নাস্তিক স্বামী যখন ধার্মিক।

Stay Conneted

শফিক একটু গান বাজনা পছন্দ করে। কিন্তু তার স্ত্রী হাফসা নামাজকালাম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্বামীকে নিয়ে হাফসার অশান্তির শেষ নেই। লোকটা নামাজ পড়ে না। জোর করে শুক্রবার জুম্মায় পাঠানো হয়। বিয়ের পর পর সন্দেহ হয়েছিলো লোকটা নাস্তিক কিনা। পরে দেখেছে শফিক নাস্তিক না। আল্লারসূলে বিশ্বাস আছে। তবে ধর্মে মন নেই।

হাফসা অবসরে ফেইসবুকে আবু ত্বহা, আজহারীদের ওয়াজ শুনে। স্বামীকে এসব সে জোর করে শোনায়। স্বামীকে সে দ্বিনের দিকে ফেরাবে এটা তার পণ। সে আল্লার কাছে নামাজে বসে কাঁদে আর বলে, হে আল্লা, তুমি আমার স্বামীকে দ্রুত হেদায়েত দান করো। আমি তোমার কাছে আর কিছু চাই না…

হাফসার দোয়া কবুল হয়েছে। হাফসার সেরকমই ধারণা। কেননা হাফসার ফেইসবুক আর ইউটিউবের আবু ত্বহার বয়ানগুলি আস্তে আস্তে শুনতে শুনতে শফিক অভ্যস্থ হতে থাকে। হাফসা দেখে তার স্বামী একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। এক রমজান মাসে সে সেভ করা ছেড়ে দিয়ে দাড়ি রাথা শুরু করল। হাফসা আলহামদুরিল্লাহ বলে জায়নামাজ নিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে বসে। স্বামী হেদায়েত পাওয়ায় সে আল্লার কাছে সন্তুষ্টি জানায়।

শফিক সত্যিই বদলে গেলো। শার্ট-পার্ট পরা ছেড়ে দিয়ে পাঞ্জাবী-পায়জামা ধরলো। নামাজী হয়ে গেলো পাঞ্জাগানা। এখন সে নিজেই বউকে নানা রকম হাদিস পড়ে শোনায়। আগে শফিক বিভিন্ন গানের আসরে যেতো অফিস ছুটির পর। সে কথা স্মরণ করে শফিক এখন তওবা কাটে। এসব দেখে হাফসার চোখ খুশীতে চিকচিক করে উঠে।

দিন যেতে লাগলো দিনের নিয়মে। শফিক এখন পাক্কা একজন মুসলমান। তার জীবনের প্রতিটি ক্ষণ এখন কুরআন ও হাদিস অনুসারে চলে। হাদিস কুরআন পড়ে, আলেমদের সঙ্গে মিশে শফিক একজন প্রকৃত মুসলমান হয়ে উঠেছে। একদিন শফিক রাতের বেলা শোয়ার সময় হাফসাকে বলল, বিবি (আগে শফিক বউকে হাফসা নামের ডাকতো, এখন ইসলামী আদবে বিবি ডাকে), সংসারে তোমাকে সহযোগীতা করার জন্য একজন দরকার। আমারও সেবা প্রয়োজন। তাই আমি ঠিক করেছে আরেকটি বিয়ে করবো ইনশাল্লাহ।…

হাফসা প্রথমে মনে করলো নিশ্চয় শফিক তার সঙ্গে রাতদুপুরে মশকরা করতে এসব বলছে। কিন্তু পরক্ষণেই সে বুঝে গেলো শফিক মশকরা করছে না্! হাফসার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তুমি কি বললা? তুমি কি করবা?

শফিক কুরআন ও হাদিস থেকে দেখিয়ে দিলো শফিকের আরেকটি বিবি গ্রহণে কোন নিষেধ নেই। এবং একজন মুমিনা নারী হিসেবে হাফসাকে বলা হয়েছে আল্লার এই বিধানে তাকে খুশী মনে সম্মতি জানাতে। শফিক বলল, তুমি কি আল্লা সুবাহানাতালার বিধানে ব্যাজার হবে? তুমি কি আবু তহ্বার শায়েখের বয়ান শুনোনি? তাছাড়া কুরআন হাদিস তো আমরা নিজেরাই পড়ি। তুমি কি সত্যটা জানো না?

হাফসা কথা বলতে পারে না। সুরা আহযাব, সুরা তাহরিমে এসব বলা আছে সে দেখলো। সহি বুখারীতে রসূলের বাণী দেখলো। সে বাকহারা হয়ে গেলো। স্ত্রীদের বলা হয়েছে তারা স্বামীর বিবাহকে যেন থুশী মনে মেনে নেয়!

শফিক সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলে। ঘরে এখন শফিকের দুই বউ। শফিক দুজনকে পালা করে সাপ্তাহের ছয়দিন ভাগ করে দেয়। একদিন বিশ্রাম। এটাই সহি নিয়ম। হা্ফসা আগে শপিং করতে যেতো। সেটা অবশ্য আগেই বন্ধ হয়েছিলো। এখন শফিক নিজে তাদের জন্য জামাকাপড় কিনে আনে। মাহরাম ছাড়া হাফসা এখন কোথাও বের হতে পারে না। তাদের দুটি বাচ্চা দুটোকে স্কুল থেকে এনে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়েছে। দিনকে দিন শফিক অতিমাত্রায় ধর্মকর্ম নিয়ে নিমগ্ন হতে থাকলো। পর্যাক্রমে শফিক আরো দুটি বিয়ে করে। সবই কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক। হাফসার চোখের জল দেখে শফিক বিরক্ত হয়। সে তিরস্কার করে বলে, তুমি আল্লা সুবাহানাতালার বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাও?

পরিবার বড় হয়ে গেছে। ঘরের কাজ গেছে বেড়ে। একজন কাজের লোক দরকার। গ্রাম থেকে খুবই গরীব একটি মেয়েকে আনা হলো। শফিক বলে বাঁদি। বাঁদি তার মালিকের জন্য বৈধ। এই যে দেখো কুরআন সুন্নাহতে কি লেখা আছে…

হাফসার সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ এবার ভেঙ্গে গেলো।

-লুইচ্চা, বদমাশ কোথাকার!…

শফিক তিরস্কার করে বলল, তুমি কি জাহেল হয়ে গেলো বিবি? এসব বলে কি তুমি আল্লা সুবাহানাতালা, তার রসূল ও সাহাবাকেরামদের কটুক্তি করছো না? তুমি কি আবু তহ্বা শায়েখের ওয়াজ শোনোনি…

-আমি বিশ্বাস করি না এগুলি আমার ধর্মে আছে! এগুলি যে ধর্মে থাকে তা কি কোন মানুষের ধর্ম?…

-দেয়াদপ মেয়ে কোথাকার! আমার ধর্ম নিয়া আর একটা কথা বললে তোর জান আমি বের করে ফেলবো! আমার ধর্ম, আমার নবী হচ্ছে আমার কলিজা! সেখানে কেউ আঘাত দিলে তার জান আমি নিয়ে নিবো…

-আমি বিশ্বাস করি না ইসলামে এসব আছে…

-তোর মত পাপীষ্ঠার বিশ্বাস অবিশ্বাসে কিছু যায় আসে না। তুই নিজে পড়ে দেখ আমি মিথ্যা বলছি কিনা…

হাফসা স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকে। শফিকের সেই আগের চেহারাটা তার মনে পড়ে। নিজের উরুতে তার তাল ঠুকার ছবিটা চোখে ভাসে। হাফসা তখন তাকে নাস্তিক হিন্দু এসব বলে গঞ্জনা দিতো। আজ মুখ ভর্তি মিশমিশে কালো দাড়ির জঞ্জলের ভেতর শফিকের মুখটায় একটা লোভী তেল চককচে চেহারা ছাড়া কিছু নেই। সে আর সুরে তাল ঠুকে না। সে এখন অবসরে ওয়াজ শোনে…।

©সু ষু প্ত

Post a Comment

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................