যারা বলে বাংলাদেশ কি ইরান আফগান হবে?

বাংলাদেশ কি ইরান আফগান হবে?

অনেকেই বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি এতোটাই সমৃদ্ধ যে আর যাই হোক তারা কট্টর মৌলবাদীদের সমর্থন দিবে না। বাঙালি মুসলমান হয়েছে নরম সুফিবাদীদের হাতে, ফলে কট্টর ইসলামপন্থীরা এদেশে সমর্থন পাবে না।

এসব হল মুখস্তবিদ্যা। বাঙালির তেমন কোন সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি নেই। অনেক টেনেটুনে হাজার বছরের একটা ভাঙ্গাচুরা ইতিহাস দাঁড় করাই। ভাষার ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের আদি নিদর্শন চর্যাপদ বাংলাই তা কেবলমাত্র আমরাই দাবি করি। নিরপেক্ষ গবেষকদের কেউই অন্তত এটা বাংলা- সেটা বলেন না। আমাদের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে আফগানিস্তান ও পারস্যের তথা ইরানের। 

আফগানরাও ছিল প্রকৃতিপূজারী তথা হিন্দু দেব দেবী আরাধনাই করতো । এরপর বৌদ্ধ হয়। সেখান থেকে একবার ইসলাম গ্রহণ করেও আবার আগের ধর্মে ফিরে যায়। এরপর তারা আবারো মুসলিম হয়। পারস্যর ইতিহাস আরো সমৃদ্ধ। এখানে বহু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাস বলে, এখানেই ইব্রাহিম আ. এর মাথায় একেশ্বরবাদী চেতনা জাগ্রত হয়। এখানে মনি ধর্ম ও জরুথ্রুস্ট ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রভাব ছিল। বহু মনিষির জন্মও ইরানে। সেই আফগানিস্তান ও ইরানও আজ মৌলবাদের কবলে বিধ্বস্ত। আর বাংলাদেশের মানুষতো এখনো খুবই পশ্চাৎপদ। এখানকার শিক্ষার মানও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের। আমাদের ভূখণ্ডে কখনোই নতুন কোন দর্শনের আবির্ভাব ঘটেনি। নতুন চিন্তা করা এবং বিপ্লব করার ক্ষেত্রেও আমাদের তেমন ঐতিহাসিক ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। 

এখনো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকেও বিশ্ব ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবেই বিবেচনা করে। এমনকি একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও জাতিসংঘের কাছে আবেদন নিবেদন করতে হচ্ছে!

আফগানিস্তান ও ইরানে যদি মৌলবাদ শিকড় গেড়ে বসতে পারে তাহলে বাংলাদেশতো আরো সুবিধাজনক জায়গায় আছে। আফগানিস্তান ও ইরানে মৌলবাদ মাথাচাড়া দেয় অগণতান্ত্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে। সেখানে মানুষ সমৃদ্ধের পথেই ছিল। ইরানি মেয়েদের ক্ষমতায়ন ঘটেছিল পাশ্চাত্যের মতোই বা তারচেয়েও বেশি। আফগানিস্তানের মেয়েরাও ছিল আধুনিক এবং তারা আরো সুশিক্ষার দিকেই ধাবিত হচ্ছিল। ইরানের চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্ব দরবারে। শিক্ষায় ও সংস্কৃতিতেও মানুষ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। যা খুশি কর কিন্তু রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে টুশব্দ করা যাবে না। মানুষতো মত প্রকাশ করতেই চায়। কিন্তু রাজতন্ত্র উৎখাতের জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা ছিল। আমেরিকা ও ইউরোপের ষড়যন্ত্রে দুটি দেশেই আজ ধর্মীয় মৌলবাদ কায়েম হয়েছে। মানুষ তাদের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। মানুষ হঠাৎই কয়েক ধাপ নিচে নেমে গিয়েছে। এখন কথা বলা দূরের কথা- হা করাই কঠিন। মাসা আমিনি নামের মেয়েটি হিজাব পরাই ছিল কিন্তু দূর থেকে আসার কারণে হিজাবের ফাঁক দিয়ে কয়েক গোছা চুল বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পরিণতিতে মেয়েটিকে ধরে কথিত নীতি পুলিশ এবং তাদের অত্যাচারে সে তিনদিন কোমায় থেকে মারা যায়। এমন ভয়ানক অবস্থায় রয়েছে ইরানের মানুষ। তারা এখন ক্ষুধায় কাতর হয়ে থাকছে গুলির মুখে। আফগানিস্তানের অবস্থা আরো খারাপ। তারাও জীর্ণ, শীর্ণ ও ক্ষুধার্ত!

বাংলাদেশে যদি আরো দীর্ঘকাল সুষ্ঠুধারার গণতন্ত্র না আসে। তাহলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনসমর্থন একেবারেই কমে যাবে। সেই সুযোগেই উত্থান ঘটতে পারে কোন ধর্মীয় নেতৃত্বের। একটা ধর্মীয় বিপ্লব আমাদের হোট করেই নামিয়ে ফেলবে আফগানিস্তানের কাতারে। তখন আর এমন অবস্থা থাকবে না। মেয়েরা কেউ চাকরি করতে পারবে না, বাইরে বেরুতে পারবে না, পড়াশোনা করতে পারবে না। কেউই আধুনিক চিন্তা ও মুক্ত চিন্তা করতে পারবে না। দেশ বহু বহু বছরের জন্য পেছনের দিকে হাঁটতে থাকবে। তাই দেশের স্বার্থে, মানুষ ও মানবতার স্বার্থেই আমাদের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় আসতে হবে। যদি আরেকবার ব্যর্থ হই তাহলে প্রস্তুত থাকুন...!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted