জিহাদ ভার্সেস ক্রুসেড:

Stay Conneted

জিহাদ ভার্সেস ক্রুসেড:
------------------------
মুসলিম জাহানের একটি বহুল প্রচলিত মিথ্যাচার হলো ক্রুসেড ছিল সংস্কৃতিবান ইসলামী জাহানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে বর্বর ইউরোপের হামলা। সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দী ইসলামী সম্প্রসারণের স্বর্ন যুগ । প্রথম ক্রুসেডের কাল একাদশ শতাব্দী নাগাদ ,

 যখন নাকি ইসলামী জাহান ছিল শান্ত আর স্থিতিশীল অর্থাৎ তাদের উপরে বিনা প্ররোচনায় আক্রমন করা হয়েছিল । ক্রুসেডাররা চিন্হিত হয়ে থাকে ইউরোপ থেকে আসা বর্বর, কুসংস্কারাচ্ছন্ যাযাবর হিসেবে । প্রচার করা হয়ে থাকে যে, এই বর্বর যাযাবরেরা ইসলামী সংস্কৃতিবান ও নগরকেন্দ্রিক বিশ্বে হামলা চালিয়েছিল । লেখক জন, জে ও’নীল অবশ্য তার বই ‘হোলি ওয়ারিঅর্‌সঃ ইসলাম এন্ড দ্য ডিমাইজ অফ ক্ল্যাসিক্যাল সিভিলাইজেশন’-এ অন্য কথা বলছেন । তিনি স্পস্ট দর্শিয়েছেন যে, "ইসলামের আবির্ভাবের আগে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ সম্পর্কে খ্রীষ্টানদের কোন ধারণাই ছিল না। মুসলমানদের কাছ থেকেই ইউরোপীয়রা এ ধারণা গ্রহণ করেছে। আমি আরো দেখিয়েছি যে, ক্রুসেডগুলো খ্রীষ্টান ইউরোপের পক্ষ থেকে মোটেই বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন ছিল না; বরং ছিল একাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গোটা ইউরোপ দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত মুসলিম অগ্রাভিযান মোকাবেলায় পশ্চাদ্‌বাহিনীর তৎপরতার অংশ। ইউরোপ এমন হুমকি এর আগে কখনও প্রত্যক্ষ করে নাই।"

মুসলিম জাহান প্রচার করে যে, সহিংস,লুটেরা বর্বর ইউরোপের সুবিধাজনক টার্গেট ছিল মুসলমানরা আর পোপের নির্দেশে আভ্যন্তরীণ ধ্বংস সাধন না করে তারা সহজ টার্গেট, ইসলামী জাহানকে বেছে নিয়েছিল । এই মিথ্যাচার নাকচ করে মারক্যুস বুল তার বই ' অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব দি ক্রুসেড্‌স্‌’ এ লিখেছেন : ‘‘ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে লড়াইয়ের (ইসলাম ও খ্রীষ্টান ধর্মের মধ্যে) প্রেক্ষাপট যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে দৃশ্যমান ছিল সেগুলির মধ্যে প্রধান ছিল পোপের শাসন পরিষদ। এর ছিল গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, ভূগোল সম্পর্কে ধারণা, এবং খ্রীষ্টান দুনিয়া ও এর উপর বাস্তব বা কাল্পনিক হুমকি সম্পর্কে ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গীর দীর্ঘ ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এ বিষয়টির উপর জোর দেওয়া উচিত; কারণ, ক্রুসেডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে প্রায়ই ভুলভাবে ১০৯৫ সালের আগের দশকগুলোর সেসব ঘটনাকে গুলিয়ে ফেলা হয় যখন খ্রীষ্টান ও মুসলমানগণ পরস্পরের আক্রমণের মধ্যে ছিল। একটা ধারণা সদা সর্বদা প্রয়োগ করা হয় যে, প্রথম ক্রুসেড ছিল একাদশ শতাব্দীতে ধর্মযুদ্ধের চরিত্র লাভ করা একের পর এক যুদ্ধের পরিণতি; এই যুদ্ধগুলিকে ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ কার্যকর বলা যায় যা ইউরোপীয়দের কাছে ক্রুসেডের অত্যাবশ্যক বৈশিষ্ট্য হাজির করেছিল। এটা অগ্রহণযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গী।" (জনাথন রাইলি-স্মিথ সম্পাদিত দি অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব দি ক্রুসেড্‌স, পৃঃ১৯) ।

এবারে মুসলিম ইতিহাসবিদ কলমচিরা প্রশ্ন করবে: কোন যুক্তিতে বুল স্পেন, সিসিলি এবং আনাতোলিয়ায় একাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত আগেকার খ্রীষ্টান-মুসলিম সংঘাতগুলোকে প্রথম ক্রুসেড থেকে বিচ্ছিন্ন ? সত্য ঢাকতে যত রকমের ত্যানা প্যাঁচানো যায় আর কি ! প্রকৃত সত্য হলো ক্রুসেডের আগের ২০ বছরের মধ্যে গোটা আনাতোলিয়া খ্রীষ্টান বিশ্বের হাত থেকে খোয়া যায় । এই অঞ্চলটা ইউরোপের করিডোর শেষে আর আয়তনে ফ্রান্সের থেকে বড়। ১০৫০ সালে সেলজুক নেতা তোগরুল বেগ আনাতোলিয়ার খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ শুরু করেছিল কারণ তারা খলীফাদের বিরোধিতা করত। যুদ্ধে আনুমানিক ১লাখ ৩০ হাজার খ্রীষ্টান মারা গিয়েছিল। ১০৬৩ সালে তোগরুল বেগ মারা যাওয়ার পর খ্রীষ্টানরা আবার স্বাধীন হলো কিন্তু বেশি দিনের জন্য নয় ! তোগরুল বেগের ভাইপো আল্‌প্‌ আর্‌স্‌লান নিজেকে সুলতান ঘোষণা করে আবার যুদ্ধ শুরু করে। ১০৬৪ সালে আর্মেনিয়ার প্রাচীন রাজধানী আনি ধ্বংস হয় । গোটা আর্মেনীয় জাতি শত শত মাইল দক্ষিণ ও পশ্চিমে গিয়ে কার্যকরভাবে বসতি করতে বাধ্য হয় কিন্তু তুর্কী আগ্রাসন চলতেই থাকে ! ১০৬৬ সালে আর্‌স্‌লান গোটা আর্মেনিয়ার দখল নেয় । এখানে একটা ব্যাপার একদম পরিষ্কার যে তুর্কীরা তখন সাম্রাজ্যের গোটা এশীয় অংশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল । সেনাবাহিনীর প্রতি সম্রাট দশম কন্‌সটেন্টাইনের অবহেলা এর জন্য অনেকটাই দায়ী ।

এই ঘটনাগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে আক্রমণকারী ছিল আল্‌প্‌ আর্‌সলান এবং তার তুর্কী বাহিনী। তার মানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য প্রচারণা করাই মুসলিম জাহানের ক্রুসেডকে সংস্কৃতিবান ইসলামী জাহানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে বর্বর ইউরোপের হামলা বলে চালানো । আর্‌স্‌লানের সু, থুক্কু কুপুত্র মালেক শাহ (১০৭৪-১০৮৪) এশিয়া মাইনর এবং কার্যত বাইযেনটাইনের অবশিষ্ট এশীয় ভূখণ্ডের সবটুকু দখলের কাজ সম্পূর্ণ করে । এর ফলে কন্‌সটান্টিনোপলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পরেছিল । অথচ মুসলিম জাহান কি সাবলীলভাবে সারা বিশ্বে প্রচার করে, ক্রুসেড ছিল প্রথমত এবং প্রধানত পবিত্রভূমি ও জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য খ্রীষ্টানদের প্রচেষ্টা । আদতে ক্রুসেড ছিল অর্ধচন্দ্রের অনুসারীদের দ্বারা বিধ্বস্ত ও দখল করা এশিয়া মাইন মুক্ত করার লড়াই । বাস্তবতা এটাই যে, দশম শতাব্দীর শেষ দিক থেকে ইসলাম সাংঘাতিক আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল যার ফলে পশ্চিমে স্পেন এবং পূর্বে ভারত আক্রান্ত হয় । এই হঠাত জেগে ওঠা ইসলামী আগ্রাসনের অনেক দিক যা একাদশ শতাব্দীর শুরুতে স্পেন ও ভারতে ঘটেছিল, অষ্টম শতাব্দীর ইসলামী সম্প্রসারণের কথা মনে করিয়ে দেয় ।

ক্রুসেড ছিল ইসলামী আগ্রাসনের প্রতিরোধ মাত্র !

রেফ: John J. O’Neill-এর The Crusades: A Response to Islamic Aggression www.islam-watch.org

Post a Comment

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................