ব্রহ্মদেশ নামটাই কেমন ভারতীয় না?

Stay Conneted

ব্রহ্মদেশ নামটাই কেমন ভারতীয় না? এখন তার নাম মায়ানমার। মায়ানমার সম্পর্কে আমার আগ্রহ বহুকালের। শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রেঙ্গুনে কাটিয়েছিলেন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তার এখানে বিয়েও হয় এবং তিনি এক পুত্রের পিতাও হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্ত্রী পুত্রকে হারিয়ে রেঙ্গুন ছাড়েন। রেঙ্গুন মানে আমার কাছে সুভাষ চন্দ্র বসুর রেঙ্গুন, শরৎচন্দ্রের রেঙ্গুন, আলামোহন দাশের রেঙ্গুন। 🌻

স্বাধীনতার আগে বাংলা সাহিত্যে ভাগ্য ফেরাতে রেঙ্গুন যাত্রা বাঙালির অনিবার্য ছিল। এটা একটা গল্প কথা হিসেবেই নিতাম যদি না আলামোহন দাশের আত্মজীবনী পড়তাম। ব্যবসায় সর্বসান্ত হয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছিলেন সেই রেঙ্গুনে গিয়েই। বাঙালির সাহিত্যে ইতিহাসে রেঙ্গুন ফিরে এসেছে বারবার। অনেক বাঙালিকে আজকাল মায়ানমারের শাসক নিয়ে গর্ব করতে দেখি। কিন্তু আজ থেকে একশো বছর আগে ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে এন্টি ইন্ডিয়ান রায়ট কিভাবে ভারতীয়দের সঙ্গে সঙ্গে রেঙ্গুনের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী বাঙালিদের ক্রমশ জমি ছেড়ে আসতে বাধ্য করেছিল সেই ইতিহাস কেউ ভুলেও উচ্চারণ করে না। এই নিয়ে গবেষণা আর ডকুমেন্টেশনও অত্যন্ত কম। তবুও এটা নিয়ে একটা সিরিজ লিখব ক্রমশ।

এখন একটু দেখি মায়ানমারে বিখ্যাত বাঙালিদের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা গুলোর অবস্থা কিরকম। রেঙ্গুন যার বর্তমান নাম ইয়াঙ্গন সেখানকার বোটাটুং নামক যে জায়গায় শরৎচন্দ্র থাকতেন, সেখানে এখন মিলিটারি ক্যাম্প। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়া সত্ত্বেও সেই জায়গার কোনোকিছুর সঙ্গে আর শরৎচন্দ্রের নাম জোড়ার সুযোগ নেই।

১৯৪৪ সালে এই রেঙ্গুন থেকেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ডাক দিয়েছিলেন তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। তখন রেঙ্গুন ছিল জাপানের অধিকারে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আর আজাদ হিন্দ ফৌজের সমস্ত স্মৃতি এবং সৌধ মুছে ফেলেছে রেঙ্গুন। দুর্গা বাড়ি ছিল রেঙ্গুনের বাঙালিদের সেই সময়কার সংস্কৃতির কেন্দ্র। প্রচুর আই এন এ ক্যাম্প ছিল রেঙ্গুনে। স্ট্রিট 49 নামের এক রাস্তা যা ছিল দুর্গা বাড়ির কাছে, সেখানে একটি আই এন এ ক্যাম্প ছিল। এসব এখন ধুয়ে মুছে সাফ।

আং সান সুকির বাবা আং সাং এর সঙ্গে নেতাজীর একটি রেস্তোরাঁতে দেখা হয়। 290, U Wisara Road এর হাউস অফ মেমোরিজ নামের রেস্তোরাঁটি শুধু রয়ে গেছে। এটি দীননাথ পরিবারের সম্পত্তি ছিল, যাকে ব্রিটিশ সরকার কনভিকট করে। নেতাজি যে বাড়িতে সব থেকে বেশি সময় কাটিয়েছিলেন সেটিরও কোনও অস্তিত্ব নেই।

ভারতীয়রা বর্মা মুল্লুক ছাড়লো কেন? এর উত্তরে কি বলছেন ওখানে এখনো বসবাসকারী ভারতীয় পূর্বসুরীরা? কিছু মানুষ ঘর ছেড়েছিলেন বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে ভারতবিরোধী রায়টের ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে। সুপ্রিয়া দেবীর স্মৃতিচারণায় এই সময়ের কথা আছে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে বাকিরা ঘর ছাড়েন। তৎকালীন স্বাধীন ভারতের সরকার নাকি প্যানিক তৈরি করেছিল। এখন বাড়ি না ফিরলে যদি আর বাড়ি না ফেরা যায়! 

ভারতীয়রা যে শূন্যস্থান তৈরি করেছিল সেই জায়গা ভরাট করেছিল কারা জানেন? চীনা, কোরিয়ান এমনকি জাপানিরা অবধি। যে জাপানিদের ব্রহ্মদেশের মানুষ ভয় করতো। ইংরেজ আর ইংরেজদের রেখে যাওয়া সাহেবরা খুব সুক্ষ্মভাবে এভাবেই হিন্দুদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল ব্রহ্মদেশের ভূখন্ড। ইতিহাস খুঁজলে যে মাটির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্নভাবে খুঁজে পাওয়া যায়।🌿

চিত্র 📸 বিপিন বিহারী কাপুরের তোলা ভারতীয়দের রেঙ্গুন ত্যাগের ছবি।

© এক যে ছিলো নেতা 

| #এক_যে_ছিলো_নেতা |

📌 Facebook এর পাশাপাশি আমরা পথচলা শুরু করেছি YouTube এও.. আমাদের কাজ ভালো লাগলে আমাদের channel টি Subscribe করে পাশে থাকবেন.. এই রইলো link 👇 https://appopener.com/yt/19zgtp0em

Post a Comment

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................