তুমি চাও মসজিদ থেকে উলু ধ্বনি হোক?

-এই যে দেখো আমাদের বাংলাদেশ! মন্দির মসজিদ একদম পাশাপাশি! কোন সমস্যা হচ্ছে না। এটাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ!

-তা ঠিক। পৃথিবীতে এরকম অসাম্প্রদায়িক দেশ আর একটিও নেই। কিন্তু দুর্গা পুজা যে এখানে হচ্ছে, শুনলাম কাল মসজিদ কমিটি থেকে মন্দির কমিটিকে বলে দিয়েছে আজান ও নামাজের সময় সব রকমের বাজনা সাউন্ড বন্ধ রাখতে?

-আরে, আজান আর নামাজ কতক্ষণ বলো? তারপর সারারাত তো রইল! নামাজের সময় এই সহায়তাকতটুকু করবে না?

-তা তো নিশ্চয়। আচ্ছা এই মন্দিরটার বয়স কত বছর?

-একশো পঁচিশ বছর।

-আর এর গাঁ ঘেষে মসজিদটার?

-১৯৮৮ সালে।

-মানে পঁয়ত্রিশ বছর আগে মসজিদটা মন্দিরের পাশে তৈরি হয়েছে। তখন কি জানা ছিলো না এখানে মন্দির, এখানে ঘন্টা বাজবে, শাঁখ বাজবে, দুর্গা পূজার সময় সন্ধ্যে আরতিতে বাদ্য বাজবে, নামাজের সমস্যা হবে। তারপরও কেন মন্দিরের পাশেই মসজিদ বানানো হলো? পূজা বন্ধ করে নামাজ পড়তে দিতে হবে- এর নাম অসাম্প্রদায়িকতা নিশ্চয়, তবে যদি বলা হয় পূজা শেষে নামাজ পড়তে হবে? তখনই দাঙ্গা! আচ্ছা, এরকম মন্দির মসজিদ পাশাপাশি যতগুলো আছে এদেশে, সবগুলোতেই দেখা গেছে মন্দির হওয়ার বহু বছর পর সেখানে গাঁ ঘেঁষে মসজিদ বানানো হয়েছে। একটিও ঘটনা নেই মসজিদের গাঁ ঘেঁষে মন্দির বানানো হয়েছে! মজা না?

-তোমাদের মত লোকজনই আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে উশকানি দিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করে তোলো!

-পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে অন্যের ধর্মীয় প্রথাকে নিজেদের ধর্মীয় প্রথা দিয়ে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়।

-কেন ভারতে মুসলমানদের গরুর মাংস খেতে বাঁধা দেয়া হয় না?

-গরুর মাংস খেলে মুসলমানদের কয় নেকি লাভ হয়? এই মাংস খাওয়া কি ফরজ নাকি সুন্নত? ভারতে গরুর মাংস খেলে মুসলমানদের মারধোর করা হয় এটি ভারতের বামপন্থীরা ব্যাপক প্রচার করেছে রাজনৈতিক কারণে। সরকারের বিরুদ্ধে ট্রিপিক্যাল বিরোধী দলের রাজনীতি যেমন হয়। বাংলাদেশী ভিডিও ব্লগাররাই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে ব্লগ বানিয়েছে গরুর মাংসের দোকানে দাঁড়িয়ে। তারা আফসোস করছে ভারতে তিনশো রুপিতে গরুর মাংস পাওয়া যায়। বাংলাদেশী রোগীরা ভারতে চিকিত্সা করতে গিয়ে গরুর মাংস কব্জি ডুবিয়ে খায় কারণ ওখানে মাংস সস্তা! এবার বলো তো, তোমরা বাংলাদেশে প্রকাশ্যে শূকরের মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করতে দিবে? হিন্দুদের কাছে গরু নিষিদ্ধ মাংস। এটা দেখতেও ধার্মিক হিন্দুর অস্বস্তি হয়। ভারত হিন্দু অধ্যুষিত দেশ। তবু গরু খাওয়া সেখানে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমরা কি শূকরের মাংস নিয়ে উদারতা দেখাতে পারবে? কোন মুসলিম দেশ দেখাতে পেরেছে? একটি উদাহরণ দাও!

-ভারতের মুসলমানদের নামাজ পড়তে বাঁধা দেয়া হয়!

-এনি রেফোরেন্স?

-এই যে দেখো আমার মোবাইলে আছে...

-এটা তো রাস্তা আটকে নামাজ পড়ার কারণে বাঁধা দেয়া হয়েছে। রাস্তা আটকে নামাজ পড়বে কেন? ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে শুক্রবার রাস্তা আটকে নামাজ পড়ে গাড়িঘোড়া বন্ধ করে কী ভোগান্তির জন্ম দেয় দেখোনি? এসব করা কি সভ্যতা? এটা অন্যরা কেন মানবে? দেশভাগের সুফল হচ্ছে রাস্তাঘাটে গরু ফেলে নোংরা দুর্গন্ধ দিয়ে পরিবেশ দূষিত করা? রাস্তা আটকে নামাজ পড়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া? ‘মুসলমানের দেশ’ বলে এই অরাজকতা স্বাভাবিক বুঝলাম। কিন্তু অমুসলিম প্রধান দেশ এসব সহ্য করবে কেন?

-তোমার কাছে সব দোষ মুসলমানদের, অন্যদের কোন দোষ নেই?

-আরে ভাই, বাংলাদেশে বৌদ্ধ মন্দিরে ইফাতি খাইয়ে, মন্দিরে তারাবী পড়তে দিয়েও যদি আজানের সময় পূজা বন্ধ করতে বলো তাহলে ভালো বলার কোন লাইন খুঁজে পাওয়া যাবে কি? বন্যার কারণে ভারতেও মন্দির খুলে ঈদের নামাজ পড়তে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমে গির্জাতে ঈদের নামাজ পড়তে দেয়ার প্রচুর ঘটনা আছে। একটা উদাহরণ দাও, মসিজদে পুজা করতে দেয়া হয়েছে বিশেষ কোন কারণে, কেবল নিবে বিনিময়ে কিছু দিবে না তা কি হয়? অসাম্প্রদায়িকতা মানে কি কেবল পূজা মণ্ডপ থেকে আজান দেয়া? একবার মসজিদ থেকে উলু ধ্বনি দিয়ে পাল্টা অসাম্প্রদায়িকতা প্রমাণ করে দেখাও তো?

-তুমি চাও মসজিদ থেকে উলু ধ্বনি হোক?

-আরে না! এটা তো খালেদা জিয়া বলেছিলো উশকানি দিয়ে। 

©সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted