ওমর ফারুক শুভর ওয়াল থেকে.........
বীজগণিতের আবিস্কারক খোয়ারিজমি ছিলেন জরাথ্রুষ্টবাদ ধর্মের অনুসারী।মুসলিম সমাজের আরেক বিজ্ঞানী ইবনে সিনাকে তৎকালীন আলেম সমাজ উপাধি দিয়েছিলো কাফের। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত বিজ্ঞানী ছিলেন ইবনে সিনা।
ইবনে সিনার নামে বানানো সকল স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল নিষিদ্ধ করেছিলেন তৎকালীন আলেমরা।ইবনে সিনা ধর্মের যৌক্তিক বিষয়গুলো মেনে নিলেও অযৌক্তিক বিষয়ে সবসময় আপত্তি করতেন।ইবনে সিনা পরকালে বিশ্বাস করতেন না।ইমাম গাজ্জালী তার কিতাবে বলেছেন, ' ফারাবী ও ইবনে সিনার কুফরীর বিষয়ে তার সন্দেহ নেই।' ( সাযারাতুয যাহাব ২/৩৫৩)।
ইবনে সিনা মনে করতেন, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষদের জন্য ইসলামের বিধানগুলো প্রযোয্য নয়, এগুলো সাধারণ মূর্খ মানুষদের জন্য।যেমন, তিনি বলেছেন, মদ বুদ্ধিমানের জন্য হালাল।এই প্রসঙ্গে তিনি তার বইয়ে বলেন, " আমি রাতে বাড়িতে ফিরে আসতাম। যখন আমাকে ঘুম পর্যদুস্ত করতো তখন আমি রাতে মদ্যপান করতাম। শক্তি ফিরে না আসা পর্যন্ত তা পান করতাম।"
ইবনে সিনার বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য তৎকালীন মুসলিম সমাজ তাকে কাফের উপাধি দিয়েছিলো।।
মুসলিম সমাজের আরেক বিজ্ঞানী আল রাযী তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো একজন বিজ্ঞানী/ একজন দার্শনিক কি ধর্মকে মেনে চলতে পারে? তিনি তার জবাবে বলেছেন, কিভাবে একজন বিজ্ঞানী ঠাকুরমার ঝুলির গল্পকথা নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা করতে পারে, বিশেষ করে যে কথা গোঁড়ামি ভরা এবং অজ্ঞানতা ছড়ায়?
১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছিলেন পাকিস্তানী বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম। তিনি জন্মেছিলেন ভারতের জং শহরে।তার ধর্মবিশ্বাসের জন্য পাকিস্তানে তার নাম পর্যন্ত নেওয়া হয়না।অথচ মুসলিম হিসেবে তিনি ছিলেন পৃথিবীতে প্রথম নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। কিন্তু কাদিয়ানী হওয়ার কারণে এই পদার্থবিজ্ঞানী তার নিজ দেশেই সেভাবে মূল্যায়িত হননি।
এই পৃথিবীর মানুষগুলোকে আমার মাঝে মাঝে ভীষণ জটিল মনে হয়। নার্গিস ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী এবং মুসলিম।সঞ্জয় দত্তের বাবা সুনীল দত্তকে বিয়ে করে তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।আপনি অন্নপূর্ণা দেবীর নাম শুনেছেন? জন্মসুত্রে তিনি ছিলেন রুশনারা খান। ইন্দোনেশিয়ায় অভিনেত্রী হ্যাপি সালমা তিনিও তার ইসলাম ধর্ম পাল্টে অন্য ধর্মে দিক্ষিত হয়েছেন।এই ধর্ম পরিবর্তনের ইতিহাস পৃথিবীতে বহু পুরানো। অনেক মুসলিম বিখ্যাত ব্যাক্তি যেমন তাদের ধর্ম পরিবর্তন করে ইহুদী , খ্রিষ্টান ও বাহাই ধর্ম গ্রহণ করেছেন।ঠিক তেমনি অন্য ধর্মের বিখ্যাত ব্যাক্তিরাও তাদের ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর পুত্র হরিলাল মহাত্মা গান্ধী হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আব্দুল্লাহ গান্ধী হয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে যান।শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণকারী ফাতিমা রিফকা বারী মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও পরবর্তীতে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বিখ্যাত সুরকার জাভেদ আখতার, সালমান রুশদি ও সারাহ হাইদার এরা নিজ ধর্ম ইসলাম ছেড়ে এথিজমকে গ্রহণ করেছিলেন।এভাবে যুগে যুগে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিকে আমরা তাদের ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে দেখেছি।এসব নিয়ে আহমরি লাফানোর কিছুই নেই। অমুক ক্রিকেটার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন আর তমুক ক্রিকেটার ইসলাম ধর্ম ছেড়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন এসব নিয়ে লাফালাফির কিছুই নেই। তিনি তার স্বার্থে ধর্ম গ্রহণ বা ত্যাগ করেছেন তথা আপনাদের স্বার্থে নয়। অসংখ্য মুসলিম বিখ্যাত ব্যাক্তি ছিলেন যারা পৃথিবীর কোন ধর্মেই বিশ্বাস করতেন না।আজকে যাদেরকে নিয়ে লাফালাফি করছেন আজ থেকে এক হাজার বছর পূর্বে ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে এতো বড় বড় বিতর্কের জন্ম দিয়ে গেছেন এবং বই লিখে গেছেন তা নিয়ে পৃথিবীতে আজও বিতর্ক চলছে।।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................