ধর্ম যার যার হলেও,উৎসব এভাবেই সার্বজনীন হয়।

এই বছর দূর্গাপূজার অর্থনৈতিক বাজার ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ধর্মীয় উৎসব কিভাবে সার্বজনীন হয় সেই কথা আবারো বলে গেলাম। 

উৎসব আর ধর্মীয় বিধি  পালন এক জিনিস না।উৎসব সবার হয়। কিভাবে হয় সোজা ভাষায় বলছি।তমুক মন্দিরে বা বাড়িতে দূর্গা পূজা হবে। প্রতিমা বানানো হবে, এটা ধর্মীয় বিধান।  কিন্তু প্যান্ডেল খাটানো, ডেকোরেশন,বিভিন্ন বাতি লাগানো, গেট নির্মান এই কাজটা আর পুরোহিত কিংবা পাল করেন না। চলে যায় লোকাল ডেকোরেটর এর হাত ধরে। এই ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের সবাই অন্য ধর্মের বিশেষত মুসলমান। মন্দির কমিটি টাকা দেয়,ডেকোরেটর সেই অনুযায়ী সাজিয়ে দেয়। 

এখন পূজা হল সনাতন ধর্মের অথচ সেই উপলক্ষে ব্যবসা করল অন্য ধর্মের মানুষ। অর্থাৎ সনাতন ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের আচ এখন একজন অন্য ধর্মের মানুষের উপর পরছে। ঠিক এইভাবে প্রতিটি পূজা মন্ডপ কেন্দ্র করে আশেপাশের সব ধরনের দোকানেই বেচা বিক্রি বেড়ে যায়। অনেক মন্ডপের পাশে তো রীতিমতো মেলা বসে। 

সেখানে জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কেনা বেচা করেন। তাদের অর্থনৈতিক উপার্জন বাড়ে। উৎসব এইভাবেই সবার হয়ে যায়। 

দূর্গা পূজা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি বন্ধ পায়। যে ছেলেটি মুসলমান কিংবা যে শিক্ষক মুসলমান তিনিও এই ছুটি ভোগ করেন।  এদিক সেদিক ঘুরতে যান। পর্যটন স্পটের ব্যবসা বেড়ে যায়। আর এভাবেই শারদীয় উৎসব সার্বজনীন হয়। 

ঠিক তেমনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা আসলে, যিনি কাপড়ের দোকান দেন কিংবা জুতার দোকান দেন।  তিনি হিন্দু হলেও তার দোকানে কেনাকাটা করতে মুসলমানরা যান। আশেপাশে চোখ কান একটু খোলা রাখলেই কথার সত্যতা পাবেন। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য এটাই বড় মৌসুম। 

বেচা কেনা কিংবা লাভ হলে ঐ হিন্দু ব্যবসায়ীর ঘরেও ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহার উৎসবের ছোয়া লাগে।

ঈদ বা কোরবানিতে যে বোনাস দেয়া হয়৷ সেটা হিন্দু মুসলমান সব ধর্মের মানুষ পায়।

 ঈদ কিংবা কোরবানির উৎসব এভাবে সার্বজনীন হয়। 

এইবার আসা যাক শুভেচ্ছা বিনিময়ে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট,  কানাডার প্রধানমন্ত্রী  মুসলমান ধর্মের না হয়েও ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা দেন। কারণ এটা উৎসব এর অংশ। আমাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপলক্ষে,  পূজা উপলক্ষে,শুভেচ্ছা বার্তা দেন। আবার ঈদ উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদীও আমাদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা অন্য ধর্মের হয়েও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আমি মুসলমান, ঈদের সময়ে আমি নামাজ পড়তে ঈদগাহে যাব। কারণ এটা আমার ধর্মীয় আচার। আমার সনাতন ধর্মের বন্ধু আমার সাথে নামাজে দাড়াবে না। কারণ এটা তার ধর্মীয় আচার না। কিন্তু ঈদ  উপলক্ষে ঘোরাঘুরি যখন করব তখন সে ঠিকই আমার সাথে থাকবে। আমার বাসায় সে ঠিকই খেতে আসবে। আমি যদি গরু কোরবানি দেই, তাহলে আমার সনাতন ধর্মের বন্ধুর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে। আমার নিজের পরিবারের মানুষজনকে এটা আমি ছোটবেলা থেকে এটা করে আসতে দেখেছি। এখন মামা,খালা খাসি কোরবানি দেন। নির্দিধায় আমাদের সনাতন ধর্মের বন্ধু বা পড়শিরা খেতে আসেন। 

তদ্রুপ দূর্গা পুজায়, মন্ডপে আমি পূজা দিতে যাব না। সেটা সে দিবে। কিন্তু আমরা ঠিকই একসাথে ঘুরতে যাবে। মন্দির কিংবা প্রতিমা দেখতে যাবে। শুভেচ্ছা বিনিময় করব। 

ধর্ম যার যার হলেও,উৎসব এভাবেই সার্বজনীন হয়। 

এসবের পরেও যারা বলে ধর্ম যার যার উৎসবও তার তার। এরাই হচ্ছে সে বিভেদ সৃষ্টি করা দাংগাবাজ। এরা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির হোতা। এদের সামাজিক ভাবে  বর্জন করা উচিত। 

উৎসব সার্বজনীন.... তাই সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

#দূর্গা_পূজা  #সার্বজনীন_উৎসব  #অর্থনীতি  #বাংলাদেশ 
#ধর্ম_যার_যার_উৎসব_সবার

লিখেছে প্রিয় সহযোদ্ধা Iqbal Mahmud Anik

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted