ইসলামে একদম পরিস্কার করে তিনটি খেলাকে জায়েজ করে বাকী সব খেলাকে নিষিদ্ধ

লিখেছেন : সুষুপ্ত পাঠক Susupto Pathok

ইসলাম যে আজকের যুগে একদমই অচল একটি ধর্ম তার একটি প্রমাণ হচ্ছে ইসলামে সব রকম পেশাদার খেলাধুলাই হারাম! এখানে কোন রকম লুকোচুরি নেই। যদিও সৌদি আরব, ইরান, কাতারের মত ইসলামিক দেশগুলি ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলা খেলে থাকে। কিন্তু কোন দেশ বা কোন বড় মুসলমান খেলাধুলা করল বা না করল তাতে কিছু যায় আসে না। ইসলামের বিধানে কি বলা আছে সেটাই বিবেচ্য। ইসলাম ধর্মটি কেমন সেটাই দেথার বিষয়।

ইসলামে একদম পরিস্কার করে তিনটি খেলাকে জায়েজ করে বাকী সব খেলাকে নিষিদ্ধ করেছে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ব্যতীত (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ (তিরমিজি: ৫৬৪)। ইসলামে এই তিনটি খেলার অনুমতি বা উত্সাহ দেয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে এইগুলোর চর্চা থাকলে জিহাদে কাজে লাগে। সে যুগে ঘোড়া বা উটে চড়ে তীর নিক্ষেপ করে জিহাদ করা হতো। এ জন্য অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ, ২য় খ. পৃ ৬০)। ঘোড়া প্রতিযোগিতা করা হতো ঘোড়ায় পারদর্শী হওয়ার জন্য। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুইটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল।’ (বুখারি: ৩৬৫৭)

ইসলামে খেলাধুলাকে হারাম করার একমাত্র কারণ খেলাধুলায় একাগ্রতা থাকলে জিহাদে কোন আগ্রহ থাকবে না। সবাই জানে তরুণ সমাজ যদি খেলাধুলায় নিয়ে মত্ত থাকে তাহলে তাদের বিপথে যাবার সম্ভাবনা কম। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই প্রতিটি সমাজে খেলাধুলার জন্য পর্যান্ত মাঠ ও সুযোগের কথা বলেন। ইসলামের নিজেরও ভয় ছিলো মানুষ গান বাজনা কবিতা খেলাধুলার চর্চা করলে কাফের মেরে খিলাফত কায়েম করতে জিহাদের প্রতি আগ্রহী হবে না। তাই কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

আরবি আয়াত:

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

বাংলা অর্থ:

‘মানুষের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি।’(সূরা: লোকমানের, আয়াত: ৬) আলোচ্য আয়াতটি খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য। (রুহুল মাআনি: ৫৬৪৪)

বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (র.)বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, পবিত্র কোরআনের এ আয়াতে ঐ সকল কথা, কাজ, বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার এবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধুলা কিংবা ক্রিড়া-কৌতুক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এই মাসালা অনুযায়ী ক্রিকেট ফুটবল সমস্ত খেলাতেই নামাজ কাযা হয়ে যায়। খেলাধুলার মাধ্যমে কাফেরদের মধ্যেও ভালো সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। যেমন আইপিএল ক্রিকেট বা ইউরোপের ফুটবল লীগে খেলার কারণে মুসলিম খেলায়াড়দের সঙ্গে অমুসলিম দেশ ও খেলোয়াড়দের চমত্কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এরকম সম্পর্ক ইসলাম কখনো চায় না। এরকম সম্পর্ক জিহাদের জন্য অন্তরায়।

ইসলাম একদম নাম উল্লেখ করে দাবা খেলাসহ ঘরে বসে বসে খেলা যেমন পাশা (দাবা) হারাম করেছে। উদ্দেশ্য এসব খেলায় ঘরে বসে খেলে মুমিন জিহাদের কথা ভুলে যাবে। জীবনের মায়ায় মগ্ন হবে। হাদিসে আছে-

مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ شِيْرٍ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ
(مسلم ৪/ ১৭৭০).
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলল সে যেন শুকরের রক্ত-মাংসে নিজের হাত রঞ্জিত করল”
(মুসলিম ৪/১৭৭০)।

আবূ-মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হ'তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَ رَسُوْلَهُ
(أحمد ৪/৩৯৪, صحيح الجامع ৬৫০৫).
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানকে অমান্য করল”*_
(আহমাদ ৪/৩৯৪, ছহীহুল জামে ৬৫০৫)।

এই হাদিস দ্বারা দাবা ও তাশ, পাশা, লুডু, ক্যারাম, স্নুকারসহ ঘরোয়া সমস্ত খেলাই শরী‘আতের আদেশে হারাম হয়ে গেছে।

তো, এই হচ্ছে ইসলাম! এবার আপনিই বলুন, আজকের যুগে কি এই ধর্মকে মান্য করা কারোর পক্ষে সম্ভব নাকি ক্ষতিকারক?

copyright© 2022 ‘Susupto Pathok সুষুপ্ত পাঠক’ all rights reserved

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted