বিজ্ঞানী নিউটনকে বিজ্ঞান শেখানোর চেষ্টা করাটা কতটা বোকামী হতো বলেন তো? অনেকেই জানেন না, এই মানুষটি কট্টর ধার্মিক ছিলেন। অথচ নিউটনের আবিস্কারগুলো একজন ঈশ্বরের মানুষের উপর ভালো মন্দ রাখার ক্ষমতাকে ধূলিত্সাত করে দিচ্ছিল। মানে নিউটনের সূত্রগুলো প্রমাণ করছিল পৃথিবী চলে ফিজিক্সের কিছু আইনের দ্বারা। এই আইনগুলো লঙ্ঘন করার ক্ষমতা তথাকথিত কোন ঈশ্বরেরও নেই। ফলে তিনি মানুষের কোন ভালো মন্দ কিছুই করতে পারেন না।
অথচ নিউটন খ্রিস্ট ধর্মের উপর সবচেয়ে বেশি লিখেছিলেন। তিনি একজন ধার্মিক খ্রিস্টান ছিলেন। তার আবিস্কারের জন্য তিনি মানুসিক কষ্ট অনুভব করতেন যখন দেখতেন তার আবিস্কার একজন ঈশ্বরের অস্তিত্বকে দুর্বল করে দিচ্ছে...।
ভারতে যেসব বিজ্ঞানী চন্দ্রাভিযানের পেছনে তাদের মেধা খাটালেন তারা রকেট পাঠানোর আগে পূজা-আর্চা করলেন! এইসব বিজ্ঞানীদের রকেট সাইন্সে আমরা বুঝাতে পারবো না। তারাই যদি বিশ্বাস করেন নারকেল ভেঙে যাত্রা শুভ হয় তখন প্রশ্ন জাগবে বিজ্ঞানচর্চা কি মানুষের থেকে ধর্মীয় কুসংস্কার, বন্ধমনা, অযুক্তি দূর করতে পারে? বাংলাদেশের একজন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শমসের আলী কুরআনের মধ্যে ফিজিক্সের ইশারা খুঁজে পান! এরা এতখানি ধর্মান্ধ থেকে গেলো ফিজিক্স পড়েও। কেন?
বিজ্ঞানের আসলে কোন শাখাই নেই যে শাখা ঈশ্বর আছে কি নেই তার অনুসন্ধান করে। তবে লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞানী বিজ্ঞান চর্চা করতে করতেই ধর্মের বক্তব্যগুলোকে ছেলেমানুষী বলে চিহ্নত করেছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল ধর্মীয় বক্তব্যগুলো তারা পড়েছিলেন। মানে ধর্ম নিয়ে তারা স্টাডি করেছিলেন। আইনস্টাইনের বিখ্যাত ‘গড লেটার’ পড়ে জানা যায় তিনি বাইবেলকে শিশুতোষ বলছেন এবং ঈশ্বরকে মানুষের অন্ধকার অজানা মনের ভয় থেকে সৃষ্টি বলে মত দিয়েছেন। এর মানে হচ্ছে আইনস্টাইন ধর্ম পড়েছিলেন। স্রেফ বিজ্ঞান চর্চায় মেতে থেকে তিনি যদি খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে কিছুই না জানতেন, বাইবেল পড়েও না দেখতেন তাহলে কেমন করে আপেক্ষিক তত্ত্ব দিয়ে ঈশ্বরকে নাকচ করে দিতেন?
