শিক্ষক জজ ব্যারিস্টার বৈজ্ঞানিক অর্থনীতিবিদ রাজনীতিবিদ- "আলহাজ" হলে তার পেশার সঙ্গে নিজেই করে আত্মপ্রতারণা। একজন আলহাজ জর্জ সাহেব প্রচলিত আইনে যখন বিচার করেন সেটা হয় কুফরিকালাম! কারণ আল্লার আইন বাস্তবায়ন করতে আল্লা জিহাদ করতে বলছেন। একজন শিক্ষক কুরআন হাদিস শিক্ষা না দিয়ে এমন সব বিজ্ঞান সমাজ সাহিত্য আইন পড়াচ্ছেন যা সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন অর্থনীতিবিদ, মানুষ কেন দরিদ্র হয়, কী করে ধনীর সংখ্যা বেড়ে যায়, দুনিয়ার সমস্ত অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যকে পায়ে দলেই আলহাজ হন। কেননা আলহাজ হবার আগে তাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে ধনী ও দরিদ্র আল্লার সৃষ্টি। দারিদ্র্য দিয়ে আল্লা মানুষকে পরীক্ষা করেন। যেসব কমরেড আলহাজ হন তারা কমিউনিজমে কী করে বিশ্বাস রাখেন এবার বলেন? গরীব মানুষকে যদি আল্লা ঈমান পরীক্ষার জন্য বানান তাহলে কমিউনিজমের সাম্যবাদ তো আল্লার সঙ্গে খবরদারী! এই দেশে ভাসানীর মত হুজুরও নিজেকে কমরেড বলতেন! কী ধরণের "হাঁসজারু" (হাঁস ও সজারুর মিশ্রণকে সুকুমার রায় যেমন বলেছিলেন) চলে এই দেশে ভাবুন!
আলহাজ আসিফ নজরুল স্যার বিজ্ঞানের বড়াই দেখলে তার হাসি পাওয়ার কথা ফেইসবুকে জানিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক ও টেলিভিশন টকশোর রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি চাঁদ বানান লিখতে জানেন না, লিখেছেন "চাদ", এটা কমেন্টে বহু মানুষ ধরিয়ে দেয়ার পরও তিনি পোস্ট এডিট করেননি। ভারতের চন্দ্রাভিযানের পর মুসলিম লীগারদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ ফেইসবুকে অনেক দেখেছি। বিস্ময়কর হচ্ছে পাকিস্তানের সাইটগুলো ঘুরে আমার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে ভারতের এই সাফল্যে তারা নিজেদের পিছিয়ে পড়ার জন্য আফসোস করে বলছে ভারত অনেক এগিয়ে গেছে, আমাদের ভারতকে অনুসরণ করা উচিত...। একমাত্র বাংলাদেশ, তাদের হতাশা এতটাই, রীতিমত চাঁদের যাবার অসারতা, বিজ্ঞানকে জানার বেহুদা চেষ্টা... এইসব বলে বলে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলছেন, বিজ্ঞান আজকে যা বলছে কাল সেখান থেকে সরে আসছে, তাই বিজ্ঞানের কথার কোন দাম নেই, বিজ্ঞান হয়তো কোনদিন সৃষ্টি রহস্য জানতে পারবে না...। এই লোকের ছাত্ররা কি কোনদিন তার কাছ থেকে অজানাকে জানার অনুপ্রেরণা পাবে? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই আলহাজ আসিফ নজরুলরাই এখন ৯৯%। আসিফ নজরুল কিছুদিন আগে হজ করে এসেছেন। ফলে উনি উনার নবী আঙুল দিয়ে চাঁদ দুইভাগ করে ফেলেছিলো সেটি যে বিশ্বাস করে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কুরআন হাদিসে সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে যা বলা আছে আমাদের বিজ্ঞান তার বিপরীত কথা বলে। ফলে যে কোন মহাকাশ গবেষণাই কুফরিকালাম। কেন?
কারণ কুরআনে সৃষ্টি সম্পর্কে সব বলে দেয়ার পরও আপনি তাতে আস্থা না রেখে রহস্য জানার চেষ্টা করছেন! মনে করুন আপনার ঈশ্বর বলেছে, চাঁদ আকাশের গায়ে মেয়েদের কপালের টিপের মত একটি টিপ! আপনি সেটি বিশ্বাস করে চাঁদ নিয়ে আর কৌতূহল দেখাবেন না। এটাই ঈমান। অপরদিকে বিজ্ঞান সেখানে থেমে না থেকে গবেষণা চালাবে। প্রথমে সে দেখতে পাবে চাঁদ আসলে একটি গোলাকার বলের মত বস্তু। তার ভেতর কী আছে সেটা জানতে আপনার অপ্রতুল যন্ত্র আপনাকে সমস্যায় ফেলবে। পৃথিবী থেকে বসে ছোট্ট একটা রিমোট গাড়ি দিয়ে আপনি চাঁদের মাটি পর্যবেক্ষণ করছেন। যন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কারণে অপ্রতুল তথ্য প্রমাণে আপনার মনে হয়েছে চাঁদের মাটির নিচে জল নেই। পরের দশ বছরে আপনার টেকনোলজি এগিয়ে গেছে একশো বছর। কারণ সেখানে আলহাজরা বিজ্ঞান চালায় না। ফলে চাঁদের মাটির নিচে জল থাকার আন্দাজ মেশিন পেয়ে গেলে বিজ্ঞান তার আগের ধারণা থেকে সরে আসে। এটা শুনে আলহাজরা হো হো করে বিদ্রূপের অট্টহাসি হেসে উঠবে। বিজ্ঞান আজকে এক কথা বলে কালকে আরেক কথা বলে! বিজ্ঞান পরের দশ বছর চাঁদের মাটির নিচে অভিযান চালিয়ে হয়তো একদম প্রামাণ্য দলিল বের করে ফেলবে। চাঁদ সম্পর্কে আমরা জেনে যাবো সকল রহস্যের জবাব। কিন্তু তখনো আলহাজদের কিতাব একই কথা বলে যাবে। তাতে অবশ্য উনাদের পিছলাতে কোন সমস্যা হবে না। উনারা উনাদের কিতাবে বিজ্ঞানের সেই আবিষ্কার কোন একটা সূরায় আবিষ্কার করে ফেলবেন! এরা এতটাই পরগাছা যে বিজ্ঞানের সমস্ত ফসল নিজেদের কিতাব রিসার্চ করে পাওয়া গেছে দাবী করবে আবার সুযোগ পেলেই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরীতে সাহায্য করবে! বিজ্ঞানকে কেউ অস্বীকার করলে তার কল্লা কেউ ফেলতে আসবে না। পৃথিবীকে গোলাকার মনে না করলে কেউ মারতে আসবে না। আইনস্টাইন হকিং ডকিন্স ডারউইনের মতো বিজ্ঞানীদের নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে অনুভূতিতে আঘাত পেয়ে গর্দান উড়িয়ে দিবে না! বিজ্ঞানের "বড়াই" নিয়ে হাসাহাসি করলেও আসিফ নজরুল হুজুরের কোন বিপদ নেই। কিন্তু হজে যাবার আগে নিজের মেয়ের টিশার্ট পরা ছবি পোস্ট করে উনার মুরিদদানদের হুমকিতে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য হয়েছিলেন! তবু বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যাবে না। কারণ আলহাজ হতে হলে নিজের বুদ্ধি বন্ধক রাখতে হবে অজ্ঞানতার কাছে! এগুলো যখন সমাজের শিক্ষিত শ্রেণীতে বেশি দেখা যায় তখন সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে...।
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................