পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানদের সকলেই গান্ধিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ নয়ত মার্কসবাদী সেক্যুলার। খালি ফিলিস্তিন ইজরায়েল ইস্যুতে, কাশ্মীর ইস্যুতে, ফ্রান্সের বাক স্বাধীনতা ইস্যুতে, তসলিমা নাসরিনের কোলকাতা থাকা ইস্যুতে, সালমান রুশদি ইস্যুতে, বাংলাদেশের রাজাকারদের বিচার ইস্যুতে- তাদের ইয়া লম্বা মোটা ‘মুসলিম লীগ’ ল্যাঞ্জা বের হয়ে পড়ে!
এরকম একজনের পোস্ট হঠাত চোখে পড়লো। সেখানে লেখা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা হচ্ছে ‘আদিবাসী’, ইজরায়েল তথা ইহুদীরা হচ্ছে দখলদার। আরবি নামের প্রগতিশীলটি এই বিতর্ক তুলে দিলে কোন দুষ্টু লোক যদি ভারতে মুসলমানদের আগমন প্রসঙ্গ টেনে হিন্দুদের আদিবাসী হিসেবে দাগিয়ে দেয় তখন তো কান্নাকাটি পড়ে যাবে! মোদির ভারত ভালো না!...
ওমরের শাসনামলে ফিলিস্তিন দখল করার সময় সেখানে ইহুদী ও ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতো। জেরুযালেমে ঢুকে ওমরকে সব দেখিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছিলোও ইহুদী রাব্বিরা। মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ বারবার বলছিলেন, আমি আরব উপদ্বীপ থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করে দিবো... (সহি বুখারী, হাদিস নং- ৩০৫৩, ৩১৬৮)। ওমর তার নবীর ইচ্ছাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। সেই ইহুদীরা সুদীর্ঘ মুসলিম শাসনে দিকে দিকে পালিয়ে যায়। ইউরোপ থেকে ভারত- তারা বসতি গড়ে নিজ জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে। ভারতের মুম্বাইয়ে থাকা ইহুদিদের পূর্বপুরুষরা পালিয়ে এসে এখানেই আবাস গড়েছিলো। সে ইতিহাস কেউ কোথাও বলে না। বললে প্রগতিশীল হিসেবে নামকাটা যাবে। কেউ এই ইতিহাস তুললে তাদের ন্যারেটিভ রেডি আছে- ইজরায়েলে থাকা ইহুদিরা সেই ইহুদিদের বংশধর নয়...।
যে দেশে একজন বহিরাগত ইয়েমেনি পীরের নামে বিমানবন্দর নামকরণ করেছে, বহিরাগত দখলদারদের পরিচয়ে যারা নিজেদের দেশকে ‘পীরআউলিয়া দেশ’ বলে তারা আদিবাসী বিতর্কে যোগ দিলে কেবল হাসিই পায়! তারাই যখন ইজরায়েলকে দখলদার বলে নিজেরা পাহাড় দখল করে আদিবাসীদের খেদিয়ে। এমনকি আদিবাসী সংজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ‘উপজাতি’ বলে কটাক্ষ করে মানুষের জাতিসত্ত্বার মর্মমূলে। এদের একবার বলে দেখুন- রাণা প্রতাপ আদিবাসী নাকি সম্রাট আকবর? এই বাজে বিতর্ক তোলার জন্য কারা দায়ী থাকবে?
ইজরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস সাধারণ নারী শিশুদের হত্যা করেছে ঠান্ডা মাথায়। এটাকে যারা ক্ষুদিরাম বসুর বোমা মেরে ইংরেজ নারীকে হত্যার সঙ্গে তুলনা করে এই হত্যাগুলোকে সমর্থন করেন তাকে কি খাঁচায় আটকে রাখা উচিত নয়? ইহুদি নারী পুরুষ ও শিশুদের টার্গেট করে হামাসের পরিকল্পিত হামলা আর ক্ষুদিরাম বসুর ভুল করে সাধারণ ইংরেজ নারী বহনকারী গাড়িতে হামলা, কোর্টের বিচারে যার জন্য অনুতপ্ত হওয়া, মাত্র ১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলের কর্মকান্ডের সঙ্গে ইসলামী জিহাদী হামাসের বর্বর হত্যাকান্ডের তুলনা করা প্রগতিশীল মুসলিম লীগদের কিউট একটি পন্থা। তারা কখনোই এইসব হামলাকে হাদিস থেকে জাস্টিফাই করবে না, এসব করবে মোল্লা শ্রেণীর মুসলমান। তারা করবে সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ভগবত সিংয়ের সঙ্গে। এমন ভাব করবে তাদের মত ভারতীয় স্বাধীনতাবাদী প্রগতিশীল দ্বিতীয়টি নেই!
ফিলিস্তিনি ইজরায়েল মৃতদের সংখ্যা সমান সমান হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য মাতম করা আন্তর্জাতিক মানবতাবাদের অংশ! হামাস আগে হামলা করেছে এটাও ধাতব্যের নয়! কারণ ওরা ১৪০০ বছর ধরে নির্যাতিত! ওরাই একমাত্র নির্যাতিত নিপীড়িত এরকম কপিরাইট নিয়ে রেখেছে। ফলে হামাস আইএস হামলা করে মেরে ফেললেও তার জন্য মানবতা চিন্তিত নয়। ফিলিস্তিনি হতাহত দেখে নাকি অনেকের রাতের ঘুম হচ্ছে না। এই শ্রেণীর লোকজনকে দেখবেন ইজরায়েলী নারীদের ধর্ষিত উলঙ্গ মৃতদেহে দেখে বেশ তৃপ্তির ঘুম হচ্ছে!
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................