শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম এবং কথিত তার নবীকে বিশ্বাস করেনি বলেই একটি জাতি বা সম্প্রদায়কে তাদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ

সপ্তম শতাব্দীতে মদিনাতে যে ইহুদী গোত্রগুলো বসবাস করত সেখানে মক্কা থেকে শরণার্থী হয়ে আসা মুসলমান যারা জাতিতে ছিলো আরব- তাদের হাতে নির্মমভাবে মদিনা থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলো। বড় ধরণের গণহত্যা, ম্যাসাকারের শিকার ইহুদীদের এক্ষেত্রে জার্মানিতে হিটলারের হাতে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। এক সময় আর সব মুসলিম ঘরের ছেলের মত আমারও ছিলো স্বধর্মের প্রতি অনুরাগ। কিন্তু সেই কৈশোরে যখন কুরআন হাদিসে ধর্মকে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন সেদিন আজন্ম জানা মহাপুরুষগুলো থেকে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছিলাম। তেমনই একটি হাদিস নিচে দেয়া হলো-

আবু হুরাইরা বর্ণিত, একদা আমরা মসজিদের মধ্যে ছিলাম, তখন নবী আসলেন আর বললেন, চল আমরা ইহুদিদের বস্তিতে যাই। আমরা তখন বাইতুল মিডরাস পৌছলাম। নবী সেখানকার ইহুদিদেরকে বললেন, ‘যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর তাহলে তোমরা নিরাপদ। তোমাদের জানা উচিত দুনিয়াটা আল্লাহ ও তার রসুলের। আমি তোমাদেরকে এ ভূমি থেকে উৎখাত করতে চাই। এখন যদি তোমাদের কোন সম্পদ থাকে তাহলে তা বিক্রি করে দাও, অন্যথায় জেনে রাখ এ দুনিয়া আল্লাহ ও তার রসুলের’ (বুখারি, ভলুম-৪, হাদিস-৩৯২)।
 
শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম এবং কথিত তার নবীকে বিশ্বাস করেনি বলেই একটি জাতি বা সম্প্রদায়কে তাদের জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি কি করে ধর্ম হতো পারে? জাপানী শিশুদের এক সময় লোহার জুতা পরিয়ে যেমন পা ছোট রাখা হতো তেমনি মাদ্রাসাতে ছোট থেকে মগজকে লোহার সিন্দুকে আটকে রাখা হয় বলেই পরবর্তীকালে এরকম নিষ্ঠুরতা পড়েও তারা উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু যে কোন বিবেকবাণ মানুষকে এই ঘটনা নাড়া দিতে বাধ্য। ইসলামের অথেনটিক সোর্স থেকে এবার দেখি ঠিক কিসের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে ইহুদীদের হত্যা করা থেকে শুরু করে দাস বানানো, দেশ থেকে উচ্ছেদ পর্যন্ত করা হয়েছিলো। পাঠকদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই ঘটনাগুলোর সঙ্গে আজকের মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রভাব বা ধর্মীয় কর্তব্য অনুসন্ধান করা…।


আজকের যুগে ইসলাম অবমাননা বা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে যেমন রামু নাসিরনগর ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘর মন্দিরে হামলা চালানো হয় সেই সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম জন্মের পর পরই একই রকম অভিযোগে অমুসলিমদের উপর হামলা চালানো হতো। তেমনি এক ভয়াবহ ম্যাসাকার বা নৃশংস গণহত্যা যা ইহুদীদের উপর চালানোর হয়েছিলো। ইসলামের অন্যতম দলিল প্রখ্যাত তাফসিরকারক ইবনে কাথিরের তাফসির থেকে তুলে ধরছি। এই গণহত্যার পটভূমিটা ছিলো ইহুদীদের সর্দার কা’ব ইবনে আসাদের কথিত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তার ষড়যন্ত্রের দরুণ সাতশো ইহুদী পুরুষ যারা যুদ্ধ করার মত সক্ষম (যৌনকেশ উঠেছে এমন বালকরা এক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো) তাদের হত্যা করা হয়েছিলো পরিখা খনন করে। আর ইহুদীদের নারী ও শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিলো। ইবনে কাথির তাফসিরের বিশেষ বিশেষ অংশ এখানে তুলে দিলাম-

ইবনে কাথিরের তাফসির: যখন মুশরিক ও ইযাহুদিদের দল মদিনায় এসে অবরোধ সৃষ্টি করল, তখন মদিনার বনু কুরাইযা গোষ্ঠির ইহুদিরা যারা মদিনায় বসবাস করত ও যারা নবীর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল ও চুক্তি ভেঙ্গে দিল। তারা চোখ রাঙাতে লাগল। তাদের সরদার কা’ব ইবনে আসাদ আলাপ আলোচনার জন্য আসল। ম্লেচ্ছ হুয়াই ইবনে আখতাব ঐ সরদারকে সন্ধি ভঙ্গ করতে উদ্বুদ্ধ করল। প্রথমে সে সন্ধি ভঙ্গ করতে সম্মত হলো না। সে এ সন্ধির উপর দৃঢ় থাকতে চাইল। হুয়াই বললো- এটা কেমন কথা হলো? আমি তোমাকে সম্মানের উচ্চাসনে বসিয়ে তোমার মস্তকে রাজ মুকুট পরাতে চাচ্ছি ,অথচ তুমি মানছ না? কুরাশেরা ও তাদের অন্যান্য সঙ্গীসহ আমরা সবাই এক সাথে আছি । আমরা শপথ করেছি যে, যে পর্যন্ত না আমরা এক একজন মুসলমানের মাংস ছেদন করব সে পর্যন্ত এখান থেকে সরব না। কাবের দুনিয়ার অভিজ্ঞতা ভাল ছিল বলে সে উত্তর দিল-“এটা ভুল কথা, এটা তোমাদের ক্ষমতার বাইরে। তোমরা আমাকে লাঞ্ছনার বেড়ী পরাতে এসেছো। তুমি একটা কুলক্ষনে লোক। সুতরাং তুমি আমার নিকট থেকে সরে যাও। আমাকে তোমার ধোকাবাজির শিকারে পরিনত করো না”। হুয়াই কিন্তু তখনো তার পিছু ছাড়ল না। সে তাকে বার বার বুঝাতে থাকল। অবশেষে সে বলল-“ মনে কর যে কুরায়েশ ও গাতফান গোত্র পালিয়ে গেল, তাহলে আমরা দলবল সহ তোমার গর্তে গিয়ে পড়ব। তোমার ও তোমার গোত্রের যে দশা হবে, আমার ও আমার গোত্রেরও সেই একই দশা হবে”।
অবশেষে কা’বের উপর হুয়াই এর যাদু ক্রিয়াশীল হলো। বানু কুরাইযা সন্ধি ভঙ্গ করল। এতে রাসুলূল্লাহ ও সাহাবীগণ অত্যন্ত দু:খিত হলেন এবং এটা তাদের কাছে খুবই কঠিন ঠেকল। আল্লাহ তা’য়ালা স্বীয় বান্দাদের সাহায্য করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাহাবীগন সমভিব্যহারে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। সাহাবীগন অস্ত্র শস্ত্র খুলে ফেললেন এবং রাসুলুল্লাহও অস্ত্র শস্ত্র খুলে ফেলে হযরত উম্মে সালমা এর গৃহে ধুলো ধুসরিত অবস্থায় হাজির হলেন এবং পাক সাফ হওয়ার জন্য গোসল করতে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল আবির্ভূত হন। তার মস্তকোপরি রেশমি পাগড়ি ছিল। তিনি খচ্চরের উপর উপবিষ্ট ছিলেন। ওর পিঠে রেশমি গদি ছিল। তিনি বলতে লাগলেন: “ হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি কি অস্ত্র শস্ত্র খুলে ফেলেছেন? তিনি উত্তরে বললেন: হ্যা । হযরত জিব্রাইল বললেন: ফেরেস্তারা কিন্তু এখনো অস্ত্র শস্ত্র হতে পৃথক হয়নি। আমি কাফিরদের পশ্চদ্ধাবন হতে এই মাত্র ফিরে এলাম। জেনে রাখুন। আল্লাহর নির্দেশ, বানু কুরাইযার দিকে চলুন। তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দান করুন। আমার প্রতিও মহান আল্লাহর এ নির্দেশ রয়েছে যে আমি যেন তাদেরকে প্রকম্পিত করি। রাসুলুল্লাহ তৎক্ষনাৎ উঠে দাড়িয়ে যান। নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ করে সাহাবীদেরকেও প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদেরকে বললেন: তোমরা সবাই বানু কুরাইযার ওখানেই আসরের নামাজ আদায় করবে। যুহরের নামাজের পর এ হুকুম দেয়া হলো। বানু কুরাইযার দুর্গ মদীনা হতে কয়েক মাইল দুরে অবস্থিত ছিল। পথেই নামাজের সময় হয়ে গেল। তাদের কেউ কেউ নামায আদয় করে নিলেন। তারা বললেন: রাসুলুল্লাহ এ কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আবার কেউ কেউ বললেন: আমরা সেখানে না পৌছে নামায পড়ব না। রাসুলুল্লাহ এর এ খবর জানতে পেরে দুদলের কাউকেই তিনি কিছু বললেন না। তিনি ইবনে উম্মে মাখতুম কে মদিনার খলিফা নিযুক্ত করলেন। সেনাবাহিনীর পতাকা হযরত আলী এর হাতে প্রদান করলেন। তিনি নিজেও সৈন্যদের পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন। সেখানে গিয়েই তিনি তাদের দুর্গ অবরোধ করে ফেললেন। পঁচিশ দিন পর্যন্ত অবরোধ স্থায়ী হলো। যখন ইহুদীদের দম নাকে এসে গেল তখন তাদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠল তখন তারা হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ কে নিজেদের সালিশ বা মীমাংসাকারী নির্ধারন করল। কারন তিনি আউস গোত্রের সরদার ছিলেন। বানু কুরাইযা (ইহুদী) ও আউস গোত্রের (মদিনার পৌত্তলিক) মধ্যে যুগ যুগ ধরে বন্ধুত্ব ও মিত্রতা চলে আসছিল। তারা একে অপরের সাহায্য করত।

হযরত সা’দ কে গাধার উপর সওয়ার করিয়ে নিয়ে আসা হলো। আউস গোত্রের সমস্ত লোক তাকে জড়িয়ে ধরে বলল: দেখুন, বানু কুরাইযা গোত্র আপনারই লোক। তারা আপনার উপর ভরসা করেছে। তারা আপনার কওমের সুখ-দু:খের সঙ্গী। সুতরাং আপনি তাদের উপর দয়া করুন এবং তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করুন। হযরত সা’দ নীরব ছিলেন। তাদের কথার কোন জবাব তিনি দিচ্ছিলেন না। তারা তাকে উত্তর দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল এবং তার পিছন ছাড়লো না। অবশেষে তিনি বললেন: ঐ সময় এসে গেছে হযরত সা’দ এটা প্রমান করতে চান যে, আল্লার পথে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারের তিনি কোন পরওয়া করবেন না। – তার এ কথা শোনা মাত্রই ঐ লোকগুলো হতাশ হয়ে পড়ল যে, বানু কুরাইযা গোত্রের কোন রেহাই নেই। যখন হযরত সা’দ এর সওয়ারী রাসুলুল্লাহ এর তাবুর নিকট আসল তখন রাসুলুল্লাহ বললেন: তোমরা তোমাদের সরদারের অভ্যর্থনার জন্যে দাড়িয়ে যাও। তখন মুসলমানরা সবাই দাড়িয়ে গেলেন। অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাঁকে সওয়ারী হতে নামানো হল। এরূপ করার কারন ছিল এই যে, ঐ সময় তিনি ফয়সালাকারীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ঐ সময় তার ফয়সালাই চুড়ান্ত বলে গৃহীত হবে। তিনি উপবেশন করা মাত্রই রাসুলুল্লাহ তাকে বললেন: বানু কুরাইযা গোত্র তোমার ফয়সালা মেনে নিতে সম্মত হয়েছে এবং দুর্গ আমাদের হাতে সমর্পন করেছে। সুতরাং তুমি এখন তাদের ব্যপারে ফয়সালা দিয়ে দাও। হযরত সা’দ বললেন: তাদের ব্যপারে আমি যা ফয়সালা করব তাই কি পূর্ণ করা হবে ? উত্তরে রাসুলুল্লাহ বললেন: অবশ্যই। তিনি পূনরায় প্রশ্ন করলেন: এই তাবু বাসীদের জন্যেও কি আমার ফয়সালা মেনে নেয়া জরুরী হবে ? জবাবে রাসুলুল্লাহ বললেন: হ্যা, অবশ্যই। আবার তিনি প্রশ্ন করলেন: এই দিকের লোকদের জন্যেও কি ? ঐ সময় তিনি ঐদিকে ইঙ্গিত করেছিলেন যেই দিকে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ এর ইজ্জত ও বুযর্গীয় খাতিরে তিনি তাঁর দিকে তাকালেন না। রাসুলুল্লাহ জবাবে বললেন: হ্যাঁ, এই দিকের লোকদের জন্যেও এটা মেনে নেয়া জরুরী হবে। তখন সা’দ বললেন: “তাহলে এখন আমার ফয়সালা শুনুন! বানু কুরাইযার মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মত যত লোক আছে তাদের সবাইকেই হত্যা করে দেয়া হবে। তাদের শিশু সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন- সম্পদ মুসলমানদের অধিকারভূক্ত হবে”। তার এই ফয়সালা শুনে রাসুলুল্লাহ বললেন: হে সা’দ! তুমি এ ব্যপারে ঐ ফয়সালাই করেছো যা আল্লাহ তা’য়ালা সপ্তম আকশের উপর ফয়সালা করেছেন। অন্য একটি রিওয়াতে আছে যে, রাসুলুল্লাহ বললেন: হে সা’দ ! প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহর যে ফয়সালা সেই ফয়সালাই তুমি শুনিয়েছো। অত:পর রাসুলুল্লাহ এর নির্দেশ ক্রমে গর্ত খনন করা হয় এবং বানু কুরাইযা গোত্রের লোকদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় হত্যা করে তাতে নিক্ষেপ করা হয়। তাদের সংখ্যা ছিল সাতশ বা আটশ। তাদের নারীদেরকে ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে এবং তাদের সমস্ত মালধন হস্তগত করা হয়। (ইবনে কাথিরের তাফসির, ১৫শ খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৭৬৯-৬৭১ বাংলা অনুবাদ: ড: মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন অধ্যাপক ও সভাপতি আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)।

যারা সম্পূর্ণটা পড়লেন তারা খেয়াল করে থাকবেন তাফসির পড়ে ইহুদী সর্দার কা’বের ষড়যন্ত্র বা বিশ্বাসঘাতকতার কোন প্রমাণই পাওয়া গেলো না। কা’ব যে ষড়যন্ত্র করেছে তার ঐতিহাসিক প্রমাণ কোথায়? এই ফাঁকিটা ঢাকতে “অবশেষে কা’বের উপর হুয়াই এর যাদু ক্রিয়াশীল হলো” এই হাস্যকর অভিযোগ চাপাতে হলো! পৃথিবীর কোন বিচার সালিশে যাদু তুকতাককে কি প্রমাণ হিসেবে দেখানো যাবে? কা’ব ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তার প্রমাণ হুয়াই নামের অপর ইহুদী তাকে যাদু করে চুক্তি ভঙ্গ করতে প্ররোচিত করেছিলো- এটা কি মানা যায়? ইহুদীরা যদি চুক্তি ভঙ্গ করতই তাহলে তার প্রমাণ থেকে যেতো- অহেতুক যাদুর অজুহাত দিতে হতো না। মদিনাতে মুহাম্মদের তখন যে ক্ষমতা তাতে ছোট্ট ইহুদী গোষ্ঠির ষড়যন্ত্র করার সাহসই হওয়ার কথা নয়। বরং ইহুদীদের কাছে নিজের নবীত্বকে হুমকি মনে করেই তাদের উপর মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছিলো তার প্রমাণ এইসব যাদুফাদুর অভিযোগ তোলা। তাছাড়া দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা কথা বলার বা অভিযোগ দেয়াকে মুহাম্মদ ওপেন অনুমতি দিয়েছিলেন। বুখারীতে আছে- জাবির বিন আব্দুল্যা বর্নিত, আল্লাহর নবী বললেন, “ আল্লাহ ও তার নবীকে অবমাননাকারী কা’ব বিন আল আশরাফ কে খুন করার জন্য কে ইচ্ছুক?” এ কথায় মোহাম্মদ বিন মাসলামা উঠে দাড়িয়ে বলল, “ হে আল্লাহর নবী, আপনি কি চান আমি তাকে খুন করি ?” মোহাম্মদের উত্তর, “হ্যা”। মোহাম্মদ বিন মাসলামা তখন বলল, “তাহলে আমাকে যে কেন একটা মিথ্যা অজুহাত বলার অনুমতি দিন”। নবী বললেন,  “তুমি সেটা বলতে পার” (সহী বুখারী, বই-৫৯, হাদিস-৩৬৯)।

এই হাদিসগুলো থেকেই পরবর্তীকালে ‘তাকিয়া’ বা দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা বলা জায়েজ ধারণা মুসলমানদের মধ্যে গড়ে উঠে। আলেমরা তাকিয়াকে কেবল দ্বিনের স্বার্থে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, ব্যক্তি স্বার্থে নয়। এই যেমন নাসিরনগর, রামু, ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু কোন ব্যক্তির নামে ভুয়া ফেইসবুক আইডি বানিয়ে বা হ্যাক করে ইসলামের নবীকে গালাগালি করে পোস্ট দিয়ে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা চালানো হয়। মিলিয়ে নিতে পারেন সপ্তম শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে বর্তমানকালের ঘটনাগুলো। নিজেরা চুক্তিভঙ্গ করে উল্টো অন্যকে চুক্তি ভঙ্গের জন্য দায়ী করা ইসলামের জন্মগত স্বভাব। কুরাইশদের সঙ্গে মুহাম্মদ চুক্তি করেছিলো মক্কা থেকে যদি কেউ মদিনাতে আসে তাহলে মুহাম্মদ তাদেরকে কুরাইশদের হাতে ফিরিয়ে দিবে। এই চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলো মুহাম্মদ। বুখারীতে আছে,

যখন নবী মদিনাতে ফিরলেন তখন কুরাইশদের একজন আবু বশির যে ইসলাম গ্রহন করে পালিয়ে মদিনায় চলে আসল। কুরাইশরা তাকে ফেরত নেয়ার জন্য দুজন লোককে মদিনায় পাঠাল ও তারা মোহাম্মদকে বলল- যে প্রতিজ্ঞা তুমি করেছ তা তুমি রক্ষা কর। নবী তখব আবু বশিরকে তাদের হাতে তুলে দিলেন। তারা তাকে নগরীর বাইরে নিয়ে গেল ও দুল-হুলাইফা নামক একটা যায়গায় বিশ্রাম করতে লাগল ও খেজুর খেতে লাগল। আবু বশির একজনকে বলল, আল্লাহর কসম, তোমার তরবারি টা ভীষণ সুন্দর। এতে লোকটি তার তরবারি খুলে ফেলল ও বলল, আল্লাহর কসম, এটা আসলেই ভীষণ সুন্দর ও আমি এটা বহুবার ব্যবহার করেছি। আবু বশির বলল- আমাকে একটু ওটা দেখতে দেবে ? যখন সে ওটা তার হাতে দিল বশির সাথে সাথে তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করল ও সে মারা গেল, অন্য সাথী দৌড়াতে দৌড়াতে মদিনায় গিয়ে মসজিদে আশ্রয় নিল।মোহাম্মদ তাকে দেখলেন ও বললেন- এ লোকটি ভয় পেয়েছে।যখন সে নবীর কাছে গেল তখন বলল- আমার সাথীকে খুন করা হয়েছে ও আমিও খুন হয়ে যেতে পারতাম। এসময়ে বশির এসে বলল- হে নবী আপনি আমাকে তাদের কাছে ফেরত দিয়ে আপনার প্রতিজ্ঞা পূরন করেছেন কিন্তু আল্লাহ আমাকে মুক্তি দিয়েছে। এটা শুনে নবী বলে উঠলেন- এখন তো যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠবে। এটা শুনে বশির বুঝতে পারল মোহাম্মদ তাকে আবার মক্কাতে ফেরত পাঠাতে চান, তাই সে সাগরপারের দিকে চলে গেল।আবু জান্দাল কুরাইশদের হাত থেকে পালিয়ে গিয়ে বশিরের সাথে যোগ দেয়।এভাবে বেশ কিছু লোক মক্কা থেকে পালিয়ে এসে বশিরের দলে যোগ দেয়।এর পর তারা কুরাইশদের সিরিয়ার দিকে বা দিক থেকে আসা বানিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমন করে তাদেরকে হত্যা করে তাদের মালামাল লুটপাট করে নিতে থাকে। এটা দেখে মক্কাবাসীরা প্রমাদ গুনে তারা একজন দুত মোহাম্মদের কাছে পাঠায় ও প্রস্তাব দেয় যে এর পর যদি কেউ মক্কা থেকে মদিনায় মোহাম্মদের কাছে আসে তাকে আর ফেরত দিতে হবে না এবং তিনি যেন বশির ও তার দলবলকে লুট তরাজ থেকে বিরত রাখেন। বুখারী, ভলুম-৩, বই-৫০, হাদিস-৮৯১

দেখা গেলো কুরাইশরা বাপ বাপ বলে নিজেরাই চুক্তিতে যা ছিলো সেটা ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছে। এভাবেই সন্ত্রাসের মাধ্যমে শিশু ইসলাম একটু একটু করে বড় হয়েছে আর তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেছে। এই সরল স্বীকারোক্তি ফুটে উঠে সাহাবী আল মুগিরার বক্তব্যে। পারস্য বাহিনীর কাছে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে সে বলেছিলো, যুবাইর বিন হাইয়া বর্ণিত-ওমর পৌত্তলিকদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বড় দেশগুলোতে মুসলিম বাহিনী পাঠান। যখন আমরা শত্রুর দেশে পৌছলাম, পারস্য সাম্র্রাজ্যের একজন সেনাধ্যক্ষের নেতৃত্বে চল্লিশ হাজার সৈন্য তাদের মোকাবেলায় অগ্রসর হলো, তার একজন ভাষার অনুবাদক উঠে দাড়াল ও বলল- কেউ একজন আমার সাথে কথা বলুক। আল মুগিরা উত্তর দিল- তোমার যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস কর। সে জিজ্ঞেস করল- তোমরা কারা? মুগিরা উত্তর দিল- আমরা আরব দেশের লোকজন, আমরা একটা খুব কঠিন, দুর্বিষহ ও দুর্যোগময় জীবন যাপন করতাম, শুকনা খেজুর খেয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারন করতাম, উট ও ছাগলের লোমের তৈরী কাপড় দিয়ে বস্ত্র বানাতাম, ও গাছ ও পাথরের পুজা করতাম। এরকম অবস্থার মধ্যে যখন আমরা ছিলাম, আসমান ও জমীনের প্রভু আমাদের মধ্যে একজন নবী পাঠালেন যার পিতা মাতাকে আমরা চিনতাম। আমাদের নবী আমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন তোমাদের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর উপাসনা করবে অথবা জিজিয়া কর প্রদান করবে। আমাদের নবী অবগত করেছেন যে, আমাদের প্রভু বলেছেন- যেই যুদ্ধে আমাদের মধ্যে মারা যাবে সে বেহেস্তে প্রবেশ করবে ও জাকজমক পূর্ণ জীবন যাপন করবে যা সে কখনো দেখেনি, আর যে বেঁচে থাকবে সে তোমাদের প্রভু হবে। বুখারি, ভলুম-৪, বই-৫৩, হাদিস-৩৮৬

এই হচ্ছে ইসলামের উদ্দেশ্য। ইসলাম কেবল ব্যক্তি ঈশ্বর আরাধনার কোন ধর্ম না। এটি একটি সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদ যা পৃথিবীতে যতদিন থাকবে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকবে। নানা রকম অভিযোগ তুলে হঠাৎ হঠাৎ নিজের অস্তিত্বকে জানান দিবে…।

Written by : সুষুপ্ত পাঠক

#copyrightfree

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted