ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট খুব পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ব্লাসফেমি কোন অপরাধ নয়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট খুব পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ব্লাসফেমি কোন অপরাধ নয়। এবং ফ্রান্সের আইন মেনে ধর্মকে অবশ্যই ব্যঙ্গ করা যাবে। সমালোচনা করা যাবে। কটাক্ষ করা যাবে। কটূক্তি করা যাবে। বিদ্রূপ করা যাবে। ধর্ম নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে। কোন বাধা নেই।  

জ্বী হ্যাঁ। এটাই ইউরোপের সংস্কৃতি৷ ফরাসী বিপ্লবের পরে পুরো ইউরোপে যেই পরিবর্তনের সুচনা হয়েছে, তার ফলাফল। ধর্ম সমর্থনের অধিকার থাকলে, ধর্মের প্রশংসার অধিকার থাকলে, ধর্ম অবমাননাও মানুষের অধিকার। ধর্মকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কটাক্ষ কটূক্তি করাও অধিকার। ইউরোপে ধর্ম অবমাননার সংস্কৃতি বহুবছরের৷ আপনি ধর্ম সম্পর্কে অনুভূতিপ্রবণ হলে ধর্ম অবমাননা দেখবেন না, শুনবেন না, প্রচারে অংশ নেবেন না। সেগুলো না দেখার বা না শোনার অধিকারও আপনার রয়েছে৷ কিন্তু ধর্ম অবমাননা হলে বিচার চাই ফাঁসি চাই শরীয়া চাই অনুভূতি আহত হলো নিহত হলো অনুভূতির হার্ট ফেইল হলো ধর্মীয় অনুভূতিতে ব্যাথা লাগলো বলে কান্নাকাটি করে লাভ নেই। সেরকম হলে কোন ইসলামিক দেশে হিজরত করাই আপনার জন্য উত্তম। আপনার জন্য শরীয়া উত্তম৷ আপনার স্থান ইউরোপ নয়। 

ফ্রান্সের শার্লি এবদোর নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন৷ শার্লি এবদো বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে তাদের ওপর জঙ্গি আক্রমণের পরে। এরকম পুরো ইউরোপে অসংখ্য ধর্ম অবমাননাকারী পত্রপত্রিকা, লেখক, কার্টুনিস্ট আছেন। তারা প্রতিনিয়তই ধর্মের সমালোচনা, ব্যঙ্গবিদ্রূপ, কটাক্ষ, কটূক্তি করেন৷ এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ইউরোপের সরকার বাধ্য থাকে। তারা যেন ভালভাবে ধর্মের সমালোচনা চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য যা প্রয়োজন, সবকিছুই ইউরোপের সরকার করবে। 

কিছুদিন আগে ধর্ম অবমাননার অন্যতম তীর্থ ফ্রান্সে এসাইলাম নেয়া হেফাজতে ইসলামীর হিন্দু শাখার আমীর, এক সুইডিশ খচ্চর আর এক ইঞ্চিমাপা নারীবাদী পাদিয়া ইসলাম হুঙ্কার করে বলেছিল, ইউরোপে ধর্ম অবমাননা নাকি শাস্তিযোগ্য অপরাধ! ধর্ম অবমাননা করলে নাকি ইউরোপ থেকে বের করে দেয়! এটা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন! ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি ধর্ম অবমাননার দায়ে আমার বিচার করবে। কথাগুলো শুনে ব্যাপক বিনোদন পেয়েছি, সেটা বলতেই হবে। এমন নির্বোধ কথাবার্তা আজকাল মোল্লাদের থেকেও শোনা যায় না। এই গরুগাধাগুলো কী খায় কে জানে। এত্ত কমদামী গাজায় টান মারা তো উচিত না। 

এই দিক দিয়ে শেখ হাসিনা, ওলামা লীগ, আওয়ামী লীগ, আল্লামা শফী, জঙ্গি, ওয়াজকারী, জামাতি বামাতি আমাতি এবং আমাদের অনলাইন হেফাজতি বাহিনীর একটি দারুন মিল। এরা প্রত্যেকেই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এদের একই সুর, নাস্তিক দমন করতে হবে। নাস্তিকদের যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। তারা কাজ ভাগ করেও নিয়েছে। একপক্ষ নাস্তিকদের কতল করবে, আরেকপক্ষ নাস্তিক কতলের জাস্টিফিকেশন তৈরি করবে। খেয়াল করে দেখুন, এই পিনাকীর বইয়ের পাবলিশার এবং কাছের লোক আবার সাবেক শিবির ক্যাডার নূর মোহাম্মদ। হেফাজতে ইসলামের বাবু নগরীর প্রিয় খাদেম তো পিনাকী আর এমনি এমনি হয় নি। দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান আর সৌদি তাকে জায়গা দিলো না। ইউরোপের সুযোগ সুবিধা নিয়েই এখন তার জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে। 

আবারো পরিষ্কার করে বলি। ইউরোপে ধর্ম অবমাননা, কটাক্ষ, কটূক্তি, ব্যঙ্গবিদ্রূপ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। ধর্ম অবমাননা, ঈশ্বর অবমাননা, ব্লাসফেমির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। ব্লাসফেমিতে কারো অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না। এটি আপনার মানতে কষ্ট হলে, ইউরোপ আপনার জন্য নয়। আপনি ইউরোপের অংশ নন। আপনার মগজে এখনো সিন্দাবাদের ভুত চেপে বসে আছে। আপনার অনুভূতি আহত হতে পারে, সেটা আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা। এর সমাধান হচ্ছে, আপনার সেগুলো না দেখা। বোঝা গেল? সেটাও সম্ভব না হলে, ইউরোপ ত্যাগ করুন। আপনার অন্য কোন দেশে চলে যাওয়াই উত্তম। 

বার্টার্ন্ড রাসেল বলেছিলেন, প্রতিটি মহান চিন্তা ব্লাসফেমির মত করে শুরু হয়।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted