একটি হিন্দু পরিবারকে কিভাবে তাদের ভিটে মাটি, বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিলো একটু সময় করে পড়ুন।
ঘটনাটি আমার পূর্বোপুরুষের সাথে ঘটেছিলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এবং দেশ স্বাধীনের পর। জেলাঃ রংপুর। থানাঃ বদরগঞ্জ। ইউনিয়নঃ দামোদরপুর। পোস্টঃ শেখেরহাট। গ্রামঃ ব্যাঙ্গডুবি। আমি অন্তর কুমার মহন্ত। আমার পিতামহঃ নিখোঁজ নরেশ চন্দ্র মহন্ত খোকা। খোকার পিতা স্বর্গীয় পূর্ণচন্দ্রবৈষ্ণব। এবং খোকার পিতামহ স্বর্গীয় পদ্মলোচন মহন্ত। মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ণচন্দ্রের নিকট আবাসস্থলহীন এক কামলাকারী ময়মনসিংহ জেলা থেকে কাজের সন্ধানে এসেছিলো নামঃ শাফি উদ্দিন। পিতাঃ হাসমত আলী। পূর্ণচন্দ্র উদার মনের মানুষ সেই অপরিচিত মানুষটিকে তিনি তার বাড়ীতে কাজের সুযোগ করে দিলেন। বাড়ী করার জন্য কিছু জমি দিলেন। সেই শাফি উদ্দিন কাজ করে এবং ধীরে ধীরে তার পরিবারের সকলকে তার কাছে (রংপুরে) নিয়ে আসেন। পূর্ণচন্দ্রের মৃত্যু হয়। তার একমাত্র ছেলে নরেশ মহন্ত খোকা বাবার দায়িত্ব নেন। খোকার ঘরে তখন ১০ জন ছেলে মেয়ে। ৪ বিবাহযোগ্য মেয়েসহ ৬ জন ছেলে। ছেলেগুলো সব কমবয়সী ছিলো। ১৯৭১ সাল যুদ্ধচলাকালীন সময় হঠাৎই খোকা নিখোঁজ হয়। ঘরে বিবাহ যোগ্য মেয়ে চারদিকে হিন্দুদের ওপর জুলুম নির্যাতন হানাহানি মারামারি। খোকার স্ত্রী রাধিকা রাণী মহন্ত একেবারে অসহায়। বাড়ীর বাইরে যেতে পারে না। হিন্দু দেখলেই খানেরা জোরজুলুম খুন করবে। এই দিকে বাজার না করলে ছেলে মেয়েদের পেট ভরবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাফি উদ্দিন তাদেরকে দিনে বাড়ীতে খাবার এনে দেয়। আবার রাতে খান এসেছে বলে গুজব ছড়িয়ে তাদের ভয় দেখায় বাড়ী থেকে বিতাড়িত করে বাড়ী লুট করেন। কখনো গরুর গাড়ীতে করে রাধিকা রাণীকে তার বাপের বাড়ীতে পাঠানো অপচেষ্টা করেন শাফি উদ্দিন। কিন্তু সেখানেও কোনো কাজ হয় না। রাধিকা রাণী স্বামীর বাড়ী ভিটে ছাড়তে নারাজ। শাফি উদ্দিন গঞ্জের হাট থেকে বাজার করে দেয় আর রাধিকা রাণীর কাছ থেকে জমি লিখে নেয়। এছাড়াও রাতে ভয় দেখিয়ে অত্যাচার করে ঘরের সব সোনাদানা অর্থকরী তৈজসপত্র লুট করে। তারা বিভিন্নভাবে রাধিকা রাণীকে ভয় দেখাতো। খান-রাজাকারদের ভয় দেখাতো। সবচেয়ে বেশী ভীত করাতো রাধিকার মেয়েদের নিয়ে। তারা বলতো খানেরা আপনার মেয়েদের তুলে নিয়ে যাবে। আপনি আপনার ছেলে মেয়েদের নিয়ে এখান থেকে চলে যান। তাদের অত্যাচার এতটা বেড়ে গিয়েছিলো যে নিরুপায় হয়ে রাধিকারাণী বিবাহযোগ্য মেয়ে এবং ছোট ছেলেদের নিয়ে স্বামীর ভিটে ছেড়ে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে তার ভাইয়ের বাড়ী তথা জেলাঃ দিনাজপুর। থানাঃ ফুলবাড়ী। ইউনিয়নঃ খয়েরবাড়ী। গ্রামঃ অম্রবাড়ী চলে আসতে বাধ্য হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নরেশ মহন্ত রাধিকা রাণীর কাছে ফিরে আসেন (দিনাজপুরে)। তিনি জানিয়েছিলেন তাকে রাজাকার ভেবে বন্দী করা হয়েছিলো। সবটা শুনে তিনি পরেরদিন সকালেই বের হয় তার পিতৃভূমি এবং বাপ দাদার বাড়ীতে (রংপুরে)। ঐ যে সকালে বেরিয়ে যান তারপর আর ফিরেন নি। এমনকি আজও তার কোনো সন্ধান মেলে নি। এরপর রাধিকা রাণী তার ভাইকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে স্বামীর বাড়ী ভিটেতে গিয়ে দেখেন তার স্বামীর বাড়ী ভিটে শাফি উদ্দিন অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছেন। এইটা নিয়ে তৎকালীন সময়ে দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো লাভ হয়নি। মৃত্যুভয় সহ বিভিন্ন জাল কাগজপত্র দেখিয়ে শাফি উদ্দিন সব ক্রয়য় করেছে বলে সম্পূর্ণ ধামাচাপা দিয়েছিলো এমনকি আজ পর্যন্ত তারা সেখানে অবৈধ দখল করে বসবাস এবং ভোগ করছে। এই হলো বাড়ী ভিটে মাটি হারা এক হিন্দু রাধিকারাণীর গল্প। বর্তমানে তিনি তার বাপের বাড়ী দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বসবাস করছেন।
পোস্টটি পড়ে শেয়ারযোগ্য মনে হলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................