বিবিসি সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটা ডকুমেন্ট তৈরি করেছে যা ভারত সরকার নিষিদ্ধ করেছে। এই বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের বাংলাদেশী সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন তার টশোতে ভারতীয় দুজন সাংবাদিককে ডেকে এনেছিলেন। খালেদ মহিউদ্দিনের প্রশ্ন ছিলো (আসলে তার অবস্থান এটাই ছিলো) ভারতের জনগণ #সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী না হলে গুজরাট #দাঙ্গার পরই কেন নরেন্দ্র মোদি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলো? ভালো উত্তর করেছেন ভারতীয় সাংবাদিকরা। তাদের জবাব ছিলো, ভারতের জনগণ মোটেই হিন্দুত্ববাদকে সচেতনভাবে ক্ষমতায় এনে বসায়নি। ভারতের নির্বাচনের স্টাকচারই বরং মোদিকে ক্ষমতায় এনে বসিয়েছে।
ভারতের জনগণ স্থানীয় বা আঞ্চলিক দলগুলিকে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে ভোট দিয়েছে। ফলে বিজেপি এগিয়ে গেছে ঐসব জায়গায় যেখানে কংগ্রেস বিজেপি লড়াই হয়েছে। কংগ্রেস তাদের দশ বছরের ব্যর্থতার কারণে জনগণের আস্থা হারিয়েছে। ভারতের জনগণ হিন্দুত্ববাদী হয়ে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করতে চায় এমন একটা প্রচরণা বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ইন্টেলেকচুয়াল লোকজন সব সময় প্রচার করতে চায়। লাহোর ইসলামাবাদ ঢাকা যেন সেক্যুলারিজমের স্বর্গ বয়ে যাচ্ছে এমন একটা ভাব। বাংলাদেশ পাকিস্তান দুটো দেশের বেসমেন্টই ‘মুসলিমবাদ’। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যে আরেকটি পাকিস্তানেরই ভিন্ননামে জন্ম হয়েছে সেটা আবুল মনসুর আহমদ স্বীকার করে নিয়েছিলেন তার বইতে। মোদির উপর যে রকম দাঙ্গা নিয়ে দায় উঠেছে অবিভক্ত ভারতে হোসেন শহীদ সরোয়ার্দিকে নিয়েও সেই দায় ছিলো। কোলকাতা দাঙ্গার সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি দাঙ্গা লাগার জন্য ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’ কর্মসূচীর দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন। #দাঙ্গার সময় পুলিশ কনট্রল রুমে দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন কোন রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিয়ে। জয়া চ্যাটার্জি যিনি দেশভাগের ইতিহাস বলার সময় মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল তিনি পর্যন্ত লিখেছেন, কোলকাতা দাঙ্গার দায় সরোয়ার্দি এড়াতে পারেন না।
তো সেই সরোয়ার্দিকে ‘জাতীয় নেতা’ ‘গণতন্ত্রের মাসনপুত্র’ বানাতে খালেদ মহিউদ্দিনদের কোন অসুবিধা হয়েছিলো? পুরো পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগের প্রতি যে সমর্থন, মুসলমানদের নিজেদের দেশ ‘পাকিস্তানের’ জন্য তাদের যে সংগ্রাম তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির দুইবার ক্ষমতায় থাকাকে একভাবে মেলানো যায়? বাংলাদেশ পাকিস্তানের যত রাজনৈতিক দলই থাক, আইডলজিক্যালি তাদের ‘মুসলিম লীগ’ হতেই হবে। কিন্তু ভারতে বিজেপি আরএসএস সংঘ পরিবার ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গড়তে চায়- বাকীদের অবস্থান তাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। ভারতের জনগণ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় এমন কোন পরিস্থিতি বা প্রমাণ নেই।
#খালেদ মহিউদ্দিনের দ্বিতীয় অবস্থান ছিলো ভারতের মুসলমান ভারতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক কিনা, সেখানে মুসলমানরা নিরাপদ কিনা? ভারতের বাম সেক্যুলাররা রাজনৈতিক কারণে এই প্রচারণাটা একপেশে করে তুলেছে। ভারত উত্তর কোরিয়া কিংবা কিউবার মত কোন দেশ নয় যে সেখানে কি ঘটছে সেটা জানতে সেটেলাইট লাগবে বা গোয়েন্দা অসমর্থিত খবরের উপর নির্ভর করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ ভারতে যায় নানা প্রয়োজনে। তারা ভারতে গিয়ে মুসলিম হওয়ার জন্য কোন রকম সমস্যায় পড়েছেন? হিন্দুরা কি তাদের মুসলিম পরিচয়ের কারণে #ঘৃণা করেছে? সেরকম একটি ঘটনাও যদি ঘটত তাহলে ইউটিউবার ফেইসবুকারদের শোরগোলে প্রচারণায় টেকা যেতো না। বাংলাদেশ থেকে চিকিত্সা ব্যবসার জন্য রোজ যত মুসলমান ভারতে যায় তারা কি কেউ গরুর মাংস খেতে চেয়ে সেখানে সেটি পাননি? তাদেরকে কি বলা হয়েছিলো এই দেশে গরুর মাংস নিষিদ্ধ? নাকি শুনেই মারতে এসেছিলো? বরং উল্টোটা।
কথিত একটি ‘মুসলিম বিরোধী দেশে’ রোজ ৫০ হাজার মুসলমান ভ্রমণ করেন। ভিসার জন্য মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভিসা নেন- সেই দেশে মুসলমানরা নিরাপদ কিনা, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক কিনা জানতে দুজন ভারতীয় সাংবাদিককে ডেকে জিজ্ঞেস করতে হয়? বাংলাদেশের একের পর সাম্প্রদায়িক হামলার পর খালেদ মহিউদ্দিন কি একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন যেখানে তিনি অতিথিদের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ কিনা? তারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক কিনা? এত এত হিন্দু কেন দেশছাড়ে?... জিজ্ঞেস করেছিলেন? নাকি প্রিয়া সাহার দেশপ্রেম নিয়ে টানাটানি করেছিলেন?
#সুষুপ্ত #পাঠক #BBCNews #India #NarendraModi #Pakistan #Bangladesh
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................