তবুও বিজ্ঞানময়গ্রন্থ বানাতে হবে!!

তবুও বিজ্ঞানময়গ্রন্থ বানাতে হবে!!

সম্প্রতি একজন একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর একটি প্রচারণা আমার ইনবক্সে দেন। এই পোস্ট নাকি ভাইরাল হয়েছে৷ তিনি এগুলোর ব্যাখ্যা জানতে চান। এর ব্যাখ্যা কী দিবো? বরং ওনাদের অনুবাদই প্রকৃত আয়াত তুলে ধরতে পারি। মিলিয়ে দেখতে পারেন প্রকৃত বিষয়টি আসলে কী। ওরা কি সত্য তথ্য দিবে? ওরা মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে কোরানের আয়াতকে বিকৃত করতে পারে অনায়াসেই৷ ওই প্রচারণার শুরুর বাক্যটি নিচে দিলাম:

"ভাগ্যিস বিজ্ঞান এসব আবিষ্কার করেছিল; নইলে জানাই যেত না যে কোরানে আগেভাগেই এতকিছু বলা আছে!!! " আমরা দেখে নেই ওনাদের বক্তব্য এবং কোরানের প্রকৃত আয়াত—


১ – বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জেনেছে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা আছে: কতই না কল্যাণময় তিনি যিনি আসমানে নক্ষত্ররাজির সমাবেশ ঘটিয়েছেন আর তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ আর আলো বিকিরণকারী চন্দ্র। 
২ – বিজ্ঞান মাত্র দুশো বছর আগে জেনেছে চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষ পথে ভেসে চলে... সূরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা হয়েছে: আর আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে(১) বিচরণ করে। 
৩ – সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে; মানুষের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যা আজ প্রমাণিত। 
বাস্তবিক আয়াতে বলা হয়েছে: মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলোকে একত্রিত করতে পারব না। কেন নয়, আমি তার আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত সঠিকভাবে বানিয়ে দিতে সক্ষম।
৪ - ‘ বিগ ব্যাং’ থিওরি আবিষ্কার হয় মাত্র চল্লিশ বছর আগে। সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 
বাস্তবিক আয়াতে বলা আছে: যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, তারপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম।
৫ – পানি চক্রের কথা বিজ্ঞান জেনেছে বেশি দিন হয় নি... সূরা যুমার ২১ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা আছে: তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর যমীনে তা প্রস্রবন হিসেবে প্রবাহিত করেন তারপর তা দিয়ে নানা বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা দেখতে পাও হলুদ বর্ণের তারপর তিনি তা খড়-খুটায় পরিণত করেন। এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য।
৬ – বিজ্ঞান এই সেদিন জেনেছে লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি একসাথে মিশ্রিত হয় না। সূরা ফুরকানের ২৫ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। 
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা আছে: মহা কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাহর উপর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (কিতাব) নাযিল করেছেন যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।
৮ – বিজ্ঞান এখন আমাদের জানাচ্ছে পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে। কুরআনের সূরা নামল এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে এই বিষয়ে ধারণা দেয়। 
বাস্তবিক: ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে: আর সুলাইমানের জন্য তার সেনাবাহিনী থেকে জিন, মানুষ ও পাখিদের সমবেত করা হল। তারপর এদেরকে বিন্যস্ত করা হল। এবং ১৮নং আয়াতে বলা হয়েছে: অবশেষে যখন তারা পিপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপড়া বলল, ‘ওহে পিপড়ার দল, তোমরা তোমাদের বাসস্থানে প্রবেশ কর। সুলাইমান ও তার বাহিনী তোমাদেরকে যেন অজ্ঞাতসারে পিষ্ট করে মারতে না পারে’। 
১১- রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। সূরা মুমিনূনের ২১ নং আয়াতে কুরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করে গেছে। 
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা আছে: আর নিশ্চয় গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তাদের পেটে যা আছে তা থেকে আমি তোমাদেরকে পান করাই। আর এতে তোমাদের জন্য প্রচুর উপকারিতা রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা খাও। 
১৩ - ভ্রন তত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( শিশু ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে। ভাবা জায়... কুরআন এই কথা জানিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। ( সূরা নজমের ৪৫, ৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭- ৩৯ নং আয়াত) 
বাস্তবিক সূরা নজমের আয়াত-৪৫ অর্থ : এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী। আয়াত-৪৬ অর্থ : একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়। 
বাস্তবিক সূরা কিয়ামাহর ৩৭ নং আয়াত: তার মৃত্যুর পর আল্লাহ পুনরায় তাকে জীবিত করতে পারবেন না সে এটা কী ভাবে ধারণা করছে? সে কি (মায়ের গর্ভে) নিক্ষিপ্ত শুক্রবিন্দু ছিল না?, ৩৮ নং আয়াত: তারপর সে হল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করলেন ও সুবিন্যস্ত করলেন। আয়াত: ৩৯: অতঃপর তা থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন জুড়ি- পুরুষ ও নারী। 
১৪ - একটি শিশু যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার। ভাবা যায়? ১৪০০ বছর আগের এক পৃথিবীতে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার স্তর গুলো নিয়ে কুরআন বিস্তর আলোচনা করে। যা আজ প্রমাণিত ! ( সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৯ , ৭৬ এবং সূরা ইনসান আয়াত নং ২ ) 
বাস্তবিক সাজদাহ আয়াত নং ৯: তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৭৬: (বাস্তবিক সূরা সাজদাহর মোট আয়াতই রয়েছে ৩০টি ফলে ৭৬ নং আয়াত বলে কিছু নেই)। সূরা ইনসান আয়াত নং ২: আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তাকে পরীক্ষা করব, ফলে আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। 
১৬ – পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দুশ বছর আগে। সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে !! .
বাস্তবিক আয়াতটিতে বলা হয়েছে: তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? আর তিনি সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই চলছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আর নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত। 

আরো কিছু বাক্য থাকলেও তার রেফারেন্স দেননি। যেমন
৭ – ইসলাম আমাদেরকে ডান দিকে ফিরে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছে; বিজ্ঞান এখন বলছে ডান দিকে ফিরে ঘুমালে হার্ট সব থেকে ভাল থাকে। 
৯ – ইসলাম মদ পানকে হারাম করেছে , চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর। 
১০ – ইসলাম শুকরের মাংসকে হারাম করেছে। বিজ্ঞান আজ বলছে শুকরের মাংস লিভার, হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। 
১২ - মানুষের জন্ম তত্ব ভ্রুন তত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে এই কদিন আগে। সূরা আলাকে কুরআন এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগে। 
১৫ – পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী লম্বাটে, কেউ ভাবত পৃথিবী চ্যাপ্টা, সমান্তরাল... কোরআন ১৪০০ বছর আগে জানিয়ে গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার। 

কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে অনবরত মিথ্যাচার করতেই থাকে। আমার জোর করেই জানতে চায় এগুলো জানি কিনা? যদি জবাব দেই তাহলেই তারা গালিগালাজ শুরু করে। আবার যদি চুপ থাকি তাহলেও কথা শুনাবে। তাই জবাব দিলাম না কিন্তু সত্যটা তুলে ধরলাম। পাঠকরাই সত্যটা বের করুক। ওরা মিথ্যা বলতে এতোটাই অভ্যস্ত যে, কোরানের আয়াতকেও বিকৃত করতে ওদের বাধে না৷ কোরান ধর্মগ্রন্থ এবং কোনভাবেই বিজ্ঞানগ্রন্থ নয়৷ তবুও কেন আয়াত বিকৃত করে ওরা চেষ্টা চালায়?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted