাতে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দিতে মুসলমানদের আহ্বান করলেন এবং ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম জেনেও এর ব্যাখ্যায় বললেন, বড় খারাপকে দমন করতে উনারা ছোট খারাপকে গ্রহণ করেছেন যা জায়েজ আছে দ্বিনের স্বার্থে। যেমন ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সেক্যুলারিজম হারাম হলেও মুসলমানরা যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে সেক্যুলারিজমের সুযোগ নিয়ে সমান অধিকার পেতে সেক্যুলারিজমকে সাপোর্ট করবে। ভারতের দেওবন্ধ মাদ্রাসা গোটা উপমহাদেশের মুসলিম অঞ্চলে ইসলামী শাসন খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও এসব অঞ্চলে সেক্যুলারিজমকে কুফরি বললেও ভারতের নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ দল যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে তার জন্য গণমোনাজাতের আয়োজন করে। কারণ সেক্যুলারিজম কুফরি হলেও ভারতের মুসলমানদের সুবিধার জন্য সেখানে সেক্যুলারিজমকেই সাপোর্ট করতে হবে।
বাংলাদেশে একের পর এক হিন্দু পল্লীতে হামলা চালিয়ে যখন মনে হবে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মডারেট মুসলমানদের মনে কোন খারাপ ধারণা চলে আসতে পারে তখন প্রয়োজনে এ ধরণের হামলাগুলিকে ‘ইসলাম সমর্থন করে না’ বলা জায়েজ আছে কারণ দ্বিন সম্পর্কে যাতে কেউ ঈমানহীন হয়ে না যায়। এবার বুঝেঝেন চরমোনাই পীর ও হেফাজত ইসলামের বিবৃতির শানে নযূল?
-সুষুপ্ত পাঠক
19 July 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................