ওয়াজের গল্প, গল্পের ওয়াজ!
এসে গেছে আবারো ওয়াজের কাল৷৷ এসব ওয়াজ শুনে এর বাস্তবতা নিয়ে বহু প্রশ্ন জাগতে বাধ্য৷ মাস্টার্স পড়ার সময় আমার পিতার পীর দেলোয়ার হোসেন আনসারী সাহেবকে তার ওয়াজে বলা ১০টি ভুল তথ্যের কথা বলেছিলাম৷ তিনি একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি৷ শুধু আমার পিতাকে বলেছিলেন, আপনার ছেলে অনেক জানে৷ আজও আমার মনে হয় ওনি জেনে বুঝেই মুরিদদের অন্ধবিশ্বাসী রাখতে মিথ্যাগুলো বলেছিলেন৷ তারাতো বলবেই বিশ্বাস হতে হবে প্রশ্নহীন অন্ধ! গণ পরিবহনের বাসে করে যারা যাতায়াত করেন তাদের মনোযোগ দিয়ে ওয়াজ শুনতেই হয়। সবখানের বক্তারা প্রচুর গল্পকে সত্য ঘটনা বানিয়ে প্রকাশ করেন৷ বাসে শোনা ওয়াজে এক বক্তা বয়ানে তিনটি গল্প বললেন-১) কিভাবে সাপের মাথায় মণি আসলো, ২) কেন মাছির এক ডানায় অসুখ আরেক ডানায় নিরাময় থাকে ও ৩) কেন মাছি পা দিয়ে নিজের পাছায় লাথি মারে?
সাপের গল্পে ওনি বললেন, হিন্দুদের মন্দিরে বাস করা এক সাপ মহানবী (সা.)র কথা শুনে, মুসলমান হতে গেল নবীজীর কাছে। খায়েস নবীজির কপালে চুমু খেয়ে মুসলমান হবে। গিয়ে দেখলেন নবীজী একটি খেঁজুর গাছের নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে আছেন। একচিলতে রোদ তাঁর কপালে পড়েছে। সাপ ভাবল এখন কপালে চুমু খেলে নবীজির ঘুম ভেঙ্গে যাবে। সাপ ফণা দিয়ে ছায়া দেয়া শুরু করলো। এতে তার কোমরে তীব্র ব্যথা শুরু হওয়ায়, আল্লাহর কাছে আরজি জানায়, আকাশে একখণ্ড মেঘ দেয়ার জন্য। আল্লাহ সাপের আরজি কবুল করেন। সাপ লক্ষ্য করে, নবীজির পা থেকে রক্ত ঝরছে। সে জানে মহানবীর রক্ত পান করলে ভেস্তে যাওয়া যাবে। সাপ জিভ দিয়ে চেটে রক্ত পান করতে থাকে। নবীজীর ঘুম ভেঙ্গে যায়.. .. ..
সচেতন মানুষ মাত্রই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য-
১) সৌদী আরবে কখনোই হিন্দুরা বাস করতেন না। হিন্দু ভারতীয় অধিবাসীদের বলা হতো, কোন ধর্মালম্বীদের নয়। ধর্ম হিসাবে এই নামের প্রচলনও বেশি দিনের নয়।
২) সাপ কি মানুষের কথা বিষদভাবে বুঝতে পারে? মুসলমান হিন্দু হওয়াটা বুঝার ক্ষমতা কি সাপের এখনো তৈরি হয়েছে? সাপ মেঘের জন্য আর্জি জানাতে পারে না৷
৩) সাপ কি জিহ্বা দিয়ে চেটে আহার করতে পারে? মোটেই না৷ সাপ গিলে খায়৷ সাপের জিভের কাজ শোনা ও পরিবেশ বোঝা৷
৪) সাপের মাথার মণি বিষয়টি আগের গল্পে থাকতো। এখনতো মানুষ জানে বাস্তবে সাপের মাথায় কোন মণি থাকে না, কোনকালে ছিলও না? .. ..
আরো অনেক অসামঞ্জস্যতা বের করতে পারবে যে কেউই।
মাছির গল্পও। মাছি মলে ডিম পারতে গেলে মাছির পা ও শরীরে মল লেগে যায়৷ তাতে থাকে জীবাণু৷ মাছি যখন কোন খাবারে বসে খাওয়ার জন্য তখন ওই মলসহ জীবাণু খাবারে চলে যায়৷ মাছির সকল পা, পাখনাতেই জীবাণু থাকে৷ কোন ডানাতেই রোগের দাওয়াই থাকে না৷ মাছিরা কতদিন বাঁচে? তাদের মস্তিষ্ক কতটুকু? তাদের মানুষের বিষয়াসয় বুঝার সামর্থ্য নেই। ওই তৃতীয় গল্পের মাছিরা খুবই জ্ঞানী, বুদ্ধিমান। ওই মাছিরাও কথা বলতে পারে, সেটা আবার মানুষ বুঝতেও পারে!! এসব আজগুবি গল্পও বোকা মানুষ বিশ্বাস করে৷
একটু সচেতন মানুষ এসব অযৌক্তিক ও হাস্যকর গল্প শুনে হাসবেন৷ বক্তারা সচেতন মানুষদের সহ্য করতে চায় না৷ তারা চায় প্রশ্ন করতে অক্ষম বোকা মানুষ৷ এসব অযৌক্তিক গল্প শুনে কাঁদতে কাঁদতে বোকারদল সম্পদ বিক্রি করে বক্তার হাতে তুলে দিয়ে পরিবারকে আরো দরিদ্র করে৷ আর বক্তা মার্সিডিসে চড়ে বা হেলিকপ্টারে চড়ে মাহফিলে আসবে টাকা কামাতে৷
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................