স্বাগতম দেবী আল লাত।

-স্বাগতম দেবী আল লাত।

-তোমাকেও স্বাগতম।

-আপনি ও আপনার দুই বোনের জন্য আমার দুঃখ হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর জন্য, প্রাচীন পৃথিবীর ধর্ম মিথলজির অপূর্ব নিদর্শনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।

-ঠিক বলেছো। গ্রীক রোমানদের মন্দির আজো আছে। তাদের দেব-দেবীদের মূর্তি মানুষ আজো জাদুঘরে দেখতে পায়। সেখানে আমাদের তিন বোনের কোন মন্দির আরবে নেই। ইসলামী সোর্স জানিয়েছে ইসলামের নবী মুহাম্মদ তার শিষ্যদের দিয়ে আমাদের মন্দির ধ্বংস করিয়ে ফেলে।

-তবু পৃথিবী থেকে একেবারে নিশ্চহ্ন করে ফেলতে পারেনি। পৃথিবীতে কিছু বিখ্যাত জাদুঘরে আপনাদের মূর্তিগুলোর নিদর্শন আছে। আপনি তো খুবই প্রাচীন। মেসোপটেমীয়দের পাতালের দেবী ছিলেন। ঐতিহাসিক হেরোডেটাস খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে আপনাকে গ্রীক দেবী আফ্রোদিতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি রোমান দেবী মিনার্ভা আপনিই সেটি অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন।

-আসলে যাযাবর মানুষ স্থীর হওয়ার আগে পশুচারণ ভূমি ও খাদ্যের জন্য ঘুরে বাড়াতো। সঙ্গে তাদের খাবার দাবার গবাদি পশুর সঙ্গে বয়ে বেড়াতো তাদের ধর্ম। মিথলজি। মুখে মুখে চলা ধর্মীয় পুরাণ। ফলে মেসেপটেমীয় পাতালের দেবী আরবে এসে হয়ে গিয়েছিল আল লাত বা গ্রীক দেবী আফ্রোদিতি...।

-আপনাদের তিন বোনের প্রভাব আরবে এতবেশি ছিল যে ইসলামের নবী তার নতুন ধর্মে আপনাদেরও স্থান দিতে বাধ্য হয়েছিলেন?

-হ্যাঁ। মুহাম্মদ একদিন কাবার সামনে আবৃতি করতে লাগল, তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত ও উজ্জা সম্পর্কে? এবং তৃতীয় আরেক দেবী মানাত সম্পর্কে? তাঁরা হলে উচ্চ পর্যায়ের গারানিক(এক প্রকারের পাখি), তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়। মুহাম্মদ এটা পড়েই কাবার ভেতর থাকা আমার মূর্তির সামনে সেজদা দিয়েছিল। এতে কুরাইশরা খুশি হয়েছিল। আসলে কুরাইশদের কিছুতে তাদের ধর্ম থেকে সরানো যাচ্ছিল না। আমাদের জনপ্রিয়তা ছিল সাংঘাতিক। আমাদের তিন বোনের নাম জুড়ে আরবের বিভিন্ন গোত্রের নারী পুরুষদের নামকরণ করা হতো। যেমন আবদুল উজ্জা, হাসান মানাত, আবদুল আল লাত...।

-কিন্তু পরে এই লাইনগুলো তো বাতিল করা হয়?

-হ্যাঁ, তিনদিন পর মুহাম্মদ তার কথা ফিরিয়ে নেন। সে দাবী করে এগুলো শয়তান জিব্রাইলের সুরত ধরে এসে তাকে প্রতারণা করে গেছে। এটাকেই বলা হয় বিখ্যাত ‘শয়তানের আয়াত’ যা ইসলামে একটি বিব্রতকর অধ্যায় যা নিয়ে মুসলমানরা কথা বলতে চায় না। তোমাদের সালমান রুশদী নামের এক লেখককে না মেরে ফেলতে ইরানের এক মোল্লা মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছে?

-আচ্ছা লাত দেবী, আপনাদের এত জনপ্রিয়তা থাকার পরও কি করে ইসলাম আরব থেকে আপনাদের ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল?

-আসলে ধর্ম যখন পুরোহিততন্ত্রে রূপ নেয় সে ধর্ম নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে আনে। কুরাইশদের বণু হাশিম মানে ইসলামের নবীর বংশ ছিল পুরোহিত বংশ। ভারতের ব্রাহ্মণ যেমন। এদের কাজই ছিল পুজা মন্দিরে কাজ করা। এরা নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল করে ফেলেছিল। ফলে আসেপাশে এলাকা যেমন ধরো মদিনা সিরিয়া থেকে হজ করতে যখন লোকেরা আসতো, কুরাইশদের খবরদারীতে তারা ক্ষুব্ধ ছিল। হজ ছিল আরবের প্যাগন মানে মূর্তি পুজারীদের বার্ষরিক প্রধান তীর্থ। এখানে প্রচুর অর্থ উঠত। এসব বণু হাশিম ভোগ করত। এর একটা সংস্কার অনেকের মনে তখন কাজ করছিল। এই সংস্কারবাদীদের আরবে ‘হানিফ’ বলত। এরা পুরোহিততন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলত। উপাসনায় কোন পুরোহিত মধ্যস্থতায় এরা বিশ্বাস করত না। ফলে আরবে ভেতরে ভেতরে ধর্মের ঐক্য ভেঙে গিয়েছিল। শেষে দেখা গেলো একমাত্র কুরাইশ ছাড়া বাকী সবাই পরিবর্তন চাইছে। মুহাম্মদ মদিনায় গিয়ে সেটাকেই কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু তখনো মদিনাবাসী জানত না, মুহাম্মদ আরবের বহু ধর্ম মতের সহায়স্থানকে গলা টিপে হত্যা করতে এসেছে।

-মক্কার পতনের পর আপনাদের মন্দির ধসিয়ে দেয়া হয়।

-মুহাম্মদের দু্র্ধর্ষ এক সৈনিক ছিল খাদিল বিন ওয়ালিদ। সে ইসলাম গ্রহণের পর তার গুন্ডামী চরিত্র কেবল পক্ষ ত্যাগ করেছিল মাত্র। সে এতটাই হিংস্র ছিল, কেবলমাত্র আমাদের উপর শেষদিন পর্যন্ত আস্থা রেখেছিল বলে লোকজনকে নিষ্ঠুরের মত হত্যা করেছিল। বলা হয় মানুষের গলা কাটতে কাটতে তার তরোয়াল বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। এতটাই অমানবিক ছিল বিষয়টা যে ওমরের মত কঠিন হৃদয়ের মানুষও খালিদের বিষয়ে মুহাম্মদের কাছ নালিশ জানিয়েছিল।

-আপনাদের তিন বোনের যে মূর্তি আমি দেখেছি সেখানে দেখা যায় আপনারা একটি রাগী সিংহের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। আরবে সিংহ আসলো কোত্থেকে?

-ঐ যে যাযাবর জাতিদের কথা তখন বললাম...

-আরবে রোমান বা গ্রীকদের মত তাদের পৌরাণিক চরিত্রেদের নিয়ে গর্ব করার কেউ নেই।

-আরবরা তাদের পূর্বপুরুষদের মুছে দিয়েছে ইসলামের মাধ্যমে। অথচ প্রাচীন আরবি কবিতায় এইসব দেবী বন্দনা কাহিনী ছত্রে ছত্রে রয়ে গেছে। দুর্ভাগা আরবরা। আরবদের পৃথিবীবাসী মাথামোটা হিসেবে এখন জানে। অথচ আরবরা ছিল কবির জাত। তারা কবিতা লিখত আর কবিতাকে সবচেয়ে দামী মনে করত। এমন আর কোন জাতি পৃথিবীতে আছে যারা কোন কবিতা পছন্দ হলে তাকে সন্মান জানাতে তাদের প্রধান ধর্মালয়ে সাঁটিয়ে দেয়? আরবরা দিতো। ইমরুল কায়েস আরবের সবচেয়ে বড় কবি। তার একাধিক কবিতা কাবাঘরের দেয়ালে শোভা পেত। সেই আরবরা ইসলাম হাতে নিয়ে নিজেদের হাতে তাদের সমস্ত ইতিহাস লুপ্ত করেছে।

-সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে নিজেদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস ধ্বংস করার না হয় অস্বীকার করার পরম্পরা আজো বিরজমান। বাঙালি মুসলমান তার পূর্ব পুরুষ বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্যকে ঘৃণা করে। ফলে তাদের নিজেদের কোন ইতিহাস নেই। আরবি তূর্কি আফগান দস্যুদের নিজেদের পিতৃপুরুষ মনে করে গর্ব করে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দেবী আল লাত।

-তোমাকেও ধন্যবাদ।

©সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted