“হিন্দু দাস দের কাহিনী”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
বৈদিক সনাতনীদের ‘দাস’ বানানো শুরু হয় আরবী এবং পরে তুর্কি ‘জিহাদী আগ্রাসন’ যেদিন থেকে ভারত বর্ষের দিকে তদের কালো হাত নিয়ে অগ্রসর হয়। সেই হিসাবে মুহাম্মদ –বিন-কাসিমের ‘সিন্ধু বিজয়’ এর পথ প্রদর্শক। তুরষ্কের খলিফার সংগে ইরাকের শাসন কর্তা ‘হেজাজ’ এর (কাসিমের কাকা) যে চুক্তি হয়, সেই চুক্তিতে শুধু ৬০০০০ দিনার (স্বর্ন মুদ্রা) এর দ্বিগুন দেবার কথা ছিলো না। আরো বলা ছিলো যে ‘গনিমতের মাল’ (বন্দী দাস-দাসী) এর এক চতুর্থাংশ খলিফার কাছে পাঠাতে হবে। কথা মতো কাসিম বেশ কয়েক লক্ষ দাস দাসী পাঠিয়েছিলো, সংগে ছিলো দাহিরের দুই কন্যা সমেত ৭২ জন বাছাই করা সুন্দরী। হেজাজ ও তার কথা রেখেছিলো।
প্রায় ৪০০ বছর আগে ইউরোপে শুরু হয় ‘শিল্প বিপ্লব’। নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে নানা শিল্প তৈরীর এক বিশেষ সুযোগ মানুষের সামনে এসে পড়ে। কিন্তু কল কারখানায় কাজ করার মানুষ কই? একই সংগে ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড (ডাচ), পর্তুগীজ (পুর্তুগাল), স্পেন (স্প্যানীশ), সামান্য হলেও জার্মানী তখন পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জায়গায় তাদের নিজ নিজ উপনিবেশ তৈরী করতে শুরু করেছে। সেই সব উপনিবেশে ছড়িয়ে আছে সীমাহীন জায়গা জমি। সেই সব জায়গীর কারা সামলাবে?? জমি জমা ভাগ করে দেওয়া হলো এই সব দেশের অভিজাত শ্রেনীর মধ্যে, যারা রাজা/রানীর খুব কাছের মানুষ ছিলো (ইংল্যন্ডের ‘লর্ড’)। লর্ডেরা কি করে নানা চাষ বাস করবে??? অসুবিধা কোথায় ???? আফ্রিকার বনে জঙ্গলে আছে অসংখ্য বিজিত মানুষ। ওদের ধরে নিয়ে এসো। ওদের পায়ে শিকল দাও, কাঁধে দাও জোয়াল, বেত মারতে মারতে পিঠের চামড়া দিয়ে রক্ত ঝরুক, নিয়ে যাও পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগালের রাজধানী ‘ডাকার’ এ। ওখানে আছে বিশাল “দাস বাজার’। যার যা দরকার সেই মতো ওই গরু ছাগল গুলোকে কিনে নাও আমাদের কাছ থেকে ।তারপর কোথায় পাঠাবে ,ওদের নিয়ে কি করবে তার কোনো হিসাব চাই না। কৈফিয়ত কাউকে দিতে হবে না। সেই শুরু হলো আফ্রিকার “দাস ব্যাবসা”।
গড়ে ঊঠলো, লন্ডন, প্যারিস আমস্টার্ডাম, এই সব ঝা চকচকে শহর। মাটির নীচ দিয়ে চললো ট্রেন, বানালো ঐ দাসেরা। খরচ বলে কিছু নেই। গরু যেমন গোয়ালে থেকে খড় কুটো খায়, ওদের জন্য তৈরী হলো কিছু গোয়াল আর সারা দিনে দুমূঠো খাবার (পড়ুন- “আংকেল টমস কেবিন, দেখুন ‘মিসিসিপি বার্নিং’) । আর দাও প্রচুর করে নেশার পানীয়, যাতে করে ওরা ওদের মনের এবং শরীরের কষ্ট ভুলে থাকে। সঙ্গে তো মেয়ে ছেলে নেই। তাদের তো ফেলে রেখেছে সেই আফ্রিকায়। অল্প স্বল্প যা এসেছে তারা তো লর্ড দের ঘর পরিষ্কার করে, আবার সুঠাম শরীরের গুলো রাতে মনিবের অংক শায়িনী হয়। ( এক নাম করা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট তার আফ্রিকান দাসী দিয়ে ৪ টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, এই কথা সর্ব জন বিদিত)।
বোঝা গেলো, বিনা পারিশ্রমিকে পরিশ্রম আদায় করা মানব সমাজে চলছে চলবে।
তা বৈদিক হিন্দুদের তো জয় করা হচ্ছে। তৈরী করতে হবে, সমরখন্দ, বুখারা, গজনী, তাসখন্দ, কাবুল,বাগদাদ, ইরানি শহর গুলো,বেবিলন , ইস্তানবুল, মক্কা, মদিনা, সারা দুনিয়ার আরো কতো কতো শহর। ছিলো সব ভাংগাচোরা অন্ধ পুতিগন্ধময় স্থান। ঐ ভারতেই দেখো কতো সুন্দর সুন্দর সুন্দর ঘর বাড়ী, নগরী, রাস্তা ঘাট। ওদের আমরা জয় করেছি, দাস বানিয়েছি। আমাদের এতো দিন কিছুই ছিলো না। এখন ওদের থেকে লুট করা রাশি রাশি সোনাদানা আছে। ওরা জানে কি করে ওই সব নগরী বানাতে হয়। আমরা কি করে জানবো ? আমরা তো দস্যু বৃত্তি করে ,অপরের সম্পদ লুট করতেই জানি আর সেই সেই ভাবে এতো দিন পেট চালিয়েছি। এখন ওদের সম্পদ দিয়ে ওদের খাটূনি দিয়ে বানাবো ৭০ লাখি গজনী, অপুর্ব সুন্দর ‘ইস্তানবুল’। ওরা দেখবে ,আর দেখবে ভবিষ্যতের লেখক রা। আমরা শুধু আরাম আয়েশ করবো। ওদের সুন্দরী মেয়ে গুলোকে নিয়ে ফুর্তি করবো। ওরা আমাদের হয়ে এই সব করবে। সেই শুরু হলো বিজিত ভারত থেকে হিন্দুদের ধরে নিয়ে যাওয়া।
আজ সংখ্যায় এই বৈদিক সনাতনীরা কতোজন? ইউরোপে একদল মানুষ আছে, যাদের বলা হয় “রোমা পিপল” বা “জিপসী”। এরা এক কালে ছিলো শ্রী রামের ভক্ত। তাই এদের বলে রোমা । এদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলো মুলত পাঞ্জাব এবং গুজরাট থেকে। মুসলমানেরা যখন ইউরোপ দখল করার জন্য আক্রমন করে তখন ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া এই হিন্দুগুওলোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো রান্না বান্না এবং সরঞ্জাম বয়ে নিয়ে যাবার জন্য। বড়ো বড়ো সৈন্য দলের পিছনে এরা থাকে। দিনের বেলায় কাজ করে , রাতের বেলায় সৈন্যদের মনোরঞ্জন করে। আলেকজান্ডারের সঙ্গেও এমন “ব্যাগেজ ট্রেন” ছিলো। তিনি পালাবার আগে অনেক গ্রীক দের রেখে চলে যান যারা এখনো বাস করে উত্তর পশ্চিম ভারতে।
এই যে হিন্দু গুলোকে দাস বানিয়ে মুসলমানেরা নিয়ে যায় তাদের কি হয়??? ইতিহাস বলে, ভিয়েনার দোর গোড়া থেকে মুসলমান সৈন্যদের মেরে তাড়ায় ইউরোপের নাইট বাহিনী। কোনো রকমে পালাবার সময় এই হিন্দু দাস গুলোকে রেখে পালিয়ে আসে। সেই থেকে হতভাগ্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছে “জিপসী” হয়ে ইউরোপের নানা জায়গায়। আজ যে দেশকে বলে ‘রোমানিয়া’ সেই দেশে এদের বেশীর ভাগ দাসেরা পড়ে থাকে। সেই থেকে নাম হলো “রোমানিয়া= রোমাদের নামে নাম। এদের কোনো দেশ নেই। নাগরিকত্ব নেই। ইউরোপের কোনো দেশ এদের চায়না। এরা কি করবে কি খাবে? ছোট ছোট পশু টানা গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়। পেটের দ্বায়ে চুরি করে। এদের দোষ কি???
এদের সংখ্যা আজ প্রায় ১২ মিলিয়ন, ( এক কোটি ২০ লক্ষ) এরা আমাদের ভারতীয় বংশোদ্ভুত। আমি ইউরোপ থাকাকালীন একদিন এদের সঙ্গে কাটিয়েছি।
আজো ঁমা কালীর ভক্ত। অনেকে খ্রীষ্টান হয়ে গেছে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................