ভারতীয় মুসলমানদের শরীরে কার রক্ত বইছে?- রামের না বাবরের ....?

ভারতীয় মুসলমানদের শরীরে কার রক্ত বইছে?- রামের না বাবরের ....?

      লেখক পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ

বাবর কি ভারতের মুসলমানদের পূর্বপুরুষ? না।
বাবর কি ভারতীয়? না।
বাবরের জন্ম কি ভারতে? না।
বাবর কি অন্যদেশ থেকে এসে ভারতবর্ষ’কে আপন দেশ করে নিয়েছিলেন, যেমন নিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতা? না।
বাবরের মৃত্যু কি ভারতে? না।
বাবরের কবর কি ভারতে আছে? না।
ভারতীয় না হলেও, বাবর কি মুসলমানদের কোন ধর্মীয় মহাপুরুষ? তাও না।
বাবর যে একজন বিদেশী আক্রমণকারী – একথা কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? না।

এতগুলি যদি ‘না’ হয়, তাহলে ভারতের মুসলমানদের সঙ্গে বাবরের সম্পর্ক কি? ভারতের মুসলমানদের বাবরের প্রতি এত দরদ কেন? বাবর শুধুমাত্র মুসলমান বলে? তাহলে কি কুখ্যাত স্মাগলার হাজি মস্তান’কে রক্ষা করতেও সারা ভারতের মুসলমান কোমর বাঁধবেন শুধুমাত্র হাজি মস্তান মুসলমান বলে? কুখ্যাত স্মাগলার হলেও? এরপর কি জিন্নার স্মৃতিতে মসজিদ বানিয়ে তাঁকে রক্ষা করার জন্যও ভারতের মুসলমানরা পণ করবেন কেবলমাত্র এই কারণে যে, জিন্না মুসলমান? সে জিন্না ভারত বিভাজনকারী বলে কিংবা সে জিন্না কুখ্যাত দ্বিজাতি তত্ত্বের স্রষ্ঠা হলেও? সে জিন্না দেশদ্রোহী, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টিকর্তা হলেও? তাহলে ভারতীয় মুসলমানদের সম্পর্কে ঠিক কি বলা যায়? – তারা ভারতীয় না, কেবলমাত্র মুসলমান? কি চায় তারা? আজ বাবর, কাল জিন্না, পরশু জিন্নার তত্ত্ব আর তারপরের দিন পাকিস্তান, ... হ্যাঁ – তারপর গোটা ভারত’টাই! 

কাশ্মীরের অবস্থা কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে না? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা কাশ্মীরে গিয়ে আমানুল্লা খাঁ-এর পোষ্যপুত্রদের ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ দিচ্ছেন না কেন? যারা কাশ্মীর উপত্যকা থেকে সমস্ত হিন্দুদের’কে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার গোরস্থান রচনা করছে? নাকি হিন্দুশূন্য কাশ্মীর উপত্যকাই ধর্মনিরপেক্ষতার মডেল? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এই মডেল’ই কি সারা ভারতবর্ষে তৈরি করতে চান? আর সাম্প্রদায়িক আদবানী কি সেই সাধের স্বপ্নেই বাধা সৃষ্টি করছেন? – এ’তো বড় অন্যায়!!

বুখারি, সাহাবুদ্দিনেরা যদি বাবরের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করতে চান, তাহলে এরপর কি ফার্নান্ডেজ, মাদার তেরেসা’রা ক্লাইভ, কার্জন আর চার্লস টেগার্ট কিংসফোর্ড-দের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও তা রক্ষায় সচেষ্ট হবেন? এদেশটা কি তাহলে বাবর-জিন্না, ক্লাইভ-কিংসফোর্ড’দের স্মৃতিচিহ্নেই ভরে যাবে? এ দেশটার নাম কি? ভারতবর্ষ না অন্য কিছু? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশটাকে ভারতবর্ষ নামে জানবে না অন্য কোন নামে? আমাদের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের ওপারের অংশদুটি কি সাক্ষ্য দিচ্ছে? 

রাম কি ভারতের মুসলমানদের পূর্বপুরুষ নন? হ্যাঁ। ভারতীয় মুসলমানদের শরীরে কি রামের রক্ত বইছে না? বইছে। রামচন্দ্রের সঙ্গে কি কখনও কোন মুসলমানদের ঝগড়া বা লড়াই হয়ে ছিল? না। রামচন্দ্র কি মুসলমানদের ধর্মে কোন আঘাত দিয়েছিলেন? কি করে দেবেন? তাঁর সময়ে তো ইসলাম ধর্ম সৃষ্টিই হয় নি। তাহলে ভারতের মুসলমানদের রামচন্দ্রকে মানতে অসুবিধা কোথায়? আপত্তি কেন? রাম কি সকল ভারতবাসীর কাছে এক আদর্শ মহাপুরুষ নন? তাহলে ভারতের মুসলমানরা নিজের পূর্বপুরুষ সেই মহাপুরুষকে মানবে, না বিদেশী আক্রমণকারী বাবরকে? 

প্রশ্ন করা হচ্ছে রাম নামে কি আদৌ কেউ ছিলেন? রাম আদৌ জন্মগ্রহণ করেছিলেন? এবং তা ওই অযোধ্যায়? ঠিক ওই জায়গাটাতেই? এর কি কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এবং প্রগতিশীল ঐতিহাসিকেরা প্রশ্নগুলো তুলেছেন। খুবই ন্যায্য প্রশ্ন, কারণ এই ঐতিহাসিকেরা যে অনেকেই বিলেত ফেরৎ। আচ্ছা, যিশুখ্রীষ্টের মা মেরীমাতা ভার্জিন মেরী বা কুমারী মাতা নামে পরিচিত। যীশুর জন্ম দেওয়ার পরও মা মেরী কি করে ভার্জিন ছিলেন, এর কোন ঐতিহাসিক প্রমান আছে কি? শুক্রবার ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যীশুর মৃত্যুর তিনদিন পরেও সোমবার অর্থাৎ ‘ইষ্টার মনডে’তে তাঁর পুনরুত্থান বা যাকে বলে রেসারেকশান – এর কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে কি? 

আমাদের দেশে এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও ইষ্টার মনডেতে ছুটি থাকত। আর বর্তমানে ওই সমস্ত ঐতিহাসিকেরা বিলেতে পড়তে বা পড়াতে গিয়ে (অবশ্য সবাই চান্স পান না,) এখনও ইষ্টার মনডে’র ছুটি ভোগ করেন। কই? ওই সমস্ত ঐতিহাসিক প্রমাণের প্রশ্ন তো এই সব প্রগতিশীল ঐতিহাসিকরা কখনও করেন না! 

কোন ঐতিহাসিক যখন মনে করেন, যে তাঁর “বাবা”ই – তাঁর “বাবা”, কোন ঐতিহাসিক প্রমানের ভিত্তিতে মনে করেন? তাঁর মায়ের কথায় বিশ্বাস করে? মায়ের কথাকেই যদি বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ভারতবর্ষের যে কোন মা’কে জিজ্ঞাসা করুন, - রাম জন্মেছিলেন কিনা? জন্মালে, কোথায় জন্মেছিলেন? কবে জন্মেছিলেন?? 
.... সব উত্তর পেয়ে যাবেন। 
এই বিশ্বাস’কে মর্যাদা দিতে শিখুন। না হলে আপনারও বাবা আর থাকবে না। সাম্প্রদায়িক আদবানি ঠিক এই কথাটাই বলেছেন।          

আপনার যেমন একটা পিতৃপরিচয় লাগে, ঠিক তেমনই একটা দেশেরও একটা পরিচয় লাগে। আর সে পরিচয়,- এই বিশ্বাসের দ্বারাই পরিচালিত হয়। হে পন্ডিতমন্য ঐতিহাসিকের দল, এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে শিখুন। আপনি যেমন আপনার পূর্বপুরুষ হিসেবে আপনার বাবাকে মর্যাদা দেন, তেমনি স্থির করুন .... এদেশের পূর্বপুরুষ হিসেবে পূর্বপুরুষ হিসেবে কার পরিচয় দেবেন? রামের?– না, বাবরের...?

