ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাদ্রাসার মুফতিরা মিলিত হয়ে আজকে প্রেসক্লাবে একটি সেমিনার করছে 'হিজাবোফোবিয়া: নারীর উচ্চশিক্ষার পথে অন্তরায়' শিরোনামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলের বহু শিক্ষকদের দেখলে আপনার মনে হবে কোন মসজিদের খতিব! মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় সব একাকার হয়ে গেছে। যাই হোক, মাদ্রাসার হুজুররা নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাহলে আগ্রহী হচ্ছে নাকি? মানে হিজাব বোরখা পরে নারীদের উচ্চশিক্ষার পক্ষে তারা? এমনটা হলে আমি জানি বহু মডারেট নাস্তিক প্রগতিশীল বলবে এটা মন্দের ভালো। এটাকে আমাদের সমর্থন করা উচিত।... কিন্তু তারা যা জানেন না তা জানলে এটা বলতেন না। কী সেটা?
ইসলাম কখনোই নারীদের উচ্চশিক্ষার পক্ষে নয়। নারী পুরুষের চেয়ে বেশি জানবে না। পুরুষের উপরে তার স্থান নয়। তাছাড়া মাহরাম ছাড়া তো তার কোথাও বের হবার উপায় নেই। এমন কি ঘরের মধ্যে বেগানা পুরুষকে, মনে করেন বাড়ির চাকর পুরুষ- তাকে বুকের দুধ খাইয়ে মাহরাম বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইসলামে। সেখানে কী করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবে মেয়েরা? তাহলে তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বুকের দুধ খেতে খেতে জান বের হয়ে যাবে! আরে ভাই আমাকে অশ্লীল বলার আগে গুগল করে দেখুন এটা ইসলামী আইন কিনা। জাস্ট, বুকের দুধ খাইয়ে মাহরাম লিখে সার্চ করুন সব পেয়ে যাবেন...।
তো, হুজুররা উচ্চশিক্ষার পক্ষে হিজাব পরার শর্তকে মানছেন কেন? কিংবা রাতদিন ক্রিকেট হারাম, খেলাধুলা হারাম বলেও দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সমস্ত সদস্যদের সঙ্গে তাদের সেলফি! আজ পর্যন্ত কোন ক্রিকেটারদের তারা বলেনি খেলাটা ছেড়ে দেন। কেন?
এটাও ইসলামের একটা তড়িকা! বড় পাপকে রুখতে ছোট পাপকে সাময়িক সময়ের জন্য মেনে নেওয়া। এটা তাকিয়ার একটি পর্যায় যা দ্বীনের স্বার্থে বৈধ। যেমন যুদ্ধের সময় ইসলামে পতিতাবৃত্তি বৈধ। মানে কোন মুজাহিদ যৌনকাতর হলে সে অর্থের বিনিময়ে কারোর শরীর কিনতে পারবে। এর নাম মুতা যা ইসলামের নবীর সুন্নত। এটি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতেন না। ফলে তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় এটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওমর কে ইসলামের বিধান নিষিদ্ধ করার?
যাই হোক, যা বলছিলাম, পৃথিবীতে এমন কোন আলেম, মুফতি, কুরআন বিশারদ নেই যিনি মানেন না ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম। তারপরও এদেশের আলেম সমাজ ফাতেমা জিন্নার পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলেন। তাদের নেতা মাওলানা মওদুদী এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, আইয়ুব খানের মতো বড় হারামকে রুখতে ফাতেমা জিন্নার মতো ছোট হারামকে মেনে নেয়া হচ্ছে দ্বীনের স্বার্থে। আইয়ুব খান মুসলিম শরীয়া পারিবারিক আইন সংশোধন করেছিলেন। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, নারীদের তালাকের অধিকার, এটা করায় আইয়ুব খান হয়েছিলেন 'ইসলামের শত্রু'। অপরদিকে ফাতেমা জিন্না নারী হওয়ায় তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হলে তা হবে ইসলামের খেলাফ। কিন্তু 'ইসলামের শত্রু'কে রুখতে আপাতত নারীনেতৃত্ব হারাম জেনেও সেটাকেই মেনে নিতে হচ্ছে। সময় সুযোগ আসলে চিরতরে নারীদের রাজনীতিতে আসা বন্ধ করা হবে তাদের লক্ষ্য।
এখানে সেটাই ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা পড়ুক সেটা তারা চান না। কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। তাই কৌশল নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেখতে আগে মাদ্রাসার মতো হোক! যেমন ক্রিকেট বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে একটা ক্রেজ। ফলে এটাকে বেস করে ইসলাম প্রচার অনেক এগোবে। ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সুন্নতি দাড়ি, মাঠে নামাজ, তাবলীগ এসব দেখে দেশের বাকী ছেলেমেয়েরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যে কারণে ইসলামে সমস্ত খেলাধুলা হারাম জেনেও ক্রিকেটকে পুঁজি করে ইসলাম প্রচারের জন্য তারা কোন ক্রিকেটারকে ক্রিকেট ছাড়তে বলেন না- এটাই তাকিয়া। দ্বীনের স্বার্থে ভণ্ডামি জায়েজ!
একদিকে তারা মেয়েদের ক্লাশ ফোর পর্যন্ত পড়তে বলবেন, আর অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মাদ্রাসার মতো দেখতে বানাবেন। এতে দুই দিকে লাভ। নতুন করে নারী অগ্রগতি হবে না। অন্যদিকে যারা এগিয়ে গেছে তারা মাদ্রাসামনা হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ওয়াজের হুজুররা 'ঢাকা বিশ্ববেশ্যালয়' বলতো। আজ তারাই আমন্ত্রিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আয়োজিত সেমিনারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখি না। মুসলিম লীগারদের দেশে সমস্ত প্রতিষ্ঠাই এক পর্যায়ে মাদ্রাসা হয়ে উঠে। উত্তরার শ্যুটিং স্পটে গেলে দেখবেন শত শত মাদ্রাসা মাইন্ডের অভিনেতা অভিনেত্রী কাজ করছে। এফডিসিতে গেলে আড্ডায় কেবল হাদিস কুরআন! সব নষ্ট হয়ে গেছে। পচে গেছে। এটা যাবেই। মুসলিম লীগারদের হাতে একটা দেশ কেন, পুরো বিশ্বটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডে নাকি বসছে হিজাবী ভাস্কর্য 'হিজাব শক্তি' নামে! যখন ইরানের শত শত নারী মারা গেলো তাদের হিজাব পরতে বাধ্য করার প্রতিবাদ করায় সেখানে হিজাব শক্তি ভাস্কর্য হচ্ছে ব্রিটিশদের ট্যাক্সের টাকায়! সব রাজনীতি! দ্রুত বংশ বিস্তার করা সম্প্রদায়ের ভোট দরকার পার্লামেন্টে যেতে হলে। তাই পশ্চিমে হিজাব-বোরখা-মুহাম্মদ বারবার সাদাচামড়া ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদদের প্রশংসা পায়।
আসল জিনিসটি কিন্তু সবাই এড়িয়ে যায়। এই যে এত কিছু, তার মূলে কে? কুরআন হাদিস? এগুলো কার নামে চলে? মুহাম্মদ! তাহলে আসল কালপ্রিট কে?
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................