আপনি বেদ পড়েছেন ? চার খণ্ড বেদ, প্রতি বেদে চারটি অংশ, প্রতিঅংশে - বেশ কয়েকটি মন্ডল, প্রতি মন্ডলে অনেক শুক্ত, প্রতি শুক্তে অনেক......অনেক.... মন্ত্র, পড়েছেন ? গীতা পড়েছেন ? আঠারো অধ্যায়ে সাতশত শ্লোকের গীতা, পড়েছেন ? আঠারো অধ্যায়ের এক লক্ষ শ্লোকের মহাভারত, পড়েছেন ? সাত খন্ডের, চব্বিশ হাজার শ্লোকের রামায়ণ, পড়েছেন ? আঠারোটি পুরাণ - আরও আঠারোটি উপপুরাণ, পড়েছেন ? একশত আটটি(মতান্তরে ১১২ টি) উপনিষদ - পড়েছেন ? বেদান্ত শাস্ত্র পড়েছেন ? বহু বহু সংখ্যক সংহিতা পড়েছেন ? এরপর চৈতন্য ভাগবত, শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র আরও আরও যত গ্রন্থ আছে - পড়েছেন ? কিংবা এর যে কোন একটাও গ্রন্থ পড়েছেন ?
যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয় - আপনি হিন্দু, যদি আপনার উত্তর না হয় - তাতেও আপনি অবশ্যই হিন্দু !
আপনি প্রতিমা পূজা করেন না বা পছন্দ করেন না ? কোন সমস্যা নেই - বেদ নিরাকার ভগবানের আরাধনাই করতে বলেছে ! আপনি অবশ্যই হিন্দু ! আপনি প্রতিমা(মূর্তি) পূজা করেন ? তাতে ভক্তি রাখেন ? কোন সমস্যাই না - ভগবান নিজেই বলেছেন - "একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি", একই ভগবানকে বিভিন্ন ভাবে ডাকাই যায় ! এবং ভাষ্যকারগণ বিশ্লেষণ করেছেন - "ভগবান = ভ+গ+ব+আ+ন, ভ এ ভূমি, গ এ গগন মানে আকাশ, ব এ বায়ু, আ এ আগুন বা অগ্নি, ন এ নীর মানে জল, অর্থাৎ - ক্ষিতি, অপঃ, তেজঃ, মরুৎ এবং ব্যোম(বোম নয় কিন্তু) এই পঞ্চভূতেই উৎপত্তি এবং এই পঞ্চভূতেই বিলীন ! তাই, প্রথম ভূমি তথা মাটি দিয়ে তৈরী প্রতিমা(মূর্তি) শেষে নীর তথা জলেই বিসর্জন দেওয়া হয় !" এছাড়াও স্বামীজী বলেছেন - " পুতুল পূজা করে না হিন্দু, কাঠ-মাটি দিয়ে গড়া ! মৃন্ময় মাঝে চিন্ময় হেরে, হয়ে যায় - আত্মহারা !!"
আপনি মন্দিরে যান ? উপোস করেন - ভক্তিভরে পূজা করেন ? যদি হ্যাঁ বলেন - তাতেও আপনি হিন্দু, যদি না বলেন - তাতেও আপনি হিন্দু ! শিব চতুর্দশীতে উপোস করেন - দুর্গা পুজোর অষ্টমীতে অঞ্জলি দেন ? কেনো না - ভক্তগণ বলে থাকেন - "পাগলার চৌদ্দ - পাগলীর আট, এই নিয়েই তুই জীবন কাট" ! যদি কোনটাই আপনার দ্বারা সম্ভব হয় - আপনি হিন্দু, যদি সম্ভব না হয় - সমস্যা নেই, আপনি হিন্দু !
আপনি সর্ববিশ্বাসে(রিলিজিয়নে) সমভাব রাখতে চান ? সব বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাই কে সমান দেখতে চান ? অবশ্যই দেখুন - "বসুধৈব কুটুম্বকম - স্বদেশ ভুবনত্রয়ম" ! জগতের সকল প্রাণী আপনার আত্মীয় ! ভগবানও বলেছেন - "শ্রীনয়ন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ" ! জগতের সকল জীবই অমৃতের সন্তান ! আপনি তারই অংশ বিশেষ !
আপনি প্রকৃতি প্রেমী ? গাছ ভালোবাসেন ? সমস্যা নেই ! "বৃক্ষশালী আমরা সয়ারে", গাছ বন্ধুই ! আরও অবাক হবেন - যে সময় এই পৃথিবী বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ, যখন প্রকৃতি শান্তিতে বিরাজমান, যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে লিখতে হয়নি - "দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এই নগর", তখনও আপনার সংস্কৃতি হাজার হাজার বছর পূর্বে - আপনি ও আপনার পরিবেশের কথা চিন্তা করেছে ! হাজার হাজার বছর পূর্বে এই সত্যকে উপলব্ধি করেছেন - আমাদের পূণ্যভূমি'র মুনি-ঋষিগণ ! তাঁরা কয়েক হাজার বছর পূর্বে উপদেশ দিয়েছেন - "বৃক্ষরোপণ"র ! পুরাণে কথিত আছে "অশ্বত্থম্ একং পিচুমন্দম্ একং
ন্যগ্রোধম্ একং দশচিঞ্চিণীকম্।
কপিত্থবিল্বামলকীত্রয়ং চ
পঞ্চাম্ররোপী নরকং না পশ্যেৎ।।"
একটি অশ্বত্থ, একটি নিম, একটি বট, দশটি তেঁতুল, একটি করে কয়েতবেল, বেল ও আমলকী এবং পাঁচটি আম গাছ যিনি রোপণ করেন তাকে কদাচ নরক(অবস্থা) দর্শন করতে হয় না।(ভবিষ্যোত্তর পুরাণ)!
সব ছেড়ে দিয়ে আপনি - কর্ম কে ধর্ম বলতে চান ? অবশ্যই "কর্মই ধর্ম" "যোগশ্চ কর্মাসা কৌশলম" ! ইহাও হিন্দু সংস্কৃতির ঐতিহ্য!
আপনি মনে করেন - পিতা-মাতাই পরম আরাধ্য, বন্ধুত্বই ধর্ম, বিদ্যাই দেবতা ? ঠিকই তো " ত্বমেব মাতা চ পিতা ত্বমেব, ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব ! ত্বমেব বিদ্যা দ্রবিণং ত্বমেব, ত্বমেব সর্বং মম দেবদেব" !
"পিতা ধর্ম, পিতা স্বর্গ, পিতরি পরমন্তপঃ
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা। "
দেশ ও দেশমাতৃকা কে ভালোবাসা আপনার ধর্ম বলে মনে করেন ? ঠিক "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী" তো আপনার সংস্কৃতিরই অংশ, আপনি গর্বিত হিন্দু হতেই পারেন !!!!
আপনি এমন এক সংস্কৃতির প্রতিনিধি - যাঁদের শুরুই "ওঁম শান্তি" ! তাই, আলাদা করে শান্তির পরিচিতি দিতেই হয় না কখনো !
উপসংহারে বলি - "সর্বৈ ভবেন্তু সুখীনঃ, সর্বৈসন্তু নীরাময়াঃ, সর্বৈ ভদ্রানি পশ্যন্তু, মা কশ্চিৎ দুঃখ ভাগ ভবেৎ" ! জগতের সকলে যেন সুখী হয়, জগতের সবাই যেন নীরোগ থাকে - কেউ যেন কষ্ট না পায় !
!! জয় শ্রীকৃষ্ণ !!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................