পাপ কাউকে ছাড়ে না।

"বাংলা দেশ থেকে আগত ওখানকার সংখ্যাগুরু দের ভারতীয় নাগরিকত্ত্ব" এবং আমার একটি আবেদন
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

কিছুদিন আগে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় দেখেছিলাম, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশী দের, যারা ৫ বছর ধরে ভারতে আছে তাদের নাগরিকত্ব দেবেন। আমার কিছু প্রশ্ন আছে এই বিষয়ে--

১) নাগরিকত্ব কি রাজ্য সরকার দেবে না কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুপারিশ করবে? একজন দ্বায়িত্বশীল প্রশাসকের কি উচিত নয় এই ব্যাপারটা একটু খোলষা করে বলা, যাতে মানুষ সঠিক বুঝতে পারে???
২) বাংলাদেশীদের কাদের দেওয়া হবে?  প্রথমে পুর্ব পাকিস্তান, পরে বাংলা দেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে যে হিন্দুরা এদেশে এসেছেন এবং এখনো আসছেন সেই "আহাম্মুখ হিন্দু উদ্বাস্তু" র দল, আর বাংলা দেশ থেকে যে মুসলমানরা এদেশে এসেছে সেই অনুপ্রবেশকারীরা কি এক পংক্তিতে পড়ে? 

৩) বাংলাদেশ, যা কিনা একসময় পাকিস্তানের এক অংগ রাজ্য ছিলো (পুর্ব পাকিস্তান), সেই পাকিস্তান সৃষ্টির কাহিনী কি সব বিজেপি বিরোধীরা ভুলে গেছেন? মুসলমানেরা হিন্দুদের সংগে এক সংগে থাকতে পারে না, সেই জন্যই মার দাংগা করে মুসলীম লীগ (গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর দাগ এখোনো শুকায়নি),  'কংগ্রেস' দল  এবং আজো যারা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু তাদের  মতাদর্শ নিয়ে চলেন, সেই দলটাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে আমাদের দেশটাকে দুই টুকরো করে দিয়েছিলো।

৪) মাত্র কিছুদিন আগে ( বছর দুই আগে) রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক যে মুসলমান ভদ্রলোককে শিরোপা দিলেন প্রাকাশ্যে অনুষ্ঠান করে, সেই ভদ্রলোকের ঠাকুরদা কবি আল্লামা ইকবাল সর্ব প্রথম পাকিস্তান সৃষ্টির দাবী তোলেন । "দ্বিজাতী ত্তত্ব" অর্থ্যাত হিন্দু এবং মুসলমান দুইটি সম্পুর্ন আলাদা জাতি এবং সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাবে তারা কিছুতেই একসংগে থাকতে পারে না, এই ধারনা ভারতীয় মুসলমানদের মনে ওই ভদ্রলোক প্রথম ঢোকান এবং জিন্না সেই ধারনার ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশটাকে দুই ভাগ করে। তাহলে একদা পাকিস্তানের অংগ রাজ্য, বর্তমানের বাংলা দেশী মুসলমানেরা কেনো এদেশে এসে পাকাপাকি ভাবে থাকতে পারে??????

৫) রাজ্যের পুর্বতন এক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন "বাংলাদেশ থেকে যে মুসলমানেরা এদেশে আসে (তার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সময় বছরে দেড় লক্ষ, এখন নিশ্চয়ই দেড় কোটি) তারা 'ইকোনমিক মাইগ্রেন্ট', ওরা আসুখ। তা শাসক দল ও কি তাই বলেন?? উদবাস্তু আর অনুপ্রবেশকারী দুটো আলাদা প্রজাতি, তাই নয় কি???

৬) পশ্চিম বাংলায়, অর্থ্যাত বর্তমানে টি এম সি শসিত রাজ্যে কি সবাই কাজ কর্ম করে দুধে ভাতে আছে? এই প্রদেশের যুবক যুবতীরা, ঘরের বৌ মায়েরা সবাই রোজ দুমুঠো খেতে পায়??? বিরোধীরা কি জানেন জানিনা, আমি জানি অনেকেই দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে দিশহারা। তাহলে, ওই বাংলা দেশী অনুপ্রবেশ কারীদের এখানে নাগরিকত্ব দেওয়ার মতো মাহানুভবতা কি আমরা করতে পারি, না করা উচিত???? যে সব জায়গায় বিজেপি বিরোধীরা সরকারী সম্মপত্তি পোড়াচ্ছেন এবং যে সব নেতা নেত্রীরা এতে মদত দিচ্ছেন, তাদের  ধীমত কি বলে???? 

৭) সেই ১৯৬৪ সাল থেকে ঘরছাড়া "আহাম্মুখ উদবাস্তু"র জ্বালা সয়ে বেড়াচ্ছি। এক সময় খেতে না পাওয়ার মতো অবস্থায় পড়ে ( জোতিবাবুর এক অতি প্রিয় কমরেড আমার ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন আমি ওর দল করবো না বলায়, আর আমার ক্ষমতা ছিলো না সেই তালা খোলার) এই প্রিয় দেশটাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম---- প্রতিজ্ঞা করছিলাম, সি পি এম যতোদিন পশ্চিম বাংলা শাসন করবে ততোদিন দেশে ফিরবো না।  ২০০৮ সালে দেশে ফিরলেও গেলাম আন্দামানে, যেখানে সি পি এম বলে কোনো প্রজাতি নেই। ২০১১ সালে ওদের বিদায় হওয়ার পর এলাম পশ্চিম বঙ্গে। আমি আমার বিদেশের সব ছেড়ে এমনকি সন্তান সন্ততি, ঘর বাড়ী ফেলে, আমার প্রিয় রাজ্যে  ফিরে এসেছি। কিছু দরিদ্র দের সংগে বাস করে তাদের সুখ দুখের সাথ দিচ্ছি। আপনারা দয়া করে, যাদের জন্য আমার পিতা মাতার ভিটে ছেড়ে চলে এসেছি তাদের এখানে ডেকে এনে আবার আমাকে ঘর ছাড়া করবেন না।

আপনাদের পক্ষে সেটা বড়ো পাপ হবে, আর পাপ কাউকে ছাড়ে না।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted