অথচ তারাই মুসলিম হননি!

অথচ তারাই মুসলিম হননি!

সিলেটের জাফলং এ আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক স্নেহভাজন বন্ধু বললেন, "পৃথিবীর বহু বিখ্যাত ব্যক্তি মুসলিম হয়েছেন এবং লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। যেমন- ড. মরিস বুকাইলি।" বললাম, '‘একটি গবেষণায় দেখলাম সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্তরের হার খুবই কম। এবং যত লোক অন্য ধর্ম থেকে মুসলিম হচ্ছেন কাছাকাছি লোক আবার ইসলাম ছেড়েও যাচ্ছেন। আর মরিস বুকাইলিতো ডাক্তার, ওনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সে যে বই লিখেছে তাতে মনে হওয়ার কথা যে তিনি মুসলিম হয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে হননি।'’ বন্ধুটি ক্ষেপে গেলেন। সে নিশ্চিত, যদি সতি না হয় তবে জিভ দিয়ে আমার জুতো পরিষ্কার করে দিবেন। শুনে খুবই কষ্ট পেলাম, এমন বাজে ধরনের এক বাজি/চ্যালেঞ্জে। আমি প্রস্তাব দিলাম, হেরে গেলে এক কাপ চা-ই যথেষ্ট। মোবাইলে সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়াতে সবাই দেখলাম, তিনি মুসলমান হননি। সে মানবে না। তার কাছে বই রয়েছে। কদিন পরে ফোনে জানালেন, তারই ভুল। মরিস মুসলিম হননি। 




মরিসের মুসলিম না হওয়ার বিষয়টি আমার কাছেও বিস্ময়কর। তিনি তার গ্রন্থ ‘বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান’ এ প্রমাণ করতে চাইলেন, বাইবেল ভুল, বিজ্ঞানও ভুল হচ্ছে শুধুই কোরআন বিজ্ঞানভিত্তিক, অলৌকিক, সত্য ও মহাবিস্ময়কর! এটিই একমাত্র স্রষ্টা প্রদত্ত গ্রন্থ। বইটি লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে, হচ্ছে। মরিস সৌদী রাজপরিবারের ডাক্তার ছিলেন। এই বই তাকে রাজপরিবারেরর কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করেছে এবং তার অর্থ উপার্জন বহুগুণে বেড়েছে সেটা বই থেকে এবং চিকিৎসা থেকে। এই বই একজন মুর্খ সৌদী রাজপুত্রের কাছে যেমন মহামূল্যবান, তেমনই হাস্যকর একজন বিজ্ঞানমনষ্ক যুক্তিবাদি মানুষের কাছে। মরিসের বই হাস্যকর কুযুক্তিনির্ভর এবং তিনি গবেষণা ছাড়াই গল্পের মতো লিখেছেন। তিনি আরো বই লিখেছেন ইসলাম নিয়ে। শুধুই অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি এই বই লিখলেন? অথচ নিজে ইসলাম গ্রহণ করলেন না!!

এমনটি খাটে আমাদের বাঙালি ভাই গিরিশচন্দ্র সেন এর বেলাতেও। তিনিই প্রথম কোরআন বাংলায় অনুবাদ করেন এবং শীর্ষস্থানীয় ইসলামি চিন্তবিদদের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ করেন। শুধু কোরআন নয় তিনি বহু হাদিসগ্রন্থও অনুবাদ করেন এবং ইসলাম নিয়ে অনেক লেখালেখি করেন। কিন্তু তিনিও মুসলিম হননি। শুধুই পেশা হিসাবেই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। 

গ্যারি মিলার কানাডার খ্যাতিমান সাংবাদিক। তাঁর বই ‘আল কুরআনঃ এক মহাবিস্ময়’। তিনি বিভিন্ন দিক আলোচনা করে বলেছেন, কোরআন বিস্ময়কর এবং অলৌকিক। তিনি কোরআনকে আসমানি বাণী বলেই দাবী করেছেন যা পৃথিবীতে একমাত্র গ্রন্থ। রচনাটিতেও তিনি দাবি করেছেন, তিনি সৌদী রাজপরিবারের অনুরোধেই বইটি লিখেছেন এবং তিনিও বিজ্ঞানভিত্তিক কোন যুক্তি দেননি। তিনি সাংবাদিক হলেও আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান, বিবর্তনবাদ, পদার্থবিদ্যা, নভোবিজ্ঞানসম্পর্কে তার ধারণার বিস্তর অভাব রয়েছে। তিনি দাবী করেছেন, তিনি বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণ করেছেন। তিনিও মুসলমান হননি অথচ কেন এমন একটি রচনা লিখলেন তা ভেবে ভাই না। শুধুই কি অর্থ আর সৌদি রাজপরিবারের অনুরোধ রক্ষার জন্য? 

ড. কীথ এল মুর লিখেছেন ‘আল কুরআনে ভ্রুণতত্ত্ব’ নামের একটি ছোট গ্রন্থ। এটিও সৌদি রাজপরিবারের অনুরোধে। কোরআণে ভ্রুণ সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে তিনি মিলিয়েছেন, আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে। তিনি লিখেছেন, অনেকগুলো আয়াতই এতোকাল স্পষ্ট বুঝা যায়নি। সাম্প্রতিক ভ্রুণ নিয়ে উচ্চতর গবেষণা আয়াতগুলোকে স্পষ্ট করেছে। ড. কীথ কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগে ছিলেন। এটা একটি নিবন্ধ যাতে তুলনা করেছেন কোরআনে কিভাবে মানুষের জন্মরহস্য লেখা হয়েছে এবং বর্তমানে বিজ্ঞানের গবেষণায় তার প্রমাণ। তিনি দাবী করেছেন, ‘কোরআনে আছে- 'আমি তোমাদের তৈরি করেছি মাতৃগর্ভে কয়েক ধাপে, অন্ধকার তিনটি পর্দার আড়ালে। তারপর তাকে বিন্দুরূপে এক সুরক্ষিত স্থানে স্থাপন করি। তারপর আমি সেই বিন্দুকে পরিণত করি জোঁকের মত আঁকড়ে থাকা কাঠামোয়। তারপর সেই চর্বিত গোস্ত থেকে তৈরি করি অস্থি, পরে অস্থিকে ঢেকে দিই গোস্ত দিয়ে। তারপর তাকে গড়ে তুলি এক নতুন সৃষ্টিরূপে।’ এগুলো কয়েকটি সুরা থেকে, তার মতো করে, তিনি একত্রিত করেছেন এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়েছেন। ড. কীথও সৌদী এক রাজপুত্রের অনুরোধে এবং তার পাঠানো ভ্রুণসম্পর্কিত আয়াতগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে নিবন্ধটি লিখেছেন এবং কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণ করেছেন। বিস্ময়কর যে ড. কীথ সৌদি রাজপরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখলেও নিজে মুসলমান হননি। কেন হননি? তার লেখা কি শুধুই সৌদী রাজপরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য এবং লেখাটি মুসলিম বিশ্বে আলোচিত হবে সে জন্য? 

আমার ভাবনা হলো আলোচিত চারজনকে নিয়ে। তারা কেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন না? শুধুইকি বাণিজ্য, প্রচার ইত্যাদির কারণেই তারা কথিত গবেষণা করেছেন এবং লিখেছেন। তাদের গবেষণা বিজ্ঞানভিত্তিক হয়নি৷ সেটার স্বীকৃতিরও তাদের দরকার ছিল না৷ আরিফ আজাদের মতো হাস্যকর কুযুক্তি দিয়ে কম মেধার মানুষকে বুঁদ করে রাখাই তাদের উদ্দেশ্য৷ মরিস, গ্যারি, কীথ সৌদির রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন৷ রচনাগুলো মুসলিম বিশ্বে তাদের সাময়িকভাবে নন্দিত করেছে৷ আরিফ আজাদও হাস্যকর কুযুক্তি দিয়ে অসচেতন মানুষের পকেট কেটেছেন এবং সাময়িক খ্যাতি পেয়েছেন৷ মুসলিমদের পিছিয়ে রাখতে এসব বই ভূমিকা রেখেছে৷ তারা অর্থের জন্য জেনে ও বুঝেই মুসলিমদের সাথে প্রতারণা করছেন৷
ইউরোপ আমেরিকাসহ  সারা বিশ্বে নাকি দলে দলে মানুষ ইস*লাম গ্রহণ করতেছে  !

কিন্তু বাস্তবতা কি বলে ?

মুসল*মানরা,বিশেষ করে, বাংলাদেশে বসবাসকারী মুস^লমানরা দাবী করে ইউরোপ আমেরিকায় নাকি অসংখ্য মানুষ মু*সলিম হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী মুসল*মানদের  এমন দাবী করতে দেখি না ! এখানে কতজন ইসলাম গ্রহণ বা ত্যাগ করছে তা তো নিজেই দেখছি । ইউরোপ আমেরিকায়  মু*সলিম বেড়ে যাবার কারণ তাদের অতি উচ্চ জন্মহার । ইউরোপ আমেরিকায় আমার পরিচিত মু*সলিমদের পরিবার প্রতি বাচ্চার সংখ্যা ২-৪ টা আর অমু*সলিমদের বাচ্চার সংখ্যা ১-২ টা । 

Pew research কি বলে দেখুন-

https://www.pewresearch.org/fact-tank/2017/08/09/muslims-and-islam-key-findings-in-the-u-s-and-around-the-world/

যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ বুঝে কো*রান/হাদি*স পড়ে ইস*লামের প্রকৃত রূপ জেনে ইসলাম ত্যাগ করছে, সেখানে ইউরোপ আমেরিকায় অমুসলিমরা ইস*লাম গ্রহণ করছে এমন দাবী হাস্যকর ।

নীচের লিংকে দেখুন আরব অঞ্চলের মানুষ কিভাবে ইসলাম ত্যাগ করছে -

https://amp.dw.com/en/middle-east-are-people-losing-their-religion/a-56442163

https://www.bbc.com/news/world-middle-east-48703377.amp

পাদটীকা :
জনসংখ্যা বাড়িয়ে দেশ/পৃথিবী দখল করার ইচ্ছা বর্ব*রতা ছাড়া আর কিছু নয় । কবি নজরুলের কথা এক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য : 

‘প*শুর মত সংখ্যাগড়িষ্ঠ হয়ে লাভ কি, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু না-ই থাকে ।’

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted