কূটনীতিজ্ঞ চানক্যের যোগ্য উত্তরসূরী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।

কূটনীতিজ্ঞ চানক্যের যোগ্য উত্তরসূরী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।
✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️

অসম্ভবকে সম্ভব করে ভারত বুঝিয়ে দিল মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্তের উপদেষ্টা চানক্যের পথ ধরেই ভারত এই সাফল্য পেয়েছে।আজ পর্যন্ত জি২০-র বৈঠকে কোন দেশ সর্বসম্মত যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করতে পারেনি।কিন্তু ভারত সে কাজটি করে দেখিয়ে দিল বিশ্ব কূটনীতিতে ভারতকে অবহেলা করার দিন শেষ।শুধু তাই নয় সারা পৃথিবীকে দিশা দেখিয়ে নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিল সারা বিশ্বকে শাসন করার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে।

এই ধরনের বিশ্ব সামিটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল সর্বসম্মত যৌথ বিবৃতি।গত বছর ইন্দোনেশিয়ার সামিটে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকা রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীনের মধ্যে পরষ্পর বিরোধী মনোভাবের জন্য সর্বসম্মত যৌথ বিবৃতি দেয়া সম্ভব হয়নি।কিন্তু এবার যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা করেও বলা 
হয়েছে সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখন্ডতা বজায় রাখার প্রশ্নে সব পক্ষ ঐক্যমত হয়েছে।এতে চীন এবং রাশিয়ার অস্বস্তির কারণ হলেও ভারতীয় কূটনীতির সূক্ষ্মচালে সবপক্ষ কাত হয়ে যায়।রাশিয়া ইউক্রেনের অনেক জায়গা দখল করে বসে আছে আর চীন ভারত সীমান্ত দখলের পায়তারার মধ্যে এই ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 

দিল্লির জি২০-র ঘোষণা পত্রে ছিল মোট ৮৩টি অনুচ্ছেদ।প্রতিটি অনুচ্ছেদ ১০০% ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহিত হয়েছে।ভারতের এই কূটনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।জি২০-র ইতিহাসে ভারত সবচেয়ে সফল উচ্চাভিলাষী নেতৃত্ব দিয়েছে।

দ্বিতীয় সাফল্য ছিল জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসাবে ৫৫টি অনুন্নত দেশের সমন্বয়ে গঠিত আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য পদ প্রাপ্তি।এটি ভারতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।বহুদিন যাবৎ নরেন্দ্র মোদী আফ্রিকার অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে ধনী দেশগুলোর দাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।গরিব দেশগুলো তাদের নিজেদের দু:খ দুর্দশার কথা বলার একটা মঞ্চ পেল।এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ভারত।রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে অন্য যেকোনো বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের পাশে আফ্রিকার সমর্থন নিশ্চিত করে ফেলল ভারত।একই সাথে আফ্রিকাতে ভারতের লগ্নির দরজা খুলে গেল।এতদিন আফ্রিকার গরিব দেশগুলো চীনা ঋনে ছিল জর্জড়িত।এখন থেকে তাদের শাপমুক্তির পথ প্রশস্ত হয়ে গেল।ইতিমধ্যে ভারত নাইজেরিয়ার একাধিক তেলের খনির দায়িত্ব নিয়ে চীনের গাড়ে শ্বাস ফেলতে শুরু করেছে।

তৃতীয় সাফল্য এতটাই গভীর যে এতদিন চীন ছিল অপ্রতিরোধ্য।কিন্তু জি২০-র সামিট সারা বিশ্বে চীনের আধিপত্য বিস্তারে লক্ষনরেখা টেনে দিয়েছে।
এতদিন বেল্ট এন্ড রোড ইনিসিয়েটিভ(BRI)দ্বারা চীন রাস্তা বানিয়ে বিশ্বের দুয়ারে পৌঁছে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু সেই চেষ্টায় এবার বাঁধ সাধল INDIAN MIDDLE EAST ECONOMIC  CORRIDOR বা ইমেক।জি২০-র সদস্যদের সঙ্গী করে ভারত BRI এর পাল্টা প্রকল্পের রোড ম্যাপ তৈরি করে ফেলল।ইমেক প্রজেক্ট  পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে  আরব দুনিয়ার ভেতর দিয়ে পন্য সোজা ইউরোপে পৌঁছে দেয়ার এটি একটি  অবিশ্বাস্য কানেক্টিভিটি। 

🚢 যাত্রা শুরু হবে মুম্বাই বন্দর থেকে কন্টেনার ভর্তী জাহাজ পৌঁছাবে দুবাইয়ের জেবেল আলী বন্দরে তারপর রেলপথে সৌদি আরব জর্ডন হয়ে ইসরাইলের হাইপা বন্দর।সেখান থেকে জাহাজে কন্টেনার পৌঁছে যাবে গ্রীসের পারিয়াম বন্দরে।গ্রীস হল ইউরোপের গেটওয়ে।সেখান থেকে পন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌছাতে সময় বাঁচবে ৪০% কম খরচও সাস্রয় হবে উল্লেখযোগ্য পরিমানে।

এই প্রকল্প সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি বলেছেন এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।মৌস্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন লিখেছেন শুধু রেলট্রেক বসানো নয় আঞ্চলিক বিনিয়োগে গেমচেঞ্জার হবে এই প্রকল্প।সম্মেলনের মধ্যেই ইটালির প্রতিনিধি চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিসিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন।

গ্রীসের পারিয়াক বন্দর ছিল চীনের পন্য সামগ্রী ইউরোপে ঢুকার একমাত্র বন্দর।গ্রীসের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চীন পারিয়াক বন্দরটি প্রায় কিনে নিয়েছিল।সেখানে এবার ঢুকে পরতে চলেছে ভারত।নরেন্দ্র মোদী আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সন্মেলন থেকে ফিরার পথে কেন গ্রীসে একদিনের জন্য যাত্রা বিরতি করেছিলেন এই চুক্তির পর সেটা সবার কাছে পরিস্কার হলো।

 রাশিয়ান তেল ইউরোপে রফতানি নিয়ে ভারতের সাথে সৌদি আরবের মনকষাকষি চলছিল।ভারত জি২০-র সদস্য এবং আমন্ত্রিত কিছু দেশের সমন্বয়ে কাশ্মীরে পর্যটন বিষয়ে একটি বৈঠক ডেকেছিল।সেই বৈঠকে সৌদি আসেনি।ধারণা করা হয়েছিল সৌদি আরব আমন্ত্রিত দেশ হিসাবে জি২০-র বৈঠকে আসবে না।কিন্তু সৌদি আরব ছিল ইমেকের অন্যতম ভোক্তা।ভারতীয় কূটনীতি জি২০-র বৈঠকে সৌদি আরবকে আমেরিকার কাছাকাছি এনে দিয়েছে। 

জি-২০ বৈঠকে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করা হয়েছে।বলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদের পিছনে কোন যুক্তি খোঁজার চেষ্টা হতে পারবেনা।এটি ছিল পাকিস্তানকে চাপে রাখার কৌশল। 

জি২০-র বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন IMF এর চিফ ইকোনমিস্ট।তিনি সামিটে ঘোষণা দেন আগামী ৪ বছরের মধ্যে ভারত ৩য় অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে।ভারতের জয়গান এখন IMF এর মতো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও করছে।এখানেই ভারতের সাফল্য।নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতা সারা পৃথিবীর তাবড়-তাবড় রাষ্ট্র প্রধানদের খালি পায়ে হাটিয়ে গান্ধী ঘাটে নিয়ে যেতে পেরেছেন।এই সাফল্য সনাতন সংস্কৃতির সাফল্য এ সাফল্য সনাতন ধর্মের সাফল্য।সর্ব্বোপরি এ সাফল্য ভারতের যুগোপুরুষ নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর সাফল্য।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted