শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি
শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ মহারাজের অন্তর্ধানের পরবর্তীতে শঙ্কর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ এবং আচার্য পদে অভিষিক্ত হন শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল শ্রীতপন কান্তি ভট্টাচার্য। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত মেলঘরে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর, বাংলা ১১ অগ্রহায়ণ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শ্রীহরিপদ ভট্টাচার্য এবং মায়ের নাম শ্রীমতি শান্তি ভট্টাচার্য। বাল্যকালে শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি স্বামী জগদানন্দ পুরীর ভাবাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন। পড়ালেখার অবসরে তিনি মেলঘর জগদানন্দ সেবাশ্রমে শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও বিবিধ শাস্ত্রগ্রন্থাদি পাঠ করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে তীব্র বৈরাগ্যের উদয় হতে থাকে। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের পবিত্র শিবরাত্রি তিথিতে সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে তিনি সীতাকুণ্ডস্থ শঙ্কর মঠের তৎকালীন অধ্যক্ষ যোগীপুরুষ শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরির আশ্রয় গ্রহণ করেন।
২০০৮ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে বারাসাত মঠে তৈরি হয় অপূর্ব নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে আন্তর্জাতিক ওঙ্কার মন্দির।২০১০ খ্রিস্টাব্দে সীতাকুণ্ড শঙ্কর মঠে শ্রীমদ্ভগবদগীতা যজ্ঞসহ বিবিধ প্রকারের যজ্ঞের জন্য একটি যজ্ঞশালা নির্মাণ করা হয়। সে যজ্ঞশালা নির্মাণে অর্থায়ন করে সন্ধ্যারাণী সাহা নামা ফেনীর এক ভক্ত।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে বনায়নের উপর প্রধানমন্ত্রী থেকে পুরষ্কার লাভ করে শঙ্কর মঠ। এ পুরষ্কারটি বর্তমান আচার্য এবং অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ মহারাজ মঠের পক্ষে গ্রহণ করেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর মঠে তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি আধুনিক যাত্রী নিবাস তৈরি করা হয়। এতে অর্থায়ন করে চট্টগ্রামের খ্যাতিমান দাতা শ্রীঅদুলকান্তি চৌধুরী।
২০১২ খ্রিস্টাব্দে ভগবান শিবের পবিত্র ভূমি হরিদ্বারে শঙ্কর মঠের শাখা সংস্থাপিত হয়।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর মঠে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হিসাবে গ্রহণ করা হয়, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কাশীর বিশ্বনাথের নামে শ্রীবিশ্বনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্যে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর পূর্বাহ্ণে শ্রীবিশ্বনাথ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। সে দিনটি ছিল তাঁর জন্মদিন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন থেকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলেছে মন্দিরের কাজ।ভয়াবহ করোনাকালের দুইবছরও মন্দির নির্মাণের কাজ থেমে থাকেনি। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ অত্যন্ত পবিত্র ক্ষণে প্রাচীন এবং আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এ অপূর্ব মন্দিরটির দ্বারোদঘাটন হবে। মন্দিরটি উচ্চতা ভূমি থেকে প্রায় ৯০ ফিট। আয়তনে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট। মন্দিরে চারটি ফ্লোর। দুটি দৃশ্যমান এবং দুটি বেইসমেন্টে। প্রথম বেইসমেন্টে ১৮ টি কক্ষ। দ্বিতীয় বেইসমেন্টে ওঙ্কার ধ্যানমন্দির। তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষ। চতুর্থ তলায় শ্রীবিশ্বনাথ শিবমন্দির। মন্দিরের রত্ন বা চূড়া স্বস্তিকা, ধর্মচক্র এবং বৃহত্তম চূড়ায় ওঙ্কারের সাথে শিবের ত্রিশুল বিরাজিত। মন্দিরের চূড়ার গায়ে শিবের প্রতীক ত্রিপুণ্ড খোদিত। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে পূজার বেদীতে কাশীর বিশ্বনাথের নামে নর্মদেশ্বর বাণলিঙ্গ স্থাপিত। নর্মদেশ্বর বিশ্বনাথের সম্মুখে কৃষ্ণবর্ণের পাথরে শ্বেতকায় ওঙ্কার মূর্তি বৃহৎ ওঙ্কারমূর্তি বিরাজিত। বৃহৎ ওঙ্কারমূর্তিটি পদ্মের উপরে স্থাপিত। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের নামে সীতাকুণ্ড শঙ্কর মঠে বিশ্বনাথ মন্দির স্থাপনের মাধ্যমেই স্বপ্নপূরণ হয় স্বামী ব্রহ্মানন্দ থেকে জ্যোতিশ্বরানন্দ গিরি মহারাজের অসমাপ্ত স্বপ্নযাত্রা।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................