এমন দিন আসবে খুব শীঘ্রই, জাতীয় সংগীত গাওয়ার মত কোন ছেলেমেয়ে খুঁজে পাবেন না! হারমোনিয়াম বাজাতে পারে এমন মুসলিম ছেলেমেয়েই এখন পাওয়া দুষ্কর। তখন জাতীয় সংগীত গাইবে কে? হিন্দুদের তো আগেই দেশছাড়া করে ফেলবেন। ‘ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা’ তো আপনি আপনারাই ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন, সেখানে হারমোনিয়াম তাবলা শিখা হারাম সেই শিক্ষাই তো তারা পেয়েছে।
কবি জসিমউদ্দিন সেই কবে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন নিজের জীবনস্মৃতিতে, হিন্দুদের বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুল যাবার সময় মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতাম কারণ ফুলের বাগান সবার বাড়িতেই থাকত। কারণ ফুল পূজাতে লাগে। কিন্তু মুসলমান বাড়িগুলো শুন্য ফুলহীন কদর্য...।
শহীদ মিনারে ফুল দেয়া মানে কবর পুজা এটা হারাম- এমন কথা খ্রিস্টানরা কোনদিন বলেছে? রমনার বৈশাখের প্রথম প্রহরের গানের অনুষ্ঠানে বোমা মেরেছে কি হিন্দুরা? নাকি মাদ্রাসার মুফতিরা?
আরবের মরুভূমিতে ফুল ফুটো না। প্রচন্ড গরমে উগ্র মেজাজের যাযাবর আরবদের কাছে ফুলের কোন কদর থাকবার কথাও নয়। জান্নাতের বর্ণনায় আঙ্গুর মদ মাংস নারীর লোভ থাকলেও কোন ফুলের বর্ণনা নেই?
বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে হারমোনিয়াম তবলা গিটার চোখে পড়ে না। টিমটিম করে এখনো যারা এসব চর্চা করে তাদের বাসায় এসে প্রতিবেশীরা জ্ঞান দিতে থাকে, আপা, তবলা বাজালে ঐ হাত দুটিতে আল্লা দুটো আগুনের মালা পরিয়ে দিবে...ভাবী জীবন্ত প্রাণীর ছবি আঁকা কিন্তু জায়েজ নাই...মুসলমানের মেয়ে নাচবে এ কেমন কথা?....
ভাবতাছি হিন্দুদের এই দেশ থেকে যেভাবে তাড়ানো হচ্ছে তাতে স্কুলে হারমোনিয়াম তবলাসহকারে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মত কেউ থাকবে কিনা? ফেইসবুকে কত ভিডিও আসে হারমোনিয়াম গিটার তবলা বাজানো ছেলে তাবলীগ থেকে ফিরে এসে এখন সেগুলো ভাঙ্গার ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে...
যেভাবে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মুসলমান মেয়েদের ঘরে থাকতে বলছে স্বামীর হক পূরণ করতে। তখন ডায়াগনিস্ট সেন্টারে নারীদের ব্রেস্ট-জরায়ুর স্কেন করার জন্য তো কোন মেয়ে অপরারেট পাওয়া যাবে না! তো কী করে আপনার জেনানার পর্দা রক্ষা হবে জনাব? হিন্দুদেরও তো প্রতি বছর দুর্গা পুজার সময় তাদের মূর্তি ভেঙ্গেচুড়ে মনের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেশছাড়া করে দিয়েছেন, তখন কে আপনার জেনানার বুকের স্কেন নিবে? দুই একজন হিন্দু নারী না রাখলে আপনার সেবাদাসী জেনানার পর্দা রক্ষা পাবে কি করে? ‘লাভ জেহাদ’ করে সবাইকে মুসলমান বানালে এই কাজগুলো কে করবে?
অবস্থাসম্পন্ন ঘরের লোকজন তাদের বাচ্চাদের কওমি মাদ্রাসায় পড়াচ্ছে ছেলেকে আলেম বানাতে। আলেম তার চোর লুচ্চা বাবা-মাকে জান্নাতে নিতে সুপারিশ করবে। ওদিকে মন দিয়ে লেখাপড়া করে কোন হিন্দু ছেলেমেয়ে যদি প্রাইমেরি স্কুলে চাকরি পায় তো আপনার চোখ টাটায়! হিন্দুরা সব সরকারী চাকরি দখল করে ফেলছে! এই করে করে দেশভাগ হলো। হিন্দুদের পিটিয়ে খেদানো হলো। নিরুঙ্কূশ মুসলমানদের দেশ হলো। তবু চাকরির বাজারে যোগ্য ম্যানপাওয়ার আনতে ভারত শ্রীলংকার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। নিজেরা মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে ওকালতি করবে আর চাকরির বাজারে বিদেশীরা নিয়ে নিচ্ছে বলে কপাল চাপড়াবে। এক পরিবারের সাত সন্তানের সকলেই হাফেজ! সেই পরিবারের লোক দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলছে, হিন্দুরা সব সরকারী চাকরি দখল করে বসে আছে...
এদের নিয়ে হাসবো নাকি করুণা করবো?
এখানে ওখানে দুর্গা প্রতিমা ভাঙ্গা হচ্ছে। মাটির মূর্তির গায়ে কোন ব্যথা লাগে না। কিন্তু মূর্তি ভাঙ্গলে মানুষের গায়ে লাগে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, ভাবীকালে সন্তানদের ভবিষ্যত কল্পনা করে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চরম আকারে নাস্তিক ও হিন্দু ধর্মের সমালোচক মানুষও এভাবে মূর্তি ভাঙ্গতে দেখলে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ তার গায়ে যে অদৃশ্য এক সাইনবোর্ড লাগানো আছে ‘হিন্দু’। এই পরিচয়ে কি এই দেশ আর নিরাপদ থাকবে? সে ভাবে। নাস্তিকরা তাই এভাবে পূজার সময় মূর্তি ভাঙ্গায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। কারণ এটি গণউচ্ছেদের লক্ষ্যে করা হচ্ছে। মানুষজনের উপর আঘাত না করে তাদের বিশ্বাসের উপর আঘাত করলে আপষে দেশ ছেড়ে চলে যাবার রাস্তা দেখবে। সরকারও ভাবছে ওদের ভোটের আমার দরকার নেই। কওমি মাদ্রাসাকে মাস্টার্স সমমান করে দিয়েছি ওরাই আমার ভোটার! আমার আর চিন্তা কী!
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................