একটি নির্ভুল দাবী করা বইতে রয়েছে স্ববিরোধী সব কথাবার্তা! ভাবা যায়?

আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন কুরআনে একই বিষয়ে দুই রকম মতামত দেয়া আছে। সহজ করে বুঝিয়ে বলি, মনে করুন কুরআনে এক জায়গায় বলা আছে “বৃহস্পতিবার কলা খাওয়া হারাম”, ঠিক অন্য এক সুরায় একই বিষয়ে বলা আছে “বৃহসম্পতিবার কলা খাওয়া হালাল”! তাহলে মুমিন কুরাআনের কোন নির্দেশ মান্য করবে? নবী মুহাম্মদ নিজেই কুরআনে একই বিষয়ে দুরকম আয়াত নাযিল করেছেন। ফলে তাকে বলতে হয়েছে আগের আয়াত বাতিল করা হলো। কিন্তু পরবর্তীকালের আলেম ওলামারা কুরআন পাঠ করে অসংখ্য স্ববিরোধী আয়াত খুঁজে পান। প্রবল ধর্ম বিশ্বাসের কারণে তাদের পক্ষে কুরআনে হাত দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা নিজেরাই ‘নাসেখ-মানসুখ’ বা রহিতকরণ ইজমা গ্রহণ করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একই বিষয়ে একাধিক মতামত পাওয়া গেলে সর্বশেষ নাযিলকৃত সুরার মতামতই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। তবে অপর মতামতের আয়াতও কুরআনে থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, যে কুরআন পৃথিবী সৃষ্টি হবার আগেই ‘লওহে মাহফুজে’ আল্লা লিখে রেখেছিলেন সেই কুরআনে এত স্ববিরোধী ও সাংঘর্ষিক আয়াতের ছড়াছড়ি কেন? এমনকি বহু সাহাবী আয়াত ভুলে গিয়েছিলেন যা লিপিবদ্ধ না থাকায় হারিয়ে গেছে চিরতরে। এটাকে মুমিনরা দাবী করেছেন আল্লাতালা ভুলিয়ে দিয়েছেন...। আসুন কুরআনের এই ‘নাসেখ-মানসুখ’ আয়াতের উদাহরণ এবার দেখা যাক।


#নাসেখ-মানসুখের উদাহরণ দেয়ার আগে বলে নেই কুরআনে আল্লা জোর দিয়ে বলেছিলেন এই কিতাবে কোন ভুল ভ্রান্তি নেই। "এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই পথপ্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য (সূরা বাকারাহ, আয়াত-২)"। 

কিন্তু আল্লা প্রায়ই ভুল করতে লাগলেন! আমরা জানতে পারি সুরা আল-বাক্বারার ২৩৮ নাম্বার আয়াতটি প্রথমদিকে এভাবে নাযিল হয়েছিল-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ

পরে আয়াতটি ‘মানসুখ’ বা রহিত বা বাতিল ঘোষণা করে এভাবে নাযিল হলো-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاَةِ الْوُسْطَى

(সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-১৩১৫) 

এর ফলে লোকজন বলাবলি শুরু করেছিলো কুরআন আসলে মুহাম্মদের বানানো কথা। যদি এটা আল্লার কথা হতো তাহলে আল্লা কি ভুল করতে পারত? সমালোচনার জবাবে নতুন আয়াতে আল্লা বললেন-

“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?”
সূরা আল বাকারা-১০৬)

#কিন্তু এই দাবী কিন্তু ধাপে টেকে না। কারণ কুরআন নিজেই দাবী করেছে এখানে কোন ভুল-ভ্রান্তি নেই! কুরআনের মত একটি আয়াত কেউ লিখে আনতে পারবে না। কিন্তু এত কাটাছেঁড়া যে বইতে তাতে কি এসব কথায় ঈমান আনা যায়?

#হযরত ওসমান কুরাআনের সংকলনের সময় কুরআনের ভেতর এত অসংগতি কি করে থেকে গেলো সেই প্রশ্নের উত্তরে এটাই বলতে হয় ইসলামের সেই যুগে খিলাফত নিয়েই তাদের মাথা ব্যথা ছিলো সবচেয়ে বেশি। কুরআনের উপর এত এত স্কলার তৈরি হবে, আলেম তৈরি হবে সেটা তাদের চিন্তাতে ছিলো না। ফলে পরবর্তীকালের বড় বড় স্কলার বহু অসংগতি পেয়েছিলেন যা সংশোধিত হয়নি। ফলে নানা রকম ব্যাখা করতে হয়েছে তাদেরকে। একেবারেই না করতে পারলে ‘আল্লাই ভালো জানেন” বলে আত্মসমর্পন করেছেন। যেমন ধরেন বহুল প্রচলিত ইসলামের শান্তির বাণীটি যে নাসেখ-মানসুখ নিয়মে বাতিল আপনারা কি সেটা জানেন?

“তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্যে এবং আমার ধর্ম আমার জন্যে” (সুরা কাফিরুন- ১০৯:০৬ (মক্কায় অবতীর্ণ)। 
“দ্বীন নিয়ে কোন বাড়া বাড়ি নাই” সূরা-বাকারা, ০২: ২৫৬ ( মদিনায় অবতীর্ণ)

#এই দুই আয়াত বাতিল বা মানসেক হয়ে গেছে এই আয়াতটি দিয়ে-
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” সূরা আল ইমরান, ০৩: ৮৫ মদিনায় অবতীর্ণ

#অথচ দেখেন ইসলামকে উদার সহিষ্ণু ধর্ম দেখাতে মানসুখ বা বাতিল হয়ে যাওয়া আয়াত দেখিয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করা হয়! যেমন একমাত্র মুসলমানরাই জান্নাতে যাবে এমন উগ্র অসহিষ্ণু আয়াত যখন আপনি দেখাবেন তখন এক শ্রেণীর লোক দেখাবে কুরআন বলেছে ইহুদী খ্রিস্টানরাও জান্নাতে যাবে। তখন তারা একটি মানসুখ বা বাতিল বলে গণ্য হওয়া আয়াত দেখাবে-

“#নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না” (সূরা বাকারা, ০২:৬২ মদিনায় অবতীর্ণ)
উক্ত আয়াত বাতিল হয়ে গেছে নিচের আয়াত দ্বারা-
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” (সূরা আল ইমরান, ০৩: ৮৫মদিনায় অবতীর্ণ)

#চিন্তা করে দেখুন কতখানি ঝামেলা রয়ে গেছে এই কিতাবে! মানুষকে শুধু বিভ্রান্তই নয়, একটি নির্ভুল দাবী করা বইতে রয়েছে স্ববিরোধী সব কথাবার্তা! ভাবা যায়?

#সুষুপ্ত #পাঠক #NasekhMansukh #Quran #Islamic #Education

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted