মোল্লা স্যারের সাথে বায়বীয় ফোনালাপ - ২
সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মোল্লা স্যারকে ফোন করলাম। উদ্দেশ্য, নোরা ফাতেহির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলাপচারিতা। মোল্লা স্যার আজ নতুন কিছু জ্ঞানদান করে আমাকে কৃতার্থ করলেন। আপনাদেরকেও কৃতার্থ করার জন্য জ্ঞানগুলো নিম্নে তুলে ধরছি -
আমি : সুপ্রভাত মোল্লা স্যার। কেমন আছেন? শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো আছে তো?
মোল্লা স্যার : সালাম দিলেন না যে! আপনি জানেন না যে, মুসলমানরা সালাম দেয়? সালাম হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সুন্দর সম্ভাষণ। পশ্চিমারা সকল সুন্দর সম্ভাষণ শিখেছে মুসলমানদের কাছ থেকেই।
আমি : মোল্লা স্যার, আমি মুসলিম নই। আমি নাস্তিক। আমি আরো কিছু বলতে যাব, কিন্তু মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মোল্লা স্যার বললেন : আপনাদের নাস্তিকদের এটাই হচ্ছে সমস্যা। সালাম কি কেবল ইসলামের সম্পদ? সালাম সর্বজনীন, বিশ্বজনীন।
আমি : কিন্তু মোল্লা স্যার, সালাম তো অমুসলিমকে দেয়া জায়েজ নেই!
মোল্লা স্যার : রাখেন আপনার ফতোয়াবাজি! দুই টাকার মোল্লারা কি বোঝে? আমি মুফতি ইব্রাহিম হুজুরের কাছ থেকেই শুনেছি যে, স্বয়ং আহমদ ছফাও সালাম দিতেন!
আমি দেখলাম টপিকের বাইরে প্যাচাল পাড়লে মূল প্রসঙ্গে কথা বলা হবে না, তাই বললাম : মোল্লা স্যার, বাংলাদেশের মুসলমানরা নাকি আফসোস করছে। নোরা ফাতেহির কাছ থেকে এত কম শরীর তারা প্রত্যাশা করেনি। মন্দার বাজারে ১৫ হাজার টাকা তো কম না!
মোল্লা স্যার : না, এতে তাদের লস হয়নি, বরং ভালোই হয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের ঈমান যত কম নষ্ট হবে ততই তাদের মঙ্গল।
আমি : কিন্তু মোল্লা স্যার, তৌহিদী জনতার এটা কেমন দ্বিচারিতা বলুন? তারা একদিকে ভারতীয় অভিনেত্রীর শরীর দেখতে চায়, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশে শরিয়া চায়, নাস্তিকদের কোপাতে চায়, মেয়েদের বোরকায় মুড়ে ফেলতে চায়!
মোল্লা স্যার : আপনাদের নাস্তিকদের এটাই সমস্যা, খালি মুসলমানদের ভুল ধরেন। এটা দ্বিচারিতা না, এটাকে বলা হয় ‘সুচারিতা’। বাঙালি মুসলমান সঠিক পথেই আছে। ভারতীয় অভিনেত্রীদের শরীর দেখে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতার শরীর গরম হবে। শরীর যত গরম হবে মাথাও তত গরম হবে। আর জিhaদের জন্য গরম মাথার চেয়ে কার্যকর কিছু নেই।
আমি : মোল্লা স্যার, আপনি কি তাহলে জিhaদের পক্ষে বলছেন?
মোল্লা স্যার : আমি জিhaদের পক্ষে বলতে যাব কেন? ও না, ভুল বলেছি, জিhaদ তো ভালো কাজ। জিhaদ মানে চেষ্টা করা। আমি মুসলমানদের চেষ্টা করতে বলেছি, এমনকি অমুসলিম যারা তাদেরও চেষ্টা করতে বলেছি।
আমি : মোল্লা স্যার, আপনি আসলে কি? আপনি কি জিhaদী নাকি প্রগতিশীল?
মোল্লা স্যার : আমাকে চেনা এত সহজ না। আমি গভীর জলের, থুক্কু, গভীর পানির মাছ।
আমি: মোল্লা স্যার, আপনি কি নামাজ পড়েন?
মোল্লা স্যার : নামাজ মানে প্রার্থনা। প্রার্থনা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রার্থনা তো মুসলিমদের কাছ থেকেই হিন্দুরা, বৌদ্ধরা, খ্রিস্টানরা এবং ইহুদিরা কপি করেছে।
আমি : মোল্লা স্যার, আপনি যেভাবে ‘মুসলমানদের’ বলছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনি নিজে মুসলিম নন। ব্যাপারটা কি তাই?
মোল্লা স্যার : দেখুন, আমি দুনিয়ার সব মুসলমানের চেয়েও বড় মুসলমান, কিন্তু মুসলমানরা তাদের ধর্ম ভুলে যাওয়ার কারণে আমি তাদেরকে একটু অবজ্ঞা করার চেষ্টা করি আর কি। আমি চাই তারা প্রকৃত মুসলমান হোক। আমি চাই তারা নিজেরাও সবাই মিলে চেষ্টা করুক, যেটাকে আরবিতে জিhaদ বলা হয়। আমি চাই অমুসলিমরাও সবাই চেষ্টা করুক, চেষ্টা করতে করতে সবাই ইসলামের ছায়াতলে চলে আসুক।
আমি : কিন্তু মোল্লা স্যার, আপনি নিজে চেষ্টা করছেন না কেন?
মোল্লা স্যার : এমন বোকার মত প্রশ্ন করেন কেন? বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আহমাদ ছফা এবং আমার চেয়ে বেশি চেষ্টা আর কে করেছে শুনি? অবশ্য মাওলানা ভাসানীও একটু চেষ্টা করেছিলেন। সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, শেরেবাংলা ফজলুল হক এবং কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও একটু একটু চেষ্টা করেছিলেন। জিয়াউর রহমানও একজন ভালো ‘চেষ্টক’ ছিলেন। চেষ্টা সবসময়ই চলবে। মুসলিমদের নবীর হাদিসে আছে, “কেয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা চলমান থাকবে”।
মুসলিমদের কোরআনেও বলা আছে “তোমরা আল্লাহর রাস্তায় চেষ্টা করো।”
এছাড়াও কোরআনের অনেকগুলো আয়াতেই বলা হয়েছে,
“অমুসলিমদেরকে যেখানে পাও সেখানেই চেষ্টা করো”।
সুতরাং আপনি চেষ্টাকে কখনো অবজ্ঞা করতে পারেন না। যারা চেষ্টাকে অবজ্ঞা করে তাদের উপর আহমদ ছফার লা ন ত বর্ষিত হোক!
আমি : প্লিজ রাগ করবেন না মোল্লা স্যার! আপনি যে চেষ্টা চেষ্টা বলছেন যার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে জিহাদ, সেই চেষ্টার সাথে পৃথিবীর ইসলামিক স্কলারদের কেউ কি একমত?
মোল্লা স্যার : একমত হতে হবে কেন? থাকুক না ভিন্নমত। চার মাযহাবের বাইরেও পৃথিবীতে অনেক মাযহাব আছে। কয়েক বছর আগে আমি যখন ভায়াগ্রা জলপ্রপাতে, থুক্কু, নায়াগ্রা জলপ্রপাতে গেছিলাম তখন সেখানে একজন মুসলিম স্কলারের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি আরবের মানুষ, কিন্তু আহমদ ছফার খুব ভক্ত। তিনি বলেছিলেন, “জিhaদ হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা করার নাম। প্রয়োজন বুঝে কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে, কখনো গালে চড় দিয়ে, কখনো তরবারির ভয় দেখিয়ে, কখনো হাতে গ্রেনেড নিয়ে চেষ্টা করতে হয়। অবস্থা অনুযায়ী চেষ্টায় ভিন্নতা থাকতে পারে। এমনকি কোন বেহায়া-বেপর্দা মেয়েকে প্রেমে ফেলে পর্দানশীন বানানো বা কোন অমুসলিম মেয়েকে প্রেমে ফেলে তাকে মুসলমান বানানোটাও চেষ্টার মধ্যে শামিল”। আরব ভদ্রলোকের কথা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল।
আমি : কিন্তু মোল্লা স্যার, আপনি নিজে চেষ্টা করছেন না কেন?
মোল্লা স্যার : আবারো ফালতু কথা বললেন। এই মুহূর্তে আমার চেয়ে বেশি চেষ্টা কে করছে শুনি? আচ্ছা, বাদ দেন ও প্রসঙ্গ; নোরা ফাতেহির হট ভিডিও কোথায় পাওয়া যায় জানেন?
আমি : নোরা ফাতেহির কোন কোল্ড কিংবা হট ভিডিও আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি। উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারলাম, নোরা ফাতেহি কানাডার নাগরিক, এখন তিনি বলিউডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর অরিজিনালি তিনি মরক্কোর মানুষ। তিনি আরবি, ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় কথা বলতে পারেন।
মোল্লা স্যার : ধুর মিয়া, আপনি নাস্তিক হইছেন BAল ফালাইতে? টাটা, বাই বাই!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................