কামাখ্যা: সৃষ্টির প্রতীকে যোনিচিহ্ন পূজিতা
সনাতন ধর্ম সংস্কৃতির গৌরবে ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেক নবীন সংস্কৃতির লোকেরা অনেকেই মিথ্যাচার করে, কদর্যতা করে। হিন্দুরা বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম, হিন্দুরা মূর্তিপূজা করে, লিঙ্গপূজা করে, যোনিপূজা করে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার বিভিন্ন লেখাতে আমি যোনিপূজা ছাড়া অন্যপ্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছি। আমার মনে হয়, যোনিপূজা বিষয়টি নিয়েও খোলামেলা কথা বলা প্রয়োজন। প্রথমত লিঙ্গ এবং যোনি সম্পর্কে শাস্ত্রে আছে।সংস্কৃতে লিঙ্গ মানে শুধু যৌনাঙ্গ নয়, চিহ্ন অর্থেও বহুল ব্যবহৃত হয়। সে দার্শনিক অর্থকে উপলক্ষ করেই শিবলিঙ্গ পূজার উৎপত্তি। স্কন্দপুরাণে বিষয়টি সুন্দর করে বলা আছে, পৃথিবীর বেদিতে আকাশরূপ অনন্ত লিঙ্গমূর্তি বিরাজমান। জগতের সকল কিছুই তাতে লয় হয়, তাই তার নাম লিঙ্গ।
আকাশং লিঙ্গমিত্যাহুঃ পৃথিবী তস্য পীঠিকা।
আলয়ঃ সর্বদেবানাং লয়নাল্লিঙ্গমুচ্যতে।।
এ শ্লোকেও স্পষ্টভাবে লিঙ্গ বলতে অনন্ত আকাশকে বোঝাচ্ছে এবং লিঙ্গের পীঠিকা বা বেদী হল পৃথিবী। ভারতবর্ষের সমাজ মূলত কৃষিভিত্তিক সমাজ। নদীকে কেন্দ্র করেই এর সভ্যতার বিস্তৃতি। আবার নদীর মৃত্যুতে সভ্যতার অবলুপ্তি ঘটে। যেমন সরস্বতী নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তার অববাহিকায় অসংখ্য সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। পৃথিবী বা ভূমিকে তাই মাতৃরূপে সম্বোধন করা হয়েছে বেদ সহ বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থাদিতে।বেদমন্ত্রে বলা আছে :
ভূমে মাতর্নি ধেহি মা ভদ্রয়া সুপ্রতিষ্ঠিতম।
সংবিদানা দিবা কবে শ্রিয়াং মা ধেহি ভূত্যাম।
( অথর্ববেদ : দ্বাদশ কাণ্ড, প্রথম অনুবাক)
"হে মাতৃভূমি, তুমি আমায় কল্যাণের পথে সদা সুপ্রতিষ্ঠিত কর। হে জ্ঞানস্বরূপা কাব্যময়ী মাতৃভূমি, তুমি দিনের আলোর ন্যায় আমায় উদ্ভাসিত করে সদা শ্রীযুক্ত এবং পশু-পাখি, মানব সহ পৃথিবীর সকল ভূতজগতের সাথে সদা যুক্ত রেখ। "
দার্শনিক তত্ত্ব বাদ দিয়ে আমরা যদি সাধারণভাবেই মেনে নেই যে শিবলিঙ্গ শিবের লিঙ্গের পূজা এবং এর নিচে গৌরীপট্ট দেবীর প্রতীক। দেবীর যোনির শিলা প্রতীকেই কামাখ্যাতীর্থে পূজা করা হয়। তাহলে সমস্যা কোথায়? এটা নিয়ে যাদের সমস্যা, তাদের তো হিন্দুদের সকল বিষয় নিয়েই সমস্যা ; তাদের চশমাতে কেন আমরা নিজেদের দেখছি? শিব এবং শক্তি অভেদ, তাদের আলাদা করা যায় না, তাই আমরা অর্দ্ধনারীশ্বর রূপে তাঁদের পূজা করি। শক্তিহীন শিব নিস্ক্রিয়। তাঁরাই জগতের আদি পিতামাতা। শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান গ্রন্থ শিবমহাপুরাণের প্রথম শ্লোকে বলা হয়েছে:
জগতঃ পিতরং শম্ভুং জগতো মাতরং শিবাম্।
তৎপুত্রঞ্চ গণাধীশং নত্বৈতদ্বর্ণয়াম্যহম্।।
(শিবমহাপুরাণ: জ্ঞানসংহিতা, ১.১)
"জগতের আদি পিতামাতা শম্ভু-শিবানী এবং তাঁদের পুত্র গণেশকে প্রণাম করে আমি শিবমহাপুরাণ বর্ণনা করছি।"
প্রায় দুইহাজার বছর পূর্বে মহাকবি কালিদাস তাঁর জগতনন্দিত মহাকাব্য রঘুবংশের শুরুতে প্রথম শ্লোকেই সেই জগতের আদি মাতা-পিতা পার্বতী এবং পরমেশ্বর শিবের বন্দনা করেছেন অসাধারণ আলঙ্কারিক ব্যঞ্জনায়। তিনি বলেছেন - যেমন শব্দ এবং শব্দ থেকে উৎপন্ন তার অর্থকে আলাদা করা যায় না; ঠিক একইভাবে শিব এবং শক্তিকেও আলাদা করা যায় না
বাগর্থাবিব সম্পৃক্তৌ বাগর্থপ্রতিপত্তয়ে।
জগতঃ পিতরৌ বন্দে পার্বতীপরমেশ্বরৌ।।
"শব্দ এবং শব্দের অর্থ যেমন করে সম্পৃক্ত ; ঠিক একইভাবে সম্পৃক্ত জগতের আদি পিতা-মাতা শিব এবং পার্বতী। বাগর্থ সহ সকল প্রকার বিদ্যা কলার প্রতিপত্তির জন্যে সেই পার্বতী- পরমেশ্বরকেই সদা বন্দনা করি।"
একই কথা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁর কথামৃতের অসংখ্য স্থানে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়েছেন যে ব্রহ্ম আর তাঁর শক্তি অভেদ। ঠাকুরের ভাষায়:
"... তাই ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ। এককে মানলে, আর একটিকেও মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকা শক্তি ; - অগ্নি মানলেই দাহিকা শক্তি মানতে হয়, দাহিকা শক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না।...সূর্যেকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না।"
বিষয়টি যতই লজ্জার হোক, আমরা সকলেই জানি আমাদের মাতাপিতার মিলনে কি করে আমাদের জন্ম হয়েছে। বিষয়টিতে লজ্জার কিছুই নেই, এটাই জীবপ্রবাহের ধর্ম, ঠিক একইভাবে জগতের আদি পিতামাতার মিলনের প্রতীক কল্পনা করে পূজা করা হয়, তবে এটা কি করে অশ্লীল হয়? অশ্লীল হয় এই কারণেই যে, আমরা না বুঝে অন্যের ভাবদর্শনের দাসত্ব করছি।বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকের বাইশ অনুবাকে শুধুমাত্র একা ভগবান শিব নয় অম্বিকাপতি, উমাপতিকেও বন্দনা করা হয়েছে। এ 'অম্বিকা' শব্দটি লক্ষ্যনীয়, এ শব্দে মায়ের সকল জীবকে গর্ভে ধারণ করে জগজ্জননী মাতৃত্বের বিষয়টি আছে।
নমো হিরণ্যবাহবে হিরণ্যবর্ণায় হিরণ্যরূপায়
হিরণ্যপতয়ে অম্বিকাপতয় উমাপতয়ে
পশুপতয়ে নমো নমঃ।।
"অম্বিকাপতি,উমাপতি, পশুপতি, হিরণ্যাদি সর্বনিধির পালক,তেজোময়, হিরণ্যবাহু,হিরণ্যবর্ণ,হিরণ্যরূপ পরমেশ্বর শিবের উদ্দেশে নমস্কার।"
বেদান্তসূত্রের শুরুতেই আছে,"শাস্ত্র যোনিত্বাৎ, (বেদান্তসূত্র :১.১.৩)।" অর্থাৎ অখিলশাস্ত্রের যোনি বা উৎস বেদ। যোনি শব্দটি উৎস অর্থে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। জগতের সকল জ্ঞানের উৎস পরমেশ্বর, বিষয়টি এ সূত্রে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। যোনি শব্দটির মধ্যে যদি লজ্জা পাওয়ার কিছুই থাকত, তাহলে শব্দটি বেদান্তসূত্রে থাকত না। ঠিক একইভাবে জগতের সকল জীবের জন্মধাত্রী হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া; সেই সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে যদি তাঁকে যোনিচিহ্নে পূজা করা হয়, তাহলে সমস্যা কোথায়? মাতৃরূপে, পরমেশ্বরীরূপে ধরিত্রী মায়ের উপাসনা সারা বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। ধরিত্রীর সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে পৃথিবীব্যাপী অনেক জাতিই যোনিচিহ্নে মহাদেবীর উপাসনা করতেন। আধুনিকতার নামে অনেকে বাদ দিয়েছে, আবার অনেক জাতি অবিচ্ছিন্নভাবে পূর্বের মত এখনও করে যাচ্ছে -এ ধরিত্রী মায়ের পূজা। দূর থেকে এর মাহাত্ম্য বোঝা যায় না, কাছে গেলে উপলব্ধি হয় অনন্তকালের ব্যক্ত অব্যক্ত অনন্ত রহস্য সঞ্চিত আছে এ মাতৃযোনি উপাসনায়।
কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় পৃথিবীকে যেহেতু মাতা বলে মনে করা হয়। তাই নারী এবং পৃথিবী বা ধরিত্রীকে সমার্থক বলে গন্য করা হয় । আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠেন তখন তাকে ঋতুমতী একজন নারীরূপে গণ্য করা হয়। এ বিশ্বাস থেকেই অম্বুবাচী বা ধরিত্রীর বাৎসরিক রজঃস্বলা প্রবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। যে এ সময়ে তিনদিন রজঃশ্রাবও নির্গত হয়ে পরে অম্বুবাচীর নিবৃত্তি হয়।এ নিবৃত্তির পরই জমি উর্বর হয়ে উঠত। তাই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত অম্বুবাচীর নিবৃত্তির পরেই জমি চাষ করতে কৃষিক্ষেত্রে যায় কৃষকেরা। নারীরা সর্বদা শুদ্ধ, তারা আমাদের যজ্ঞ, বংশধারা এবং সুকৃতির সহায়ক। সৃষ্টির প্রয়োজনে তারা রজঃস্বলা হন। অথর্ববেদে বলা হয়েছে:
শুদ্ধাঃ পুতা যোষিতো যজ্ঞিযা ইমা আপশ্চরুমব সর্পন্তু শুভ্রাঃ । অদুঃ প্রজাং বহুলান্পশুন্নঃ পক্তৌদনস্য সুকৃতামেতু লোকম্ ।।
(অথর্ববেদ ১১.১.১৭)
"বিশুদ্ধ, পবিত্র, অতিথিপরায়ণ নারীদের কর্ম পবিত্র। তারা যজ্ঞের সহায়ক,উন্নতচরিত্র বংশধারা এবং প্রচুর সম্পদ দিতে পারে। তারা আমাদের জন্যে খাদ্য প্রস্তুত করে, তারা সুকৃতিময়ী এবং তাদের দ্বারা জগত ঋদ্ধ হয়।"
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারী যেমন রজঃস্বলা হয়, ঠিক তেমনি পৃথিবীরূপ আদ্যাশক্তি মহামায়ার রজঃস্বলা রূপ কল্পিত হয়েছে। সারা ভারতবর্ষে ধরিত্রীর রজঃস্বলা উৎসব পালিত হলেও আসাম, বঙ্গ, ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্ব ভারতে এটি বৃহৎ পরিসরে পালিত হয়। আসামের বিখ্যাত কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরকে ঘিরে এ উৎসবটি বৃহৎ পরিসরে পালিত হয়। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ঋতুকালে মেয়েরা অশুচী থাকে। এ কয়দিন আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকে। একইভাবে পৃথিবী এ অম্বুবাচী বা অমাবতীর তিন দিন অশুচী থাকে বলে চিন্তা করা হয়। লৌকিক আচার অনুসারে এ সময় ব্রহ্মচারী, সাধু-সন্নাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলারা কেউই আগুনের রান্না করা কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে থাকেন, এই তিন দিন।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে আষাঢ় মাসে রবি মিথুন রাশিস্থ আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথমপাদে অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ (৩°|২০') স্থিতিকালে পৃথিবী ঋতুমতী হওয়ার এ সময়কে “অম্বুবাচী” বলে।সূর্যের দক্ষিণায়নের দিন থেকে ৩ দিন অর্থাৎ আষাঢ়ের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত দিনগুলিই হল অম্বুবাচী । জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়, সূর্য যে বারে যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে পরবর্তী সেই বারে সেই সময়েই অম্বুবাচী হয় ।"অম্বু "অর্থাৎ জল বা বারি বর্ষণের প্রারম্ভকাল হিসাবেই বলা হয় অম্বুবাচী।
এ সময় কামাখ্যাদেবীর মন্দির বন্ধ থাকে।রক্তিম রঙের ধারা বয়ে যায় দেবীর যোনিকুণ্ড থেকে এ তিনদিন, যা দেবীর ভক্তদের ভাষায়, দেবীর রজঃস্বলা অবস্থার রক্তস্রাব। বেশ কয়েকটি বেনারসি শাড়ি ভিজে যায় এ রক্তের ধারায়। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এ কারণেই কামাখ্যাতীর্থকে নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। অসংখ্য লোককথা প্রচলিত আছে মন্দির এবং দেবীকে ঘিরে।সনাতন ধর্মে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া, ধর্মকৃত্য বা লৌকিক আচার উদযাপিত হয়; যেমন বিভিন্ন প্রকারের ব্রত। বিভিন্ন ব্রতের মধ্যে অম্বুবাচী ব্রত নিয়ে মানুষের মনে বিস্ময় আদিকাল থেকেই। অম্বুবাচী আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতি নামেও পরিচিত। আসামের কামরূপ হল দেবীর ৫১ শক্তিপীঠের একপীঠ। সমগ্র বিশ্বে একমাত্র যোনিশিলা রূপি ধরিত্রী মায়ের পূজা কামাখ্যাতেই হয়। কামদেব এখানে দেবীর আরাধনা করে তাঁর শিবের তেজে দগ্ধ হয়ে কুরূপ থেকে স্বরূপে ফিরে এসেছিলেন তাই স্থানটির নাম কামরূপ। দেবী হলেন কামাখ্যা এবং দেবীর ভৈরব হল উমানন্দ। যিনি কামকে শাসন করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন। কামাখ্যা মায়ের ভৈরব উমানন্দ। ব্রহ্মপুত্রের মাঝে অন্য একটি পাহাড়ে ভৈরব উমানন্দের মন্দির। দেবী কামাখ্যার পঞ্চমূর্তি ও অষ্টযোগিনী আছে। পঞ্চমূর্তি হল-কামাখ্যা, কামেশ্বরী, ত্রিপুরা, সারদা, মহোৎসহা। অষ্টযোগিনীরা হলেন- কটীশ্বরী, গুপ্তকাশী, শ্রীকামা, বিন্ধ্যবাসিনী,পাদদুর্গা, দীর্ঘেশ্বরী, ধনস্থা ও প্রজটা।যদিও যোনিপীঠে শিলায় দেবীর পূজা হয়, কিন্তু দেবীর ধ্যানমন্ত্রে দেবীর সম্পূর্ণ রূপের বর্ণনা আছে।দেবীর ধ্যানমন্ত্র হল:
রবিশশিয়ুতকর্ণা কুংকুমাপীতবর্ণা
মণিকনকবিচিত্রা লোলজিহ্বা ত্রিনেত্রা ।
অভয়বরদহস্তা সাক্ষসূত্রপ্রহস্তা
প্রণতসুরনরেশা সিদ্ধকামেশ্বরী সা ॥ ১॥
অরুণকমলসংস্থা রক্তপদ্মাসনস্থা
নবতরুণশরীরা মুক্তকেশী সুহারা ।
শবহৃদি পৃথুতুঙ্গা স্বাঙ্ঘ্রিয়ুগ্মা মনোজ্ঞা
শিশুরবিসমবস্ত্রা সর্বকামেশ্বরী সা ॥ ২॥
বিপুলবিভবদাত্রী স্মেরবক্ত্রা সুকেশী
দলিতকরকদন্তা সামিচন্দ্রাবতংসা ।
মনসিজ-দৃশদিস্থা য়োনিমুদ্রালসন্তী
পবনগগনসক্তা সংশ্রুতস্থানভাগা ।
চিন্তা চৈবং দীপ্যদগ্নিপ্রকাশা
ধর্মার্থাদ্যৈঃ সাধকৈর্বাঞ্ছিতার্থা ॥ ৩॥
সৃষ্টির দেবী, ধরিত্রীর প্রতীক হলেন কামাখ্যা।তাই তিনি বাৎসরিক রজঃস্বলা হন। মন্দিরে কোন বিগ্রহহীন যোনিপীঠেই তাকে পূজা করা হয়। আসামের রাজধানী গৌহাটি শহর থেকে অল্প দূরত্বে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮০০ফুট উচ্চতায় পাহাড় ও বনভূমি বেষ্টিত নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যা মন্দিরের অবস্থান।এটি ভারতবর্ষের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম। অত্যন্ত রহস্যময় এ মন্দির।যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন, সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে। বিদ্যুৎহীন আলো আঁধারের সিঁড়ি বেয়ে নেমে দেবীর অবস্থান গুহামন্দিরে। সুন্দরভাবে বাঁধানো যোনিবেদি থেকে বেড়িয়ে আসা জলে অন্তঃপুরটি পূর্ণ। প্রচণ্ড একটা গা ছমছমে ভাব। মন্দিরে শুদ্ধভাবে অবস্থান করলে, দেবীর অদৃশ্য উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সন্তানের রক্ষার্থে সদা জাগ্রত দেবী। অম্বুবাচীর তিনদিন দেবীকুণ্ড থেকে রক্তিম জলের ধারা, যাকে দেবীর রক্তস্রাব বলা হয় তা অনবরত নিঃসরণ হয়।পরে চতুর্থ দিন দেবীর মন্দির খুলে স্নান পূজাদি সম্পন্ন করা হয় । অম্বুবাচী যোগে জগন্মাতা আদ্যাশক্তি কামাখ্যা দেবীর রক্তবস্ত্রের মাহাত্ম্য ব্যাপক । কুব্জিকা তন্ত্রে বলা হয়েছে:
কামরূপং মহাপীঠং সর্বকাম-ফলপ্রদম্।।
কলৌ শীঘ্রফলং দেবী কামরূপে জপং স্মৃতম্।
কামাখ্যাবস্ত্রমাদায় জপপূজাং সমাচরেৎ ।
পূর্ণকামং লভেদ্দেবী সত্যং সত্যং ন সংশয় ।।
( কুব্জিকা তন্ত্র: সপ্তম পটল,৫৬-৫৮ )
" পীঠসমূহের মধ্যে মহাপীঠ কামরূপ সর্বকাম ফলপ্রদ।কলিযুগে কামরূপে জপ অতিশীঘ্র ফলদান করে। হে দেবী! কামাখ্যার রক্তবস্ত্র শরীরে ধারণ করে জপ ও পূজা করিলে সাধকের পূর্ণকাম এবং অভীষ্ট ফল লাভ হয়।"
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................