আজকে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটা ইন্টারভিউ পড়লাম। সাম্প্রতিককালের বেছে বেছে হিন্দু ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের নামে ধর্ম অবমানরার অভিযোগ তুলে অপমান অপদস্ত করার প্রেক্ষিতে এই ইন্টারভিউ। আমি নিজে মনে করি আজকের এই পরিস্থিতি চলে আসার পিছনে জাফর স্যারদের মত মানুষদেরও কিঞ্চিত ভূমিকা আছে। স্যারদের দলীয় রাজনীতির প্রতি আনুগত্য ও মডারেট ভূমিকা এই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কোন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেনি। জাফর ইকবাল আজকে বলতে বাধ্য হয়েছেন সাম্প্রদায়িকতার নোংরা রূপ বাংলাদেশের ‘বড় সমস্যা’। খেয়াল করুন, দশ বছর আগেও আমরা যখন সাম্প্রদায়িকতাকে বড় সমস্যা বলতাম, অথ্যাত ধর্ম একটি বড় সমস্যা তখন ইন্টেলেকচুয়াল মানুষরা নাস্তিকদের ধমকি দিয়ে বলতেন, ধর্ম কোন সমস্যাই না। আর্থ সামাজিক অবস্থা, ধনী গরীরের বৈষম্য এগুলো নিয়েই কাজ করতে হবে। আহমদ ছফা মৃত্যুর কয়েক বছর আগে ভারতের একটি পত্রিকার সঙ্গে কথা বলার সময় জোর দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা নেই। এটি ভারতের সমস্যা...। তখনো কিন্তু তসলিমা নাসরিন দেশছাড়া হয়েছেন মুল্লাদের ভয়ে। সালমান রুশদির ফাঁসি চেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা রাজপথ দখল করেছে। বিন লাদেনের পোস্টার দেদারছে বিক্রি হয়েছে। তবু ছফা দেখতে পাননি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন সমস্যা আছে! মৌলবাদের কোন সমস্যা আছে!
আমরা যদি কয়েক বছর আগে পিছনে যাই, তখন দেখবো বইমেলায় কি ধরণের বই প্রকাশ পাবে সেটা জাফর ইকবাল স্যাররা ঠিক করে দিচ্ছেন! একজন লেখক প্রকাকশকে হাতকড়া পরানোটা তখন সামসুজ্জামান খান-জাফর ইকবালকে কষ্ট দেয়নি। সেদিন প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিককে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরিয়ে ধরে আনা হয়েছিলো তৌহদী জনতাকে খুশি করতে। সেখান থেকেই তাদের আস্পর্ধা বেড়ে গিয়েছিলো। সেখান থেকেই আজকের স্বপন কুমার স্যারকে জুতার মালা পরানো সম্ভব হয়েছে। যেদিন আলী দাস্তির বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাংলা একাডেমির কাছে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ মনে হয়েছে সেদিনই এই দেশের বইপত্র সাহিত্যের পোঙ্গা মারা শেষ হয়েছে! আজকের বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি হঠাত বিগড়ে গেছে তা নয়। এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এই সাম্প্রদায়িক বিষাক্ত মন গড়ে উঠতে মডারেট প্রগতিশীলদের ভূমিকা অনেকখানি।
গত এক দশকে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিকাশ হতে যা যা লাগে তার সবই করা হয়েছে। তাদের দাবীতে পাঠ্যবইকে খতনা করে মুসলমান করা হয়েছে। জাফর ইকবাল স্যার কিংবা শাহরিয়ার কবির তারা কেউ সে অর্থে এগুলোর ব্যাপারে বড় ভূমিকা রাখতে পারেননি। যদি এই সময় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকত তাহলে তারা অনেক বেশি এক্টিভ থাকতেন। এখানেই আসল পয়েন্টটা। এদেশের সেক্যুলার প্রগতিশীলরা সবাই রাজনৈতিক আদর্শকে আগে বিবেচনা করেন। জাফর ইকবাল যেমন বলেছেন, স্মার্ট ফোনই কিশোর গ্যাং তৈরিতে ভূমিকা রাখছে সেটি যে অবাস্তব কথা স্যার কেন বুঝলেন না? কিশোর গ্যাং এখন চালায় কারা? বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের কারা বলে খুন করে আয় আমি দেথবো? পাড়া মহল্লার বড় ভাই এমপি কমিশনাররাই চিরকাল কিশোর গ্যাং চালিয়ে এসেছে। স্মার্ট ফোন তো এলো এই সেদিন। জাফর ইকবালকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটি কোপ দিয়েছিলো তাকে স্মার্টফোন তৈরি করেনি। যে ছেলেটি এখন গান বাদ্যযন্ত্রকে ঘৃণা করে, আফগানিস্থানে এগুলো নষ্ট করে ফেলা হলে সে যখন সোশাল মিডিয়াতে আনন্দ প্রকাশ করে সেটি স্মার্ট ফোন সহজ লভ্য বলে নয়। সে এটি করে কারণ সে আদর্শ হিসেবে জেনে এসেছে ওমর আবু বকরের শাসনকে। স্কুলে ক্লাশ টেন পর্যন্ত ইসলামের খলিফাদের সুখ্যাতি পাঠ করে সে কি করে শিল্প সাহিত্যকে ভালোবাসবে? ওমরের সময় কি গান বাদ্য চর্চা বৈধ ছিলো? আবু বকর কি শিল্পকলা ললিতকলা তার খিলাফতে চালু করেছিলো? পাঠ্যপুস্তক যারা প্রণয়ন করেন সেইসব কোট প্যান্ট ক্লিন সেভড ডক্টরেড ডিগ্রীধারী স্যাররা শিশু কিশোরদের শেখাচ্ছেন আদর্শ লিডার হচ্ছে হযরত ওমর! আবু বকর! সে শিক্ষার্থী কি স্বপন কুমারকে সন্মান করতে শিখবে? উত্পল কুমারকে সন্মান করতে শিখবে?
-সুষুপ্ত পাঠক
#সুষুপ্তপাঠক
7 July 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................