ফুটবল : আল্লার পরাজয়
আল্লার পরাজয় না বলে সিজদার পরাজয় বলাই ভালো। কারণ ম্যাচ জিতে সৌদি এবং মরক্কো মাঠের মধ্যে পুঁটকি উঁচু করে সিজদায় পড়ে যায়। সাংবাদিকদের বলে, বিজয়ের মালিক আল্লাহ্। আবার তারাই পরের ম্যাচে বরণ করে পরাজয়।
এটা মুসলামনদের বিশ্বাস এবং অভ্যাস। তারা মনে করে, তারা শুধু কাজ করতে পারে, কিন্তু শুভ ফল আল্লার তরফ থেকে আসে। তাই শুভ ফল এলে আল্লার শুকরিয়া আদায় করে।
কলেজ লাইফে তাবলিগে যেতাম, সেখানে যে জ্ঞান দেওয়া হতো, মাইরি, তার তুল্য মহাজ্ঞান জগতে কেউ দিতে পারে না। এমন জ্ঞানও দিও, ‘সব চাইবা আল্লার কাছে। এমন কি একটা জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও সাহাবিরা আল্লার কাছে চাইতেন। এক সাহাবির নাকি খাবারের কিছু নেই, উপশে মরো মরো পরিবার, তবুও তিনি মানুষের কাছে হাত পাতেননি, আল্লার কাছে চেয়েছেন। অতপর দেখা গেল ইঁদুর মাটি খুড়ছে, তার সাথে আশরাফি বেরচ্ছে।
ইঁদুরও সাহাবিদের মাটির তলা থেকে স্বর্র্ণমুদ্রা দিয়ে যেত। সুভহানাল্লাহ!
সে আল্লা দিতেই পারে, আল্লার অভাব কী যে তিনি দিতে পারেন না? কিন্তু ফুটবলের বিজয় তো আল্লার দেওয়ার ক্ষমতা নেই, এটা যেদিন যারা ভালো খেলে, সেদিন তারা জিতবে।
তবে আল্লার ক্ষমতা নেই, মুসলিম হিসেবে এ কথা বলা বেয়াদবি, অবশ্যই আল্লার ক্ষমতা আছে, কিন্তু তিনি যা পছন্ন করেন না তার অনুকূলে তিনি ক্ষমতা দেখাবেন কেন? তিনি ফুটবল পছন্দ করলে কোরনে সে কথা লেখা থাকত, কারণ, এটার মধ্যে রয়েছে সর্ব কালের সব কিছু। আর বিশ্ব-কাপাঁনো এত জনপ্রিয় ঘটনার কথা কোরানে থাকবে না তা তো হতে পারে না। তাছাড়া নবিজির হাদিসে নিদেন পক্ষে থাকতই।
আল্লা সিজদা পছন্দ করেন—এ কথা ঠিক আছে, কিন্তু সতর ঢেকে ওজুর সাথে সেটা করতে হয়, হাঁটুর উপর হাফপ্যান্ট পরে পুঁটকি উঁচু করে মাথা মাটিতে লুটিয়ে দিলেই আল্লা খুশিতে গদ গদ হয়ে যাবেন, এটা ভাবা যায়! সতর ঢাকা যে ফরজ।—এ প্রশ্ন মুসলমান খেলোয়ারদের ভাবতে হবে।
আল্লার কালামের বেসুমার ফজিতাল, তা অস্বীকার করি না। যেমন কাল একখানা সহি হাদিস দেখলাম, যে ব্যক্তি ওজুর সাথে ২০০ বার সুরা এখলাম পাঠ করে, তার জন্য বেহেশতের তিন শ দরজা খুলে যায়, দোজখের তিন শ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, ইয়াকুত মরকত জামরুদ পাথর নির্মিত ৬৬ তলা ভবন নির্মিত হয় বেস্তের মধ্যে, আর রেজেকের ৩০০ দরজা খুলে যায় দুনিয়ায়। আর তার জানাজায় এক লক্ষ দশ হাজার ফেরেশতা যোগ দেয়। বুঝেন ঠেলা! আল্লা কত বড়ো দেনেওয়ালা!
একটা মানুষের বেস্তে ঢুকতে একটা দরজাই যথেষ্ঠ। কিন্তু আল্লা তার জন্য খুলে দিবে তিন শ দরজা। একটা মানুষের ছেষট্টি তলা বালাখারার দরকার পড়ে না, তবু আল্লা দেবেন, তার তো জায়গার কোনো অভাব নাই। আবার মরে গেলে এক লক্ষ দশ হাজার ফেরেশতা জানাজায় শরিক হবে!!!
নিশ্চয়ই হবে, কেননা আল্লা সব পারে। কিন্তু যে ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা গভীর রাতে এসে ওএমএস ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়ায়, একটু সস্তায় কিছু চাল ডাল কিনতে, ইঁটের পরে বসে দুরুদ শরিফ পড়ে, আর আল্লার জিকির করে, তার হাতে আল্লা ফেরেশতাদের একটা লেওড়ার লোমও উপহার দেয় না। তার জন্য রেজেকের তিন শ দরজাও খুলে যায় না। তবে ওই যে আগে এসে লাইনে ঠাঁই নিয়ে কিছু চাল ডাল যে পেল কম দামে, তাতেই ওই বুড়ি বলবে, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লা দিছে!
এটা মুসলমানদের খাসলত। এদের দ্বারা মানুষের অসামন্য শক্তির সন্ধান পাওয়া অসম্ভব। আর সভ্যতা, গনতন্ত্র, সেকুলার সমাজ—সে তো বহুত দূরও অস্ত!
কিতা কইবাম আর মুসলমানের কথা, আমার জাত ভাইদের কথা?
দুনিয়ার সব জাতি তাদের ঈশ্বরকে ত্যাগ করে দিন দিন মানুষ হচ্ছে, আর এরা আল্লার ঠ্যাং ধরে ঝুলে পড়ে আছে। এরা মানুষ হতে চায় না, মুমিন হতে চায়। এরা বিজ্ঞান চায় না, যুক্তি চায় না। তবে বিজ্ঞান ও যুক্তির জেরে যে প্রযুক্তি, তা অকুণ্ঠ চিত্তে ভোগ করে। কাফেরের সে প্রযুক্তি ভোগ করে ক্রেডিটও দেয় আল্লার। যেমন, গরমে ফ্রিজের ঢান্ডা জল খেয়ে তৃপ্তি সাথে গ্লাস নামাতে নামাতে বলে, সোবাহানাল্লা।
১৫.১২.২০২২
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................