পৃথিবীর শেষ কিনারায় গিয়ে যখন আমি নিচে উঁকি দিবো তখন দেখতে পাবো খাদের নিচে রাতের কালো আকাশে তারা ফুটে আছে! পৃথিবীর সেই শেষ সীমানা যে কোথায়! আমি যখন বড় হবো তখন পৃথিবীর সেই শেষ কিনারায় যাবো আর দেখবো কি করে সেখানে সমুদ্রের জল ছলকে পড়ছে আমার পায়ের নিচের আকাশে...।
আমার বালক বেলার এই চিন্তাগুলি ছেলেমানুষী ছিলো বলা যায় না। কারণ কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষগুলি পর্যন্ত এভাবেই ভেবেছে। একটা গোল বলের উপর একটা পিঁপড়া তার আকার অনুযায়ী তার চলার পথটাকে সমতলই মনে করবে। তাই সে যখন এই পথের শেষ কিনারায় যাবার জন্য হাঁটা শুরু করে তার পথ কিন্তু কোনদিনই শেষ হবে না। সে ফিরে আসবে তার হাঁটা শুরু করা স্থানেই। মানুষ পৃথিবী নামের একটা গোল বলের উপর হেঁটে চলা একটা পিঁপড়ার চেয়েও ক্ষুদ্র প্রাণী। সে তাই বহু শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীকে সমতল ভেবেছে। যে কারণে আদিম ধর্মীয় বইগুলিতে সবজান্তা ঈশ্বর অহংকার করে বলেছেন তিনি মানুষের জন্য জমিন বিছিয়ে দিয়েছেন চাদরের মত করে মানুষের কল্যাণের জন্য। আর পাহাড়গুলি বানিয়েছেন যাতে এই বিছানাগুলি সব কিছু নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে!
‘আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ ও পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ?’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৬-৭)
আর আমি জমিনের উপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদের নিয়ে জমিন ঝুঁকে না পড়ে (২১:৩১)।
কোন গোল বলকে কেউ বিছানার মত করে বিছিয়ে দিতে পারে কি? যদি পৃথিবীকে লুডু কিংবা ক্যারাম বোর্ডে মত করে ভাবি তাহলে সেটাকে বিছানার মত করে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া সম্ভব। কিন্তু একটা ফুটবলকে আপনি কি করে চাদর দিয়ে বিছিয়ে দিতে পারেন? আর পাহাড়কে যদি পেরেকের মত বিছানা ধরে রাখার জন্য বানানো হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পায়ের নিচে পৃথিবীর যে প্রান্তের মানুষের বাস তারা কি করে ঝুলে আছে? সেখানে তো পাহাড়গুলিই পড়ে যাবার কথা! কারণ মধ্যাকর্ষণ শক্তি এই সেদিন নিউটন আবিস্কার করলেন। এই মধ্যাকর্ষণ শক্তিই আমাদের সব কিছু নিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে যেতে দেয় না। কোন পাহাড় ফাহাড় আমাদের পেরেকের মত আটকে রাখে না।
যীশুর জন্মের ৩৮৪ বছর আগে গ্রীসে জন্ম নিয়েছিলেন এরিস্টটল। তিনি কিন্তু ঠিকই বুঝেছিলেন পৃথিবী আসলে গোলাকার বস্তু। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের গায়ে পৃথিবীর যে ছায়া পড়ে সেটা গোলাকার। আর গোল বস্তুর ছায়া গোলই হয়। কিন্তু এরিস্টটলের সেই যুগে এরকম জ্ঞান খুব বেশি দূর পৌঁছানোর সুযোগ ছিলো না। জ্ঞান তখনো পন্ডিতদের মধ্যেই চর্চা হতো। তাই মাত্র দুইশো বছর আগেও জাহাজের নাবিকরা সতর্ক থাকত জাহাজ যাতে দিক হারিয়ে পৃথিবীর শেষ কিনারায় গিয়ে স্রোতের টানে মহাশূন্যে না পড়ে যায়! সে তুলনায় দেড় হাজার বছর আগে লিখিত একটি ধর্মীয় গ্রন্থে পৃথিবীর শেষ কিনারায় পৌঁছে যাবার কথা বলা খুব বেশি বিস্ময়ের তো নয়ই, সেটা নিয়ে হাসাহাসি করারও প্রয়োজন নেই।
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন। (সুরা কাহাফ, আয়াত-৮৬)
জেমস ওয়েব আমাদের জীবনকে সৌভাগ্যময় করে তুলেছে কারণ আমরা এখন দেখতে শুরু করব বিগ ব্যাংয়ের সূচনাকালে কেমন ছিলো মহাবিশ্ব। আমরা এখন জানি পৃথিবীর জন্ম হয়েছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ৯০০ কোটি বছর পর যখন মহাবিশ্বে অগুণতি গ্যালাক্সি জন্ম নিয়ে ফেলেছে। তবু মানব জাতির ট্রেজিডি যে এখনো এরকম জিনিস বিশ্বাস করার মত লোক আছে এবং এগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের অনুভূতি আহত হয় এবং তাদের অনুভূতি রক্ষার জন্য জ্ঞানী বুদ্ধিজীবীরা সরব হয়!
‘আল্লাহ তাআলা জমিন সৃষ্টি করলে তা নড়াচড়া শুরু করে। অতঃপর তিনি পাহাড় স্থাপন করার পর জমিনের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৯১)
তাহলে আল্লা কি জ্ঞাত ছিলেন না জমিন ঠিক রাখতে পাহাড় বানানো দরকার? নাকি তিনিও পরীক্ষা নিরীক্ষার ও ঠকে শিখেন?...
যাই হোক, ডারউইন ও জেমন ওয়েব মানব সভ্যতার ধর্মের বিলিন হওয়ার সূচনা করেছে যা আর এক শতাব্দীর মধ্যে বিলিন করে দিবে...।
-সুষুপ্ত পাঠক
14 July 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................