জামাত ইসলামের বিজ্ঞান চর্চার উপর পত্রিকা আছে। তাদের শিবিরের বিজ্ঞান চর্চার ছেলেরা সেসব কাগজে মহাকাশ চর্চা থেকে বিজ্ঞানের জটিল সব কিছু নিয়েই লেখালেখি করে। ফারসীম মোহাম্মদ বিজ্ঞান চর্চা করার পাশাপাশি নামাজ পড়ে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছে। অভিজিতের খুনের দিনে বইমেলায় এই ফারসীম মোহাম্মদের সঙ্গেই বিজ্ঞান বিষয়ক আড্ডা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোহাম্মদ সাহেবে এশার নামের জন্য সে আড্ডা দেরি হয়ে যাচ্ছিল! অভিজিত রায়ের বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়ে এরকম জামাতী বিজ্ঞান চর্চাকারীদের অন্ধত্বে আঘাত করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ এই জামাতী ছাগুরা বিজ্ঞান কম জানত না।
অভিজিত রায়ের ‘মুক্তমনা ব্লগের’ যত লেখা ছাপা হয়েছে সেখানে তাই ধর্ম বিষয়ক লেখাগুলিই আসলে মুক্তচিন্তা প্রসারে কাজ করেছে। অভিজিত রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি আর ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বই দুটির পাঠক একই রকম ধাক্কা খাবে না। বিশ্বাসের ভাইরাস ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করে। এই বই লেখার পর অভিজিত রায়কে হুমকি ধামকি থেকে শুরু করে মুসলিম লীগের সুফিবাদীদের আক্রমনের শিকার হতে হয়েছিল।
কেবল বিজ্ঞান চর্চা মুক্তচিন্তার প্রসার করতে পারে না। এটাও এক বইয়ের পাঠকদের মত সীমাবদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী বানায়। নাস্তিকদের ধর্মীয় বিষয়ে লেখা পড়েই মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা ইসলাম ত্যাগ করে। অথচ মাদ্রাসাতে তারা এইসবই অধ্যয়ন করে যা নাস্তিকরা তাদের লেখায় ব্যবহার করে। দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এই তফাত ঘটে। অমুসলিমরা মুসলমানদের নিকট জিন্মি স্বরূপ। তাদেরকে জিজিয়া কর দিয়ে মুসলিম দেশে বাস করতে হবে। এটা মাদ্রাসায় পড়ে তার মধ্যে খারাপ কিছু কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু যখন আমার বলি মুসলমানদেরও জিন্মি করে নিরাপত্তা দেয়া হবে জিজিয়া কর নিয়ে, তাদের কোন যুদ্ধ করা লাগবে না, মনে করেন ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামিক আইনের মতই অমুসলিমদের কাছে ‘আমানত’ হিসেবে গণ্য করা হলো, মেনে নিতে পারবেন? এটা কি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান? তখনই চিন্তায় ঘা লাগে।
বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মের বাটপারি বন্ধ করা যাবে না। অলরেডি ‘ইসলামী বিজ্ঞান’ বেরিয়ে গেছে। ধর্মকে সরাসরি আঘাত করতে হবে। একই সঙ্গে একজন প্রকৃত মুক্তচিন্তককে সমস্ত বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তার মধ্যে সাহিত্য অন্যতম। সাহিত্য মানুষকে মানুষ পশুপাখি পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে। সাহিত্যহীনতা একজন মানুষকে শুষ্ক কাঠের মত রসকষহীন করে তোলে।
অভিজিত রায় আমার একজন প্রিয় মানুষ। তবু মুক্তমনায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তার ও ফরিদ আহমেদ নামের মুসলিম লীগের মুক্তমনা শাখার একজন ব্লগার খুবই আপত্তিকর ও অসত্য দাবী করে পোস্ট করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে অন্যের গানের সুর চোর, লেখা চোর বানিয়ে পোস্টে কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই পোস্টে কমেন্টে কুলদা রায়সহ আরো কয়েকজন তথ্য প্রমাণসহ দেখিয়ে দেবার পরও অভিজিত-ফরিদ তাদের ভুল স্বীকার করেননি। এটা ঘটেছে রবীন্দ্র সাহিত্য থেকে বহু বহু দূরে থাকার কারণে। রবীন্দ্র সাহিত্যের সমালোচনা করতে হলোও গোটা রবীন্দ্রনাখ পড়তে হয়।
আমার নিজের মত হচ্ছে নাস্তিকদের সাহিত্য পাঠ জরুরী। তাদের ইতিহাস পাঠ জরুরী। নোয়া হারারি ‘সেপিয়েন্স’ পড়লে কি আপনি বুঝতে পারেন না মানুষটি কি পরিমাণ সাহিত্য ইতিহাস পাঠ করেছেন?
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................