মদ কালীকে নিবেদন করা হয় না। মদ দিয়ে দেবীর তর্পণ হয়।
অবশ্য এটা মাসীমা জানেননা বলেই হুইস্কি দিয়ে কালী পুজো করার কথা বলেছেন। মাসীমা হলেন সেই ক্যাটাগরি যারা তারাপীঠ যায় হোটেলের ঘরে বসে নিরুপদ্রবে মদ খাবে বলে। আদতে কারণবারীর সাথে যে তন্ত্রসাধনার সম্পর্ক সেই সাধনা সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গও এনারা জানেন না।
শাস্ত্রমতে মদের বিকল্প দেওয়ার কথা। আর তন্ত্রমতে কিছু করণক্রিয়া রয়েছে যেটা আভিচারিক কর্ম। তাতে মদ লাগে। সেটাও হুইস্কি নয়। পঞ্চ ম-কারের যে পুজো তাতে সামবেদী মতে ইক্ষুগুড়, আদা এবং হলুদ বাটা দিয়ে সুরা তৈরি হয়। আর যজুর্বেদীয় মতে মহুয়া ফুলের রস দিয়ে তৈরি হবে (কিন্তু সেক্ষেত্রে তো আবার ওনার মহুয়া ফুলের রস পছন্দ নয়। ইতিপূর্বেই কোর্ট কেস করে সেকথা তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।)। শাস্ত্রে এটাও উল্লেখ রয়েছে যে, কাঁসার পাত্রে ডাবের জল এবং তামার পাত্রে দই দিলেও তা মদ-তুল্য।
আসলে অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী। ক্যালকেশিয়ান কালচারে অভ্যস্ত মাসীমা জানেননা যে কারণবারী আর মদ এক নয়। মাসীমার অবশ্য এসব জানার কথাও নয়। কারন মাসীমা তন্ত্রসাধক তো আর নন। তাই তন্ত্রের কথা আর কি করেই বা জানবেন। অবশ্য এতে মাসীমার কোন দোষ নেই। এটি ক্যালকেশিয়ান কালচারের চিরবৈশিষ্ট্য। ওনারা ভাবেন ওনারাই সব জানেন এবং বোঝেন। আর বাকস্বাধীনতার নামে ওনারা যা খুশি বলতে পারেন।
এই প্রসঙ্গেই আসে দ্বিতীয় বিষয়টি। এক তো যা বলেছেন তা ভুল বলেছেন। দ্বিতীয়ত কি উদ্দেশ্য নিয়ে বলেছেন?
উদ্দেশ্যটি যে বিশেষ সৎ নয় তা মাসীমার বলার ধরনেই এবং পূর্বের ধারাবাহিক হিন্দুফোবিয়া খেয়াল করলেই বোঝা যায়। এই তো কদিন আগেই নুপূর শর্মা একটি ফ্যাক্ট বলেছিলেন, তখন এই মাসীমাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বাণী ঝেড়েছিলেন, দায়িত্বের কথা মনে করিয়েছিলেন। আজ মাসীমা নিজেই সেসব ভুলে মেরে দিলেন। ভুলে যাওয়াটা ইচ্ছাকৃত অবশ্যই।
কদিন আগেই নুপূর শর্মার বক্তব্য নিয়ে যখন তারই সাংসদীয় এলাকায় একদল "দুষ্কৃতি" বিশাল হাঙ্গামার সৃষ্টি করেছিল তিনদিন ধরে তখন কিন্তু মাসীমাকে কিছু বলতে শোনা যায়নি। কারন তারা মাসীমার ভোট ব্যাঙ্ক। তাই মাসীমা কিছু বলেননি। কিন্তু মা কালীকে নিয়ে সহজেই বলা যায়। কারন মা কালীর ভক্তরা সংখ্যায় বেশী হলেও একজোট নয়। নানা মতে নানা ধর্মে বিভক্ত হয়ে, প্রত্যেকে নিজ নিজ গুরু বা মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে ব্যস্ত হয়ে পরায় এটাই ভুলে গেছে আদতে শিকড়টা একই। সেই শিকড় যে বা যারা কাটার চেষ্টা করছে তাদের বিনাশ না করলে কোন মত বা পথই ভবিষ্যতে রক্ষা পাবেনা।
যে ভূমিতে মায়ের এতোগুলি পীঠ আছে সেখানে কোন মত বা পথের পক্ষ থেকে এখনও কোন প্রতিবাদ এলোনা। যেটুকু প্রতিবাদ হচ্ছে তা বিজেপির পক্ষ থেকে আর সর্বোপরি সাধারন ভক্তদের মধ্যে থেকে। অথচ হওয়া উচিত ছিল উল্টো। কালীঘাট বা দক্ষিণেশ্বরের পূজারী যারা শুধুমাত্র কিছু অনুগ্রহ লাভের আশায় মায়ের এই অপমান হজম করছেন তাদের আর মায়ের সেবা করার অধিকার আছে কিনা তা তারাই স্থির করুন। যদি তারা মনে করেন মহুয়া মৈত্র সঠিক, তাহলে তারা বরং কাল থেকে মা সারদার দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে পুনর্জন্ম নেওয়া মা সারদাকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তারা যদি চুপচাপ এই অপমান হজম করেন তাহলে তাদের অধিকার নেই মা সারদা, রামকৃষ্ণ, রাণী রাসমণির উত্তরাধিকারের অংশ হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেওয়ার। তাদের অধিকার নেই কালীক্ষেত্রের মহান সাধকদের উত্তরাধিকারে।
মাসীমা এখন রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ পরমহংসের উদাহরন দিচ্ছেন বা ঘুরিয়ে এদের উদাহরন টেনে এনে নিজেকে জাস্টিফাই করতে চাইছেন। রামকৃষ্ণ, রামাপ্রসাদরা সাধনার যে শিখরে পৌছাতে পেরেছিলেন চালচুরি, চাকরিচুরি এবং তোষণের সাধনা করে সেই জ্ঞান লাভ করা কখনই সম্ভব নয়। কাজেই উনি চাল চুরি, চাকরি চুরি, তোষন এবং ভন্ডামী নিয়েই থাকুন। মাকে নাহয় তাঁর ভক্তদের জন্য ছেড়ে দিন।
নূপুর শর্মা যা বলেছিলেন তা অপ্রাসাঙ্গিক হলেও ফ্যাকচুয়াল। মাসীমাও যা বলেছেন তার প্রামান্য দলিল দাখিল করে প্রমান করুন হুইস্কি দিয়ে মায়ের পুজোর কথা কোথায় বলা আছে, কারণবারী মানে যে বাজারী মদ তা প্রমান করুন, নাহলে ক্ষমা চান।
মাসীমা তুমি সেকুলারি কপচেছ, উস্কানি দিয়েছ, কিন্তু কেওড়াতলার ওপার এখনও দেখোনি।
মায়ের অপমান করেছ। এবার প্রস্তুত হও ক্রোধের জন্য। দেখো তোমার কোন বন্ধু তোমাকে বাঁচাতে পারে মায়ের রোষ থেকে। এমনকি তোমার হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রীটের মাও বাঁচাতে পারে কিনা দেখো। নাকি আবার পুনর্জন্ম নিতে হয় দেখো।
© দীপ্তাস্য যশ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................