রাম আদৌ জন্মেছিলেন কিনা? ঠিক ওই জায়গাটাতেই জন্মেছিলেন কিনা? জন্মালে, কবে জন্মেছিলেন? – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ অথবা না, যাই হোক না কেন, আরও কয়েকটা প্রশ্ন থেকে যায়। রামের নামে ওখানে একটা মন্দির ছিল কিনা? হ্যাঁ ছিল, এবং আছে। তাহলে ওটাকে কেউ কেউ যে মসজিদ বলে? আচ্ছা, আপনারা কি কেউ মিনার ছাড়া মসজিদ দেখেছেন? তাহলে ওই মসজিদে মিনার নেই কেন? মসজিদের স্তম্ভ কি হিন্দুদের দেবমূর্তি খোদাই করা কষ্টি-পাথরের হয়? ওখানে এরকম ১৬টি স্তম্ভ আছে কেন? ইসলামের পরম ঘৃণার বস্তু শূকরের চিত্র কি কোন মসজিদের গায়ে খোদাই করা থাকতে পারে? ওখানে তা আছে কেন? শূকর হিন্দুদের-ই তো বরাহ অবতার। মসজিদ মাত্রেই অজু করার ব্যবস্থা থাকে, ওখানে তা নেই কেন? মন্দিরের মতো, তার চারিদিকেও পরিক্রমার ব্যবস্থা কেন? - কারণ, ওটা মন্দির-ই। কেবল ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। সুতরাং অযোধ্যার রামমন্দির, এক ভগ্ন মন্দির; সেটাকেই পুনর্নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, - সেই জন্যেই কি তারা সাম্প্রদায়িক? তাহলে, স্বাধীন ভারতের যে প্রথম মন্ত্রীসভা প্রস্তাব পাশ করে সোমনাথের ভগ্নমন্দির পুননির্মানের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই মন্ত্রীসভাও তাহলে সাম্প্রদায়িক-ই ছিল। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ সেই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। তাঁরাও কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন? তাহলে একথা প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সেইদিন বলেননি কেন? দেশভাগের ‘ঘা’, তখনও দগদগ করছিল বলেই কি সেসময় তাঁদের সাহস হয় নি? গান্ধী-নেহেরু মার্কা ধর্মনিরপেক্ষতার আর বাম প্রগতিশীলতার মূল্য চোকাতে গিয়েই যে সেদিন আমাদের মাতৃভূমি বিভাজিত হয়ে গেল, - এটা দেশবাসীর তখনও চোখের সামনেই ছিল; তাই কি তখন প্যাটেল-রাজেন্দ্রপ্রসাদ’কে সাম্প্রদায়িক বলার সাহস হয়নি? জনতার ভুলে যাওয়ার ক্ষমতার উপরে আপনারা আস্থাবান। তাই সেদিন চুপ করে থেকে, আজ অযোধ্যার মন্দির পুননির্মানের সময় একযোগে হুক্কা-হুয়া রব তুলেছেন? 

আপনাদের প্রগতিশীলতা আর ধর্মনিরপেক্ষতার আর কত মূল্য আমরা দেব কমরেড? বিশেষ করে আমরা বাঙ্গালীরা? আপনাদের প্রগতিশীলতা আর ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্য দিতে গিয়ে আমরা আমাদের বঙ্গভূমিকে ভাগ করেছি, তিনভাগের দুভাগ অংশকে দু-দুটো ইসলামিক শত্রুরাষ্ট্রে পরিণত করেছি, লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দুর রক্তে পদ্মা-ভৈরব-মেঘনা’র জলকে লাল হতে দেখেছি, তিন কোটি বাঙ্গালী হিন্দুর ললাটে রিফিউজী কলঙ্কচিহ্ন এঁকে দিয়েছি, পঞ্চাশ লক্ষ হিন্দু নারীকে ধর্ষিতা হতে দিয়েছি, তবুও কোন কথা বলিনি পাছে আমি সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত হয়ে যাই। কিন্তু আর কত? কমরেড, আর কত মূল্য আমরা দেব? 

