লাভ জিহাদ : এটা কি ?
---------------------------------
ইসলামী জিহাদের বেশ কিছু দিক আছে। এর একটা দিক 'লাভ-জিহাদ' নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানের ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে উত্তাল। লাভ জিহাদের জন্য ১০০ টার মধ্যে ৯০ টা আঙ্গুল ওঠে মুসলমান আপাতঃ প্রেমিকটির দিকে, আর ভিকটিম হিন্দু প্রেমিকা পাবলিকের সেন্টিমেন্ট কুড়োয়। কখনো চিন্তা করে দেখেছেন এই লাভ জিহাদের স্বীকার অধিকাংশ হিন্দু মেয়েই কেন হয় ? হয়, কারণ মেকি প্রগতির বর্ম গায়ে এইসব সেকুলাঙ্গার মহিলারা নিজে যে ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছে তার বেসিকটাই পড়েনি, জানেনি। সোশ্যাল মিডিয়া ভর্তি যে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাগুলো সকল ধর্মেই ভণ্ডামি, সকল ধর্ম সমান বলে সেকুলারিসীম মারায় আর ইন্টারনেটের দৌলতে এদিক ওদিক থেকে কনটেক্সটহীন তথ্য জোড়াতালি লাগিয়ে প্রগতির পোস্ট দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এই সেকুলাঙ্গার নারীর দল তাদেরই ফলোয়ার। যখন প্রেমিক সাজা মুসলমান যুবকটি, সোশ্যাল মিডিয়া ছড়ানো হিন্দু ধর্মের প্রচলিত আবাল সমালোচনাগুলো, প্রেমিকা মেয়েটির সামনে ছুঁড়ে দেয়, তখন মেয়েটি তার কাউন্টার না করে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত নেচে কুঁদে সম্মতি জানায়। ফলাফল ? ফলাফল হলো অবশ্যই রেবতী থেকে রেহানা হয়ে প্রেমিকের তিন নম্বর বিবি হওয়া ! পাঠক, এবারে আপনারা প্রশ্ন করে বসবেন সনাতন ধর্ম কি সমালোচনার উর্দ্ধে ? একদম বৈজ্ঞানিক একটি ধর্ম ? একেবারেই না, কারণ ধর্ম এবং বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক। অনেকে আমাকে বলেন, দাদা আপনি হিন্দুর ঘরে জন্মে হিন্দু ধর্ম নিয়ে সমালোচনা তুলনামূলকভাবে কম করেন। কথাটা সত্যি, কেননা সাবজেক্টের ভেতরে ঢুকে টের পেয়েছিলাম এটা এত সহজ বিষয় নয়। হিন্দু তথা সনাতন ধর্মের সমালোচনার জায়গা কোনো একটা নয়, অনেক কারণ অন্যান্য ধর্মগুলোর মত সনাতন ধর্ম কোনো বিশেষ একটা ঐশী কিতাব নির্ভর নয় অনেক গ্রন্থ সম্বন্বয়ের উপর নির্ভরশীল যার মূল স্তম্ভ সংস্কৃত। তাছাড়া সেমেটিক ধর্মগুলোর মত সনাতন ধর্ম এক থেকে অন্যের ভিন্ন আঙ্গিকে কপি পেস্ট নয় বরং এতে অরিজিনিয়ালিটি অন্যান্য ধর্মের থেকে অনেক বেশী। সনাতন ধর্ম এত প্রাচীন আর এতভাবে সংশোধিত যে এর সমালোচনার সঠিক জায়গায় হাত মারতেই বেশ সময় লেগে যায়। তবে, ধৈর্য নিয়ে পড়লে, এর অন্ধকার দিকগুলোকে সঠিকভাবে চেনা যায়, মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়। এরজন্য নিজেকে বিশাল প্রগতিশীল প্রমান করে সোশ্যাল মিডিয়াতে, কন্টেক্স্ট বিহীন তথ্য জোড়াতালি লাগিয়ে পোস্ট দিয়ে ছুপা ছাগুদের রাস্তায় হাটতে হয়না। আমি অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম এই নিয়ে একটা সিরিজ আকারে লিখবো, কিন্তু বাহবা কুড়ানোর জন্য লিখলে তো হবেনা, সাবস্টেনশিয়াল তথ্য ব্যাক আপ লাগবে। এই পর্যন্ত যত ভেতরে ঢুকতে পেরেছি, তার উপর ভিত্তি করে লেখা শুরু করলাম। সময়ে, সময়ে এই সিরিজ লিখতে থাকবো। আজ সাবজেক্টের সাথে আপনাদের পরিচয় করাই :
হিন্দু ধর্ম বা সনাতন ধর্ম প্রথম যে প্রশ্নটার মুখে পরে, সেটা হলো : হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ কোনটা ? প্রচলিত যে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ, কিন্তু হিন্দুধর্ম শুধুমাত্র বেদাশ্রিত নয়, হিন্দুধর্ম উদ্ভব হয়েছে সংস্কৃত সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডারের সাহায্যে। সেই কারণে হিন্দুধর্ম না বলে সনাতন ধর্ম বলাটাই বোধহয় বেটার। হিন্দুধর্ম কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থকে ঘিরে নয়। সংস্কৃত সাহিত্য ভাণ্ডারের সকল নির্দেশ,গল্প আর কাহিনিই সনাতন ধর্মের চালক বলা যায়। বেদই হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বলে প্রচলিত হলেও, বেদে ধর্মের ভিত্তিতে জীবনযাপন বা উপাসনা করার পদ্ধতি বিশদভাবে নেই । ধর্মভিত্তিক আইন ও সামাজিক রীতিনীতির কথা পাওয়া যায় হিন্দুদের “মনুসংহিতা” বা 'মনুস্মৃতি'তে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ল-বুক বলা যায় । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো, সামাজিক আচার-আচরণ, ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের রীতিনীতি মনুসংহিতা নির্ভর। এখানে প্রচুর আবালামি আছে, যেমন সনাতনী পুরান অনুযায়ী : মনু ব্রহ্মার দেহ থেকে তৈরি হয়েছিল। পৃথিবীতে ব্রহ্মার একমাত্র সোল এজেন্ট মনু। চোদ্দোজন মনু ব্রহ্মার ইচ্ছায় জন্ম নিয়েছিল- স্বায়ম্ভুব, স্বরোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুস, বৈবস্বত বা সত্যব্রত, সাবর্ণি, দক্ষসাবর্ণি, ব্রহ্মসাবর্ণি, ধর্মসাবর্ণি, রুদ্রসাবর্ণি, দেবতাসাবর্ণি ও ইন্দ্রসাবর্ণি। এদের সবাই ধর্মশাস্ত্র রচনা করেছে। মৎস্যপুরাণ মতে ১৪ জন মনুর ভিন্ন নাম পাওয়া যায়-স্বায়ম্ভূব, স্বরোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত বা সত্যব্রত, সাবর্ণি, রোচ্য, ভৌত্যাঃ, মেরুসাবর্ণি, ঋভু, ঋতুধামা, বিষ্কক্সেন। স্বায়ম্ভুব মনু ব্রহ্মার কাছ থেকে স্মৃতিশাস্ত্র পড়ে, শিখে তা শিষ্যদের শিখিয়েছিল। এরপর ভৃগু নামে একজন মনু সেটা ঋষিদের কাছে ব্যাখা করেছিল, যেটা এখন “মনুসংহিতা”।
নিজেকে প্রগতিশীল প্রমান করতে গিয়ে, হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ডে জন্মানো কিছু তথাকথিত মুক্তমনা সনাতন ধর্মের প্রকৃত সমালোচনা না করতে পেরে, কনটেক্সট বিহীন মনুসংহিতা, বেদের উক্তি তুলে সমালোচনার পোস্ট দেয় আর অজানা আনন্দে ফেঁটে পরে লেখে সব ধর্মই সমান, সব বেকার ! হ্যা সব ধর্মই অন্ধকার, এই দুনিয়াতে মানুষের সৃষ্ট ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই, তাই বলে সব ধর্ম সমান নয় আর তাই তাদের সমালোচনা মাস লেভেলে হয়না, সেটা নিয়ে পড়তে হয়। মনুসংহিতায় নারী বিদ্বেষ, জাতি বিদ্বেষ নিয়ে লিখতে গেলে আগে বেসিকটা জানতে হবে যে মনুস্মৃতি ১২।৯৫ বলছে : যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কাশ্চ কুহষ্টয়ঃ। সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাং স্মৃতাঃ।।-অর্থাৎ যে সকল স্মৃতি বেদবহির্ভূত, আর যে সকল শাস্ত্র বেদবিরুদ্ধ কুতর্কমূলক, সে সকল শাস্ত্র নিষ্ফল জানিবে, সেই সকল শাস্ত্র তমঃকল্পিত মাত্র।
লাভ-জিহাদের পাল্লায় পরা হিন্দু মেয়েদের সিমপ্যাথি দেখানোর আগে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই আবালদের অজ্ঞ সেকুলারিসিমের চর্চাকে আঘাত করুন.........
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................