নববর্ষ পালন পারস্যের মুসলমানদের থেকে ভারতবর্ষে আমদানি হয়েছে তাই নববর্ষ পালন হারাম নয়- এইভাবে আধা মিছা কথা বলে বাঙালি মুসলমানকে পহেলা বৈশাখ পালন করানো যাবে না। কেন যাবে সেটাই বলি।
হযরত মুহাম্মদের জন্মদিন পালনের পক্ষ বিপক্ষ দুই তড়িকার মুসলমান যখন একে অন্যকে হত্যা করে বোমা মেরে তাদেরকে যদি বলেন নূহ নবীর প্লাবণের পর নতুন করে যে পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল তার খুশি উদযাপনের হাত ধরে নওরোজ আয়োজন হয়ে থাকে। সেই নওরোজ ভারতবর্ষে এসে আমাদের নববর্ষ শিখিয়েছে- তাই নূহ নবীর বিষয় যেখানে জড়িত সেখানে হিন্দুয়ানী কিছু নেই এই রকম পামপট্টি দিয়ে মুসলমানদের ধোঁকা দিতে যে এসব বানায় সে একটা প্রতারক। বৈশাখ থেকে ‘হিন্দুয়ানী’ দোষ সরিয়ে সেখানে নূহ নবীকে আমদানি করে বৈশাখ পালন করতে বলা হচ্ছে ‘মুসলমানদের বৈশাখ’ বানানো। ইসলামপন্থিরা যখন ভাস্কর্য ভাঙা শুরু করেছিল তখন এই প্রজাতিগুলো বলা শুরু করেছিল মূর্তি আর ভাস্কর্য এক না। মূর্তি হচ্ছে পূজা করার জন্য সেটা ইসলামে নিষিদ্ধ। কিন্তু ভাস্কর্য হচ্ছে সৌন্দর্য। অমুক তমুক শরীয়া দেশে ভাস্কর্য আছে... এইসব ঢপ দিয়ে উল্টো মূর্তি ভাঙাকে জায়েজ করে ভাস্কর্য রক্ষা করতে চেয়েছে!
নূহ নবীর মহাপ্লাণ হচ্ছে ইহুদী পুরাণ। মৌলিক কোন পুরাণ নয়। এটা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রচলিত মহাপ্লাবণের গল্প থেকে এসেছে। সেই গল্পে মহাপ্লাবণের সংবাদ নলখাগড়ার কাছ থেকে এক লোক জানতে পেরে বিশাল বড় এক নৌকা বানিয়ে প্রাণীজগতকে রক্ষা করেছিলো। সেই গল্প পরে নূহ নবী হয়ে ইহুদী পুরাণে আসে। কুরআন সেখান থেকে কপি করে। তাহলে কেবলমাত্র নূহ নবীর কথাটা বলা মানে তথ্য সন্ত্রাস করা। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার লোকজনের ধর্ম কি ছিল? মূর্তি অগ্নি উপাসক। এই যে নওরোজ সেটা তো পৌত্তলিক পারস্যবাসীর উত্সব। তারা ইসলামী উপনিবেশে ধর্ম হারিয়েছিল। কোন ইরানীকে নওরোজ পালন করতে নূহ নবীর গল্প শোনাতে হয় না। ইরান থেকে তাবলীগ করতে আসা একটা পাক্কা মোমিন অবশ্য আমাকে বলেছিল, নওরোজ বিদাত। যাই হোক, ধর্ম দিয়ে কাউকে বৈশাখ চৈত্র সংক্রান্তি পালন করানো যাবে না। শবে বরাতটাই বাংলাদেশ থেকে মুছে গেলো! এটা তো খাঁটি ইসলামী পার্বণ ছিল। তাহলে এটা ম্লাণ হয়ে গেলো কেন? কারণ তাদের নবীর সাহাবীদের কেউ শবে বরাত চিনত না! অথচ এই শবে বরাতে বাজি পোড়ানো, হালুয়া রুটি খাওয়ানোর মানে হচ্ছে ইমাম মেহেদির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আনন্দ উদযাপন করা। এটা বলে কি শবে বরাত বাঙালি মুসলমানকে পালন করানো যাবে? জন্মদিন পালনই তো এই ধর্মে হারাম! মুহাম্মদের জন্মদিনের মিছিলে বোমা হামলার ভয়ে পুলিশ থাকে মুসলমানদেরই ভয়ে। সেই সম্প্রদায়কে নূহ নবী মার্কা ফাঁপড়বাজী করে পহেলা বৈশাখ পালন করতে বলা মতলববাজী!
উদ্দেশ্য বৈশাখ থেকে ‘হিন্দুয়ানী’ গন্ধ সরিয়ে ফেলা। অলরেডি মুসলিম লীগ ১৪ এপ্রিল বৈশাখ ফিক্সড করে সনাতন পঞ্জিকা থেকে আলাদা করে ফেলেছে। হয়ে গেছে ‘হিন্দু বৈশাখ’ আর ‘সরকারী বৈশাখ’। অভিন্ন বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ উত্সব নিয়ে যাতে হিন্দু মুসলমান এক হতে না পারে সেটিই করা হয়েছে তথাকথিত বৈজ্ঞানিক বিশুদ্ধ বাংলা ক্যালেন্ডার যুক্তি দিয়ে। অথচ মুসলমানদের জীবনে বাংলা ক্যালেন্ডারের কোন প্রয়োজন নেই। হিন্দুদের ধর্মীয় জীবনে বাংলা পঞ্জিকা নিত্য প্রয়োজনীয়। সেই তাদের স্বার্থ না দেখে পঞ্জিকা পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালির সঙ্গে যেন অভিন্ন বাঙালি জাতিসত্ত্বা কোনভাবে জেগে না উঠে। অথচ বাংলাদেশের হিন্দুদের পূজার ছুটি দেয়া হয় সনাতন পঞ্জিকা অনুসারেই!
নওরোজ যেমন পৌত্তলিককালে নববর্ষ আয়োজন বৈশাখ তেমনি হিন্দুয়ানী বর্ষবরণ। সম্রাট আকবরের বাপের দাদার পরদাদার জন্মের আগেও, মুসলমান ভারতবর্ষে আসার আগেও বঙ্গের কৃষক বৈশাখ মাসকে চিনত। মাস দেখেই সে ফসল ফলাতো। আকবর সাহেব খাজনা আদায়ের জন্য একটা ক্যালেন্ডার ঠিক করে নিয়েছিলেন মাত্র। ‘হিন্দুয়ানী’ হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্ম নয়। সেই হিন্দুয়ানী আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে। সেটা যার সহ্য হবে না সে দূরে সরে যাবে। তার জন্য নূহ নবী ঢপবাজী করে ইসলামিক বৈশাখ সৃষ্টির স্বপ্নদোষ না দেখাই ভালো।
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................