ইহুদীরা কি "অভিশপ্ত".....?‌

ইহুদীরা কি "অভিশপ্ত".....?‌🌑🌑

কয়েক বছর আগে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেইনী সমগ্র ইসলামী দুনিয়া কে অনুরোধ করেছিলেন "Boycott anything and everything that originates with the Jewish people."

এবারে দেখে নিন বিজ্ঞান সাহিত্য ও মানব সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে "অভিশপ্ত" ইহুদী জাতির অবদান । এঁদের এই অবদান ছাড়া মানুষ পড়ে থাকতো কয়েক শতাব্দী পিছনে।
১) ফিজিক্সএ ৫১ টি নোবেল পুরস্কার (ফিজিক্স নোবেলের ২৬%)
২) কেমিস্ট্রি তে ৩৬ টি নোবেল পুরস্কার (কেমিস্ট্রি নোবেলের ২০%)
৩) মেডিসিন বা ফিজিওলজি তে ৫৫ টি নোবেল পুরস্কার (মেডিসিন নোবেলের ২৬%)
৪) অর্থনীতি তে ২৯ টি নোবেল পুরস্কার (অর্থনীতি নোবেলের ৩৮%)
৫) শান্তিতে (পিস) ৯ টি নোবেল পুরস্কার( পিস্ নোবেলের ৯%)
৬) সাহিত্যে ১৪ টি নোবেল পুরস্কার ( সাহিত্য নোবেলের ১৩%)
সারা পৃথিবীতে ইহুদি জনসংখ্যা মাত্র ১.৫ কোটির কিছু বেশী (প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ ইসরায়েলে, বাদবাকী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে)।

ইসরায়েলের এক সাংবাদিক প্রশ্ন তুলেছিলেন, খোমেইনীর কথা মত সমগ্র মুসলিম দুনিয়া তো দূরের কথা, শুধুমাত্র ইরান যদি বয়কট করে "anything and everything of Jewish people " তাহলে ইরানের শিশুদের পোলিও টিকা নেওয়া বন্ধ করতে হবে কারণ এটা এক ইহুদী বিজ্ঞানীর আবিস্কার। ইরানের মুসলমানদের সিফিলিস এবং গনোরিয়া রোগ এবং খোমেইনীর হৃদযন্ত্র এবং ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা হয় ইহুদী বিজ্ঞানীদের আবিস্কার করা ওষুধে।ডিপথেরিয়া থেকে কানের ব্যাথা, ব্রেন ড্যামেজ থেকে মনবিজ্ঞানের চিকিৎসা, ইনসুলিন থেকে স্ট্রেপ্টোমাইসিন সবকিছুই ইহুদী বিজ্ঞানীদের আবিস্কার। মেডিসিনে ৫৫ টি নোবেল পুরস্কার তারা এমনি এমনি পায়নি। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া ছাড়া আর যে দেশটি ভারত কে সাহায্য করেছিল সেটি ছিল ইসরায়েল এবং অনেক মুসলিম দেশের আগে ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমেদ চিঠি দিয়ে ইসরায়েল এর স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেন। 

বাংলাদেশের কাছে ইসরায়েল এর স্বীকৃতি তো দূরের কথা, একজন বাংলাদেশী ইসরায়েল ভ্রমণ করতেও পারে না। ২০০৩ সালে বাংলাদেশী সাংবাদিক সালাহ চৌধুরীকে ইসরায়েল ভ্রমণের অপরাধে সাত বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়। যে পাকিস্তান ১৯৭১ এ ৩০ লক্ষ জেনোসাইড করেছিল তার সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে কিন্তু ইসরায়েলের সাথে নয়, যারা মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একদম প্রথম দিকে ছিল। 

ভারতের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে। ভারত স্বাধীন হওয়ার দু-তিন বছর পর বিশ্ববিখ্যাত ইহুদী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন নেহেরুকে অনুরোধ করেছিলেন ইসরায়েল এর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার, কিন্তু নেহেরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী সবারই দ্বিধা ছিল, কারণ এতে নাকি ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বিরূপভাব তৈরী হবে এবং মধ্যপ্রাচের আরব দেশগুলির সাথে সম্পর্ক খারাপ হবে। ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকার পি ভি নরসীমা রাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সব ভন্ডামি তুচ্ছ করে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেই থেকে ইসরায়েল ভারতের এক অকৃত্রিম বন্ধু দেশ। ভারত এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনে ইসরায়েলের যতটা না লাভ হয়েছে, ভারত লাভবান হয়েছে তার কয়েকগুন। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি, কৃষিক্ষেত্র, মহাকাশ গবেষণা, ডিফেন্স টেকনোলজি এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এ ইসরায়েলি সহায়তা ভারতকে সমৃদ্ধ করেছে এবং করছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধে ইসরায়েল একমাত্র দেশ যারা ভারতকে অত্যাধুনিক রাডার এবং স্যাটেলাইট দিয়ে সাহায্য করেছিল। 

ছোট্ট একটি দেশ, জনসংখ্যা মাত্র ৭০-৮০ লাখ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল তৈরী হওয়ার সাথে সাথে তাকে একযোগে আক্রমণ করে পাঁচ-পাঁচটি আরবদেশ -ইজিপ্ট, লেবানন, সিরিয়া জর্ডন এবং ইরাক। জন্মের বছরেই তার মৃত্যু হওয়ার কথা। কিন্তু শিশু কৃষ্ণের কালিয় দমনের মত ইসরায়েল পর্যুদস্ত করে তার থেকে অনেক বড় আক্রমণকারী দেশগুলোকে।

১৯৬৯ সাল এবং Three NO 's -War of Attrition 
"NO peace , NO recognition , NO negotiation - destroy the State of Israel" - ৬৩০ গুন্ আয়তনে বড় আরব দেশগুলি রেজোলিউশন পাশ করলো -ইসরাইলের ধ্বংসই একমাত্র কাম্য। ইজিপ্টের ক্যারিশম্যাটিক প্রেসিডেণ্ট Gamel Abdel Nasser রণহুংকার দিয়ে সাথের আরব দেশগুলিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইসরায়েলের ওপরে। 

যুদ্ধ স্থায়ী হল মাত্র ছ-দিন। আবার শোচনীয় পরাজয়। ইজিপ্টের বিমানগুলিকে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস করে দিল ইসরায়েল। পরাজয়ের গ্লানিতে পরের বছর মাত্র ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগে মৃত্যু হয় গামেল আব্দেল নাসেরের। 

৬ই অক্টোবর ১৯৭৩। আবার আক্রান্ত ইসরায়েল। দিনটা ছিল "ইয়ম কিপ্পুর " -ইহুদী ক্যালেন্ডারে এক পুন্য দিন। উৎসবের আমেজে মত্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রস্তুত ছিল না একযোগে ১২ টি আরবদেশের হটাত আক্রমনের। ঘুরে দাঁড়াতে তাদের সময় লাগলো দু-তিনদিন। ইতিহাসে এটি "ইয়ম কিপ্পুর" যুদ্ধ নামে বিখ্যাত। যুদ্ধের ফলাফল আপনারাই অনুমান করে নিন। 

এবার দেখে নিন গাজা'র গণহত্যার কারণ....
একাধিক আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সাইড এফেক্ট এই গাজার অশান্তি। যেকোন সম্পর্কই খারাপ হয় একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস থেকে। আগেকার PLO এবং এখনকার HAMAS এবং ইসরায়েল কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। ইসরায়েল নিজের বাহুবলে বলীয়ান আর HAMAS কে সাহায্য করে আরব দেশগুলি। HAMAS প্যালেস্টাইনের জনবহুল জায়গা থেকে মিসাইল ছোঁড়ে ইসরায়েল লক্ষ্য করে, টেকনোলোজি তে বলীয়ান ইসরায়েলের আছে মিসাইল শিল্ড -"Iron Dome". , তারা প্রতিহত করতে পারে সেই আক্রমণ। উল্টা মার দেয় ইসরায়েল। যুদ্ধবিমান দিয়ে বম্বিং করে আসে হামাস অধ্যুষিত জায়গায়। ফলাফল, হাজার হাজার নিরীহ প্যালেস্টাইনবাসীর মৃত্যু যদিও ইসরায়েল রক্ষা করতে সমর্থ হয় তার নিজের দেশের নাগরিকদের। 

আরবদের মানসিকতা এখনো সেই "তিন না " এর নির্ভরশীল -"নো পিস, নো রিকগনিশন, নো নেগোশিয়েশন - ডেসট্রয় দ্য স্টেট অফ ইসরায়েল।"
ইসরায়েলের জবাব "....if we were to lay down our arms today, there will be no Israel tomorrow." সুতরাং যুদ্ধ চলছে, চলবে।

