ইসমাইলের বংশধররাই নাকি আরব জাতি?

সুষুপ্ত: আচ্ছা সারাহ, আপনি এবং হাজেরা নিজ নিজ পুত্রের কারণে ধর্মীয় কাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন।

সারাহ: হাজেরা ছিল আমার দাসী। আমার স্বামী ইব্রাহিম তাকে গর্ভবতী করে ফেলে। সেকালে দাসীদের নিয়ে মালিক এসব করবে এ আর নতুন কী?

সুষুপ্ত: হাজেরার সেই সন্তানের নামই তো ইসমাইল?

হাজেরা: জ্বি, আমার ছেলের নামই ইসমাইল।

সুষুপ্ত: ইসলামিক বর্ণনা অনুযায়ী আমরা শুনেছি যে ইব্রাহিমের সবচেয়ে প্রিয় ছিল তার পুত্র ইসমাইল। তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো...


হাজেরা: আল্লা মালুম ইব্রাহিম কাকে বেশি ভালোবাসত! ইসমাইল যখন আমার স্তন পান করে এতখানি ছোট তখন ইব্রাহিম আমাকে শিশুপুত্র সহ মরুভূমিতে ফেলে আসে। এমন এক জায়গায় ফেলে আসে যেখানে হেঁটে পারি দিয়ে ফিরে আসা যায় না। অর্থ্যাত নিশ্চিত মেরে ফেলার জন্য আমাদের ছেড়ে আসা হয়। এর নাম ভালোবাসা?...আমার সতীনকে জিজ্ঞেস করে দেখেন ইব্রাহিম কাকে ভালোবাসতো?

সারাহ: আমি তোর কোন কালের সতীন হইরে গতরখাকি...

হাজেরা: ইসলাম আমাকে ইব্রাহিমের স্ত্রী বলেছে।

সারাহ: বটে! স্ত্রী হলে তোকে আমার কথায় মরুভূতিতে ফেলে আসবে কেন? সমাজ ছিল না? লোকজন বাঁধা দিতো না এতবড় অন্যায়ে? দাসী বলেই কেউ ফিরে তাকায়নি। ...সেকালের নিয়ম অনুযায়ী দাসীর পেটের সন্তান অবৈধ। ফলে ইব্রাহিমের আসলে ইসমাইলকে প্রিয় পুত্র মনে করার কোন কারণই নেই।

সুষুপ্ত: হাজেরাকে মরুভূমিতে ছেড়ে আসার পর আপনি গর্ভবতী হোন। আপনার সেই পুত্রের নাম ইসহাক।

সারাহ: হ্যাঁ, ইসহাক। ইব্রাহিমের সেকালের নিয়ম অনুযায়ী বৈধ উত্তরাধিকার। সমাজ তাকেই ইব্রাহিমের একমাত্র পুত্র মনে করত। ইসহাকের পুত্রের নাম ইয়াকুব। বাইবেল তাকেই ইজরাইল বলা হয়েছে। এখন এই নামে একটা দেশ হয়েছে ওখানে। ইয়াকুবের বংশধরদেরই ইহুদী বলা হয়।

সুষুপ্ত: ইসমাইলের বংশধররাই নাকি আরব জাতি?

হাজেরা: হায় আল্লা, আরবরা কি তবে ইব্রাহিমের অবৈধ সন্তানের বংশধর?

সারাহ: ইব্রাহিম হাজেরা ও তার পুত্রকে মক্কায় ছেড়ে এসেছিলো এর কোন বাস্তবতা নেই। সেকালে জেরুজালেম থেকে হাঁটা পথে বা উটে চড়ে মক্কা যাওয়া এতটুকু একটা শিশুকে নিয়ে সদ্য প্রসূতি একজন নারী আড়াই হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব? ইব্রাহিম হাজেরাকে আশেপাশে কোন মরুভূমিতে ফেলে এসেছিল নিশ্চিত।

সুষুপ্ত: মক্কার প্রসঙ্গটা তাহলে এলো কি করে?

সারাহ: ওরে ঢ্যাঁমনা, এটাও বুঝো না! মুহাম্মদ যে নবী এর ভিত্তি কি? মুহাম্মদ দাবী করেছে সে হচ্ছে বাইবেল বর্ণিত যে নবী আসার কথা সেই নবী। মুহাম্মদ পৌত্তলিক ঘরে জন্ম নিয়েছে। তাকে ইব্রাহিমের বংশধর হতে হবে। সেখান থেকেই এই গল্পের জন্ম।

হাজেরা: এই জন্যই আমার ছেলে ইসমাইলকে কুরবাণী দিয়েছিল ইব্রাহিম। তাই আল্লা খুশি হয়ে তার বংশে আরো নবী ও বরকত দানের কথা বলেছিলেন। মুহাম্মদ হচ্ছেন সেই নবী।

সুষুপ্ত: কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও নেই ইব্রাহিম ইসমাইলকে কুরবাণী দিয়েছে। মুসলমানরা এটা পেলো কোত্থেকে?

সারাহ: তুমি ঠিক বলেছো, ইসমাইলকে কুরবাণী দিয়েছিল এটা কোথাও বলা নেই। না কুরআনে না হাদিসে। কিন্তু বাইবেলে কিন্তু স্পষ্ট করে ইসহাকের নাম বলা হয়েছে তাকে কুরবাণী দিতে নিয়ে গিয়েছিল ইব্রাহিম।

হাজেরা: আমি শুনেছি ইহুদীরা বাইবেল বিকৃত করে ফেলে ইসহাকের নামটা সেখানে লিখে দিয়েছে...

সারাহ: মুহাম্মদের জন্মের হাজার বছর আগে লেখা বাইবেল কেন বিকৃত করে ইসহাকের নাম লেখা হবে? বাইবেল কি এক কপি ছিল? হাজার হাজার হাতে লেখা কপি ছড়িয়ে পড়েছিল। এমন একটি কপি কি পাওয়া গেছে সেখানে ইসমাইলের নাম ছিল? তা কুরআনে ইসমাইলের নামটা লিখতে কে মানা করেছিল?

হাজেরা: আমি আরো শুনেছি কুরআন পড়লে মনে হবে ইব্রাহিম আসলে ইসমাইলকেই কুরবাণী দিয়েছিল।

সুষুপ্ত: মনে করা ধরে নেয়া তো কোন দলিল নয়। ইসলাম হচ্ছে দলিল ভিত্তি ধর্ম। কুরআনে বেহুদা আবু লাহাবের নাম আছে অথচ কাকে কুরবাণী দেয়া হয়েছে তার নামটাই নেই!

সারাহ: দেখো, কুরআনের আস সাফাত সুরার ৯৯-১১১ আয়াতে বলা হয়েছে কোন নাম উল্লেখ না করে, অতঃপর শিশুটি হাঁটাচালা বয়সে উপনিত হলে ইব্রাহিম তাকে কুরবাণী দিতে নিয়ে যায়। কিন্তু হাদিস সহি বুখারী বই-৫৫, হাদিস নং-৫৮৪-তে বলা হয়েছে ইব্রাহিম তার নির্বাসিত পরিজনের কথা মনে পড়ায় তিনি তাদেরকে দেখতে মনস্থির করেন। তারপর তথায় গিয়ে ইব্রাহিম ইসমাইলের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন সে কোথায়? ইসমাইলের স্ত্রী বলল, তিনি বাইরে গেছেন...। এখানে স্পষ্ট পরিজনের কথা মনে উদয় হলে তাদের খোঁজ নিতে যখন ইব্রাহিম যান গিয়ে দেখেন ইসমাইল তখন পরিপূর্ণ যুবক। বিয়ে করে সংসার করছে। এর আগে ইসমাইলের সঙ্গে ইব্রাহিমের দেখা হয়নি সেকথা হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

সুষুপ্ত: এটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কে কুরবাণী হয়েছিল?

সারাহ: গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাইবেল বর্ণিত যে নবী আসবে তাকে ইহুদীদের মধ্য থেকে আসতে হবে। মুহাম্মদ ইহুদী ছিলেন না। ছিলেন আরব। তাকে ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাইলের বংশধর বানিয়ে, ইসমাইলকে কুরবাণী দিয়ে দাবী পোক্ত করা হয়েছে।

সুষুপ্ত: তাহলে কুরআন হাদিসে ইসমাইলের নাম কুরবাণী হিসেবে নেই কেন?

সারাহ: বিষয়টা রহস্যজনক। সম্ভবত ইসলামের প্রাথমিক যুগে সম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে এসব ফাঁক-ফোকড় নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন সুযোগ ছিল না...

সুষুপ্ত: হবে হয়ত...

©সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted