☞ " শূন্য আবিষ্কারের ইতিহাস ও মজার ঘটনা"
🔹 আপনাকে যদি পাঁচটি হিসাব করতে হয় তাহলে তিনটিতেই শূন্য আসতে পারে। এত গুরুত্বপূর্ণ এই সংখ্যা আবিষ্কার হয়েছে ভারতবর্ষের মানুষের দ্বারা। আজ জেনে নিই, শূন্য আবিষ্কারের আগে কোন সভ্যতার মানুষ কীভাবে চলতো।
◾সুমেরীয় সভ্যতায় শূন্য:
প্রথম গণনা পদ্ধতি আবিষ্কারের ক্রেডিট যায় সুমেরীয়দের কাছেই। কিন্তু, তারা গণনা করার সময় শূন্যের জায়গা ফাঁকা রেখে যেতো। কিছু লিখতো না। তবে শূন্যের ধারণা এই ফাঁকা জায়গা রাখা থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়।
◾ব্যবিলনীয় সভ্যতায় শূন্য:
সুমেরীয়দের থেকে গণনা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল ব্যবিলনীয়রা। কিন্তু তারা সুমেরীয়দের মত করে ফাঁকা জায়গা রাখতো না। তারা শূন্যের জায়গা দুইটি কোণাকৃতির চিহ্ন (") ব্যবহার করতো। কোনো কোনো জায়গায় একটি কোণাকৃতির চিহ্ন (') ব্যবহার করতো। অর্থাৎ, ব্যবিলনীয়দের হিসাবে, ১৬৫" হলো আমাদের গণনা ব্যবস্থায় ১৬৫০.
◾মিশরীয় সভ্যতায় শূন্য:
তখন ইতিমধ্যে মিশর অনেক এগিয়ে গিয়েছে সবরকম জ্ঞানচর্চায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানেও তারা অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। পিরামিড মাপতে গিয়ে জ্যামিতিও আবিষ্কার করে ফেলেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তারা শূন্যকে চরমভাবে এড়িয়ে চলতো। যেকোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে সমস্যা মিটায় ফেলতো। তারা ভাবতো যে শূন্য হলো শয়তানের সঙ্গী, সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে এটি। তাই, শূন্য এখানেও মর্যাদা পায় নি।
◾গ্রিক সভ্যতায় শূন্য:
গ্রিকরা তো এই শূন্যের ব্যাপারে পুরোই ক্ষ্যাপা ছিলো। শুধু শূন্য না, অসীম কেও তারা সহ্য করতো না। কারণ, অসীম মানে সৃষ্টিকর্তা, জাগতিক সব কিছুই সীমার মাঝেই বিদ্যমান এটাই ছিলো তাদের বিশ্বাস। কথিত আছে, পিথাগোরাস নাকি শুন্য এবং অমূলদ সংখ্যার নাম শুনলেই শাস্তি দিতেন তার গোপন সংঘের মানুষদের। এবার বলি, অমূলদে পিথাগোরাসের কেন সমস্যা।
পিথাগোরাস বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন। তিনি খেয়াল করলেন যখন মূলদ সংখ্যার অনুপাতে টোকা দেওয়া হয় তখন সুরেলা আওয়াজ আসে আর অমূলদের অনুপাতে দিলে বেসুরো আওয়াজ আসে। এই থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন জগতের সব বিশৃঙ্খলা বুঝায় এই অমূলদ সংখ্যা। হিপসাস নামক এক শিষ্য সর্বপ্রথম অমূলদ সংখ্যার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলেন (২ এর বর্গমূল যে একটি অমূলদ সংখ্যা তা হিপসাসই আবিষ্কার করেছিলেন) এবং তা প্রকাশ করার অপরাধে তাকে পানিতে ডুবে স্বেচ্ছা মৃত্যুদন্ড ভোগ করতে হয়েছিল।
◾ভারতবর্ষে শূন্য:
অন্য জায়গায় শূন্য যতটা না বিপদ ও অসম্মানে ছিলো ঠিক ততটাই সম্মানে ছিলো ভারতবর্ষে। ভারতীয়দের কাছে শূন্য মা ব্রহ্মার প্রতীক ছিলেন। আনুমানিক ৪৫৮ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুধর্মের পবিত্র গ্রন্থ ঋগ্বেদে প্রথম শূন্যের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। সংস্কৃতে একে ‘শূনিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ভারতীয়রা এই শূন্যকে ১০ ভিত্তিক সংখ্যামালায় স্থান দিলো। আনুমানিক ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মগুপ্ত নামক এক গণিতবিদ সর্বপ্রথম শূন্যকে সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি শূন্য হিসেবে সংখ্যার নিচে ডট চিহ্ন ব্যবহার করতেন। তবে অনেকে মনে করেন, ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম শূন্যকে সংখ্যার মর্যাদা দেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ আর্যভট্ট। আনুমানিক ৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে শূন্য ভারত থেকে বাগদাদে এসেছিল। আরবরাও তাকে সাদরে তাদের সংখ্যামালায় স্থান দিলো। গণিতবিদ মুসা আল খোয়ারিজমি শূন্য বোঝাতে গোল বৃত্ত ব্যবহার করলেন, যাকে আজ আমরা শূন্য (০) বলে চিনি। তারপর এর নাম দিলেন ‘সিফর’।
এখন যেমন আমাদের দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশে যাওয়া হয়। তেমনি আগেকার সময় সেসব জায়গা থেকে এইসব সভ্যতার দেশে মানুষ জ্ঞান অর্জনের জন্য আসতো। এভাবে এই শূন্য ইউরোপেও চলে গেলো।
ভারতবর্ষের ‘শূনিয়া’ আরবের ‘সিফর’ হয়ে ধীরে ধীরে পশ্চিমে ‘জিরো’তে পরিণত হলো।
✍️ হুজায়ফা আহমদ
সোর্স : রোর
#hatmanscience #science
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................