ইসরায়েল কি ইহুদীদের দখল করা দেশ?
প্রায় ৩৩০০ বছর আগে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর জেরুজালেম এ বাস করতো আজকের ইহুদীদের পূর্ব পুরুষেরা। হিব্রু ভাষী, একেশ্বর বাদী ইহুদীদের ধর্ম ছিল জুদাইসম (judaism ), বিশ্বে এটাই প্রথম আব্রাহামিক রিলিজিয়ন, প্রতিবেশী ছিল প্যাগান পূজারী আরবরা। ইসলামের আরবে আসতে তখন অনেক দেরি। প্রায় ২০০০ বছর আগে জেরুজালেম দখল করে রোমানরা। ইহুদীরা বিতাড়িত হয় স্বভূমি থেকে এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন সময়ে "ল্যান্ড অফ ইসরায়েল" কে শাসন করে রোমান, খ্রীষ্টান এবং মুসলমান শাসকরা।জেরুজালেম একই সাথে জুদাইসম, ক্রিশ্চিয়ানিটি, ইসলাম, সামারিটানিজম, দ্রুজ এবং বাহাই ধর্মের পবিত্র স্থান। পরে এটি দখলে আসে অটোম্যান সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশদের। গত শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এবং চলাকালীন জার্মানীতে হিটলারের হাতে নিহত হয় প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী, ইতিহাসে যা "হলোকাস্ট" নামে পরিচিত।

অসংখ্য ইহুদী জার্মানী থেকে পলায়ন করে চলে আসে আমেরিকা এবং ব্রিটেনে ।যুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর আমেরিকা, ব্রিটেন এবং আরো বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকে ইহুদীরা তৈরী করে আজকের স্টেট অফ ইসরায়েল, ১৯৪৮ সালে। মানে "ফ্রম ল্যান্ড অফ ইসরায়েল" টু "স্টেট অফ ইসরায়েল"- মাঝে সময় কেটে গেছে ৩০০০ বছর বা তারও বেশী সময় ।

কিন্তু এই স্টেট অফ ইসরায়েল তৈরী করলো এক ভীষণ সমস্যা। ইসলামিক আরব দেশগুলির মাঝে এক আন-ইসলামিক jewish স্টেট মেনে নিতে পারে নি কোন আরব দেশই।১৯৪৮ সালেই তারা আক্রমণ করে এই নব গঠিত দেশকে। সেই যুদ্ধের কথা আগেই লিখেছি। সেই যুদ্ধের ট্রাডিশন সমানে চলছে -জোর যার মুলুক তার -আমাঝখানে মারা পরে নিরীহ মানুষ, পৃথিবীর বাস্তবতা এটাই। 

বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ১৫০-১৬০ কোটি মুসলমান এবং প্রায় ১০০-১১০ কোটি হিন্দু বাস করে। গত ১০০ বছরে জনসংখ্যা বাড়ানো ছাড়া এই বিশাল জন গোষ্ঠীর অবদান কি? শিল্পে, পদার্থ বিজ্ঞানে, রসায়নে, মেডিক্যাল সায়েন্সে এবং অর্থনীতিতে এদের অবদান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। কেউ বর্তমান যুগের পাঁচটা জীবনদায়ী ওষুধের নাম বলতে পারবে না, যা এরা আবিস্কার করেছে। কজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছে হাতের কড়ে আঙ্গুলে গুনে বলে দেওয়া যায়। হিন্দুরা ব্যস্ত ছিল জাতপাত নিয়ে আর মুসলমানরা চিন্তিত কবরে শায়িত মৃত ব্যাক্তির ভবিষ্যত নিয়ে। সেই তালে ইহুদীরা আবিস্কার করে নিয়ে গেলো সবকিছু। 

এরপরও অসুস্থ মস্তিষ্ক এর অধিকারী যারা ইহুদীদের "অভিশপ্ত" বলবেন তাদেরকে বলি: আপনারা অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তার ডাকতে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তার আবিস্কারক ইসরায়েলের এক ইহুদী ইঞ্জিনিয়ার। তার নামটা আর লিখলাম না, জানতে নেটে সার্চ করুন। ও হ্যাঁ, সার্চ ইঞ্জিনটাও এক ইহুদী বিজ্ঞানীর আবিস্কার। যে ফেসবুকে নিত্য ইহুদীদের গালাগাল দেন, সেই ফেসবুকের আবিস্কর্তা মাত্র ৩০ বছরের এক নাস্তিক ইহুদী যুবক, তার নাম মার্ক জুকেরবার্গ। তারা “অভিশপ্ত” জাতই বটে ! 
              সংকলনে ✍🏻©️ স্বপন সেন
               কৃতজ্ঞতা: ফরিদ আহমেদ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted