ইসলাম ধর্মের বয়স দুইশো বছরও হয়নি। ভারতবর্ষে যে ইসলাম আমরা দেখি তার বয়স মেরেকেটে দুইশো বছর। এর আগে মুঘলদের ইসলাম ছিল। সেটা স্থানীয় মুসলমানদের কাছে ভিনদেশী বিজাতীয় কাজকারবার ছাড়া আর কিছু ছিল না। বেশি দূর যেতে হবে না, মীর মোশাররফ হোসন, কবি জসিম উদ্দীনের আত্মজীবনী পড়লে জানা যাবে বর্তমান যে ইসলাম সেটি তারা নিজেদের শৈশবে জন্ম হতে দেখেছেন।
হযরত আলী আর আবু বকর দুজনেই ইসলামের নবী পিছনে নামাজ পড়ার পরও আলী অনুসারীদের নামাজ তিন ওয়াক্ত, আর আবু বকরের অনুসারীদের নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত কি করে তৈরি হলো? মুসলমানরা নামাজে যে দুরুদ পড়ে সেখানে মুহাম্মদ ও তার পরিবারের জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাওয়া হয়। আপনিই বলুন মুহাম্মদ নিজে কি নামাজে এভাবে তার জন্য সবাইকে দিয়ে দোয়া চাইত? তার মানে এই দুরুদ পরবর্তীকালে এড করা হয়েছে।
এই যে কথাগুলো বললাম, এতে তথ্য আছে, তারচেয়ে বেশি আছে ‘অতিতথ্য’! যেটা দিয়ে পাঠক শ্রোতাদের চমকানো যাবে। যেমন ইসলামের জন্ম মাত্র দুইশো বছর। কারণ শরীয়তুল্লাহ বা তীতুমীর সৌদি আরব হজ করতে না গেলে জানতই না ইসলাম বলতে অন্য রকম চেহারা আছে। এই যে রহমান, পারভেজ, আরিফ, আলম এই রকম নাম মুসলমানদের হয় এই ইসলামী রীতির জন্ম মাত্র দুইশো বছর। নইলে এই দেশে সবার নাম শ্যাম দীনু উমেষ এই রকম হতো।...
তো সনাতন বা হিন্দু ধর্মের বয়স দুইশো বছর বলাটা যাদের কাজ তারাও চমকাতে চেয়েছে। এখানে তথ্য আছে কিন্তু সেই তথ্য দিয়ে সংজ্ঞা তৈরি করা হয়েছে ভুল। ইসলাম যেমন শিয়া সুন্নতি আহমদিয়াসহ, চার মাযহাব, ৭২ ফিকরায় বিভক্ত, দুনিয়ার সব ধর্মই তাই। ভারতবর্ষে প্রাকৃতিক ধর্ম বিশ্বাস, দেবদেবী, নানা রকম ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল। এগুলো কোনটাই আলাদা ধর্ম ছিল বলে মনে হয় না। মনে হয় একটা অক্টপাসের অনেকগুলি শুড়ির বা বাহুর মত মতবাদগুলি সাতন্ত্র্য হয়েও একটি অস্তিত্বে আবদ্ধ ছিল। বিদেশী মুসলমানরা আসার পর এই বৃহত অক্টোপাসটা দৃশ্যমান হয়ে উঠে। নিজেদের সমস্ত বাহু হিন্দু ও বিদেশীরা অহিন্দু হিসেবে পরিচিত হয়। ইংরেজ শিক্ষিত বামুনরা যদি আধুনিক সনাতন ধর্মের জন্ম দিয়ে থাকে তো বর্তমান রহমান পারভেজদের ইসলামের জন্ম দিয়েছে তীতুমীর শরীয়তুল্লাহরা।
বাঙালি মুসলমানদের বাইলোজিক্যাল পূর্বপুরুষ এইসব অক্টোপাসের কোন একটা বাহু হলেও এদের মানসিক পূর্বপুরুষ বখতিয়ার খিলজি। ফলে হিন্দু বিরোধীতা জিইয়ে না রাখলে বাঙালি মুসলমান জাতিসত্ত্বা হুমকির মুখে থাকবে। বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদীরা উপনিবেশ চালাতে চাচ্ছে এরকম উদ্ভূট প্রচার জোরেশোরে জনপ্রিয়তা পায় এসব কারণেই। হিন্দু শত্রুতা ছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম লীগ বাঁচবে না, যেমন আরবের মুসলিম লীগ ইহুদী শত্রুতা ছাড়া বাঁচবে না। কাজেই পাকিস্তান হবার পর হিন্দুরা মুসলমানদের জন্য রাজনীতি অর্থনীতি সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দি হবে না- এটা নিশ্চিত করার পরও বারবার বিজেপি আরএসএস ব্রাহ্মণ্যবাদ এইসব বাংলাদেশে জুজু ভয় দেখাতে হবেই। ভারতের মাটিতে পৌত্তলিকতাকে কথার প্যাঁচে মাত্র দুইশো বছর বানিয়ে প্রচার করলে মনে মনে মুহাম্মদ বিন কাশেমকে মনে হবে হিন্দুদেরও চেয়ে আদিবাসী!
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................