৯৯ লক্ষ শরণার্থীদের ব্যাক-আপ ছাড়া বাংলাদেশ কি স্বাধীন হতো ?
-------------------------------------------------------------------------------------
১৯৭১ সাল, ভারতীয় উপমহাদেশের এক মাহেন্দ্রক্ষণ । রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সর্বশেষে সামরিক যুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান ভেঙ্গে জন্ম নিল সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ঠ্র বাংলাদেশ । বাংলাদেশের প্রায় ৯৯ লক্ষ শরণার্থী তখন ভারতে আশ্রিত, পাকিস্তানের ৯৩ হাজার আত্মসমর্পণ করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে । বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের একাগ্র লড়াই, শরণার্থীদের আত্মত্যাগ আর ভারতীয় সেনাদের বীরত্বের সম্মিলিত অবদানে ধর্মকে উপেক্ষা করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জন্ম হয় বাংলাদেশের । একটা সামরিক সরকারের হাত থেকে একটা ভূখন্ডকে স্বাধীন করা মোটেও সহজ ব্যাপার ছিলোনা ! বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের সামরিক সরকার সম্পূর্ণ দায়ী করেছিল পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের এবং ভারতকে । পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু তাদের কাছে ছিল ভারতের দালাল । তাদের উপরে নেমে এসেছিলো পাকিস্তান বাহিনীর অকথ্য নিপীড়ন যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় ।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমান মৌলবাদীরা মিলে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল, যার প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষই ছিল হিন্দু । সরকারি হিসেবে মতে ২ থেকে ৩ লক্ষ নারী ধর্ষিত হয়েছিল যার ৮০% ছিল হিন্দু । জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে আসা প্রায় ৯৯ লক্ষ শরণার্থীদের মধ্যে কেবল ৫.৫ লক্ষ মুসলমান শরণার্থী, বাকি সবই হিন্দু ! '৭১ এ হিন্দুর বাড়