আপনারা যে কমরেড। তাই আপনাদের রক্তে ‘রেড’ অংশটা কম, জলীয় অংশটা বেশি! এতটাই বেশি যে, সেই জন্য নিজের ভাইকে নিহত হতে দেখলে, নিজের মা-বোনকে ধর্ষিতা হতে দেখলেও আপনাদের রক্ত গরম হয় না! পূর্ববঙ্গ থেকে চুপচাপ পালিয়ে এসে এখানে পার্টি করা শুরু করেন!! কিন্তু আমরা যে কমরেড নই, আমরা বেশিরেড। তাই আমাদের রক্তে লাল অংশটা বেশি। সেই জন্য ভাইকে নিহত হতে দেখলে, মা-বোনকে ধর্ষিতা হতে দেখলে আমাদের রক্ত গরম হয়ে ওঠে। রামের স্থানে বাবরকে দেখলেও আমাদের রক্ত টগবগ করে ফোটে। এর পরিচয়ও আপনারা শীঘ্রই পাবেন। 

আডবানি’রা ডাক দিয়েছেন, - সিউডো সেকুলারিষ্ট’দের মুখোসটাকে একটানে খুলে দাও। ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোসের আড়ালে তাদের ঐ দেশদ্রোহী হিন্দুবিরোধী মুসলিম তোষণকারী মাতৃভূমির অঙ্গচ্ছেদকারী মাতৃঘাতক ভূমিকাকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধর। এ লড়াই কোন দেশপ্রেমিক মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়। এ লড়াই কোন ভারতীয় মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়, যারা প্রকৃতই ভারতীয়। এ লড়াই ওই সব ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মেকলেপুত্র-লেলিনপুত্র-স্তালিনপুত্র-মাওপুত্র... দের বিরুদ্ধে। সিউডো সেকুলারিজমকে খতম করে ভারতের মাটিতে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা’র প্রতিষ্ঠার জন্য এই হবে শেষ লড়াই। 

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ দ্বারা ২৭/১ বি, বিধান সরণী, কলিকাতা-৬ থেকে প্রকাশিত। 

[১৯৯২ সালে, সম্ভবত জানুয়ারি মাসেই, দেশব্যাপী রামজন্মভূমি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে 'ভারতীয় মুসলমানদের শরীরে কার রক্ত বইছে, রামের না বাবরের?’- শীর্ষক উপরোক্ত এই অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ লিফলেটটি লিখেছিলেন সদ্যপ্রয়াত শ্রী তপন কুমার ঘোষ মহাশয়, যা অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। জনপ্রিয়তার মাত্রা এতটাই ছিল যে, ... কেউ সেই লিফলেট নিয়ে ফটোকপি করাতে গেলে দোকানদার আগে থেকেই কপি করে রাখা লিফলেট তাকে দিয়ে দিতো।
২৮ বছর আগে তোলা তপনদা’র সেই প্রশ্ন আজও সমান প্রাসঙ্গিক। এদেশে বসবাসকারী প্রায় সব মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা কয়েক প্রজন্ম আগেও এদেশের হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতিরই অঙ্গ ছিল। কেউ অস্ত্রের ভয়ে আর আবার কেউ অর্থের লোভে ধর্মান্তরিত হয়েছে। আদতে তারা প্রত্যেকেই এই হিন্দু সমাজেরই অঙ্গ ছিল কিন্তু আজ তাদের সাথে হিন্দুদের সহাবস্থানের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশী সংস্কৃতি।]
  সংগৃহীত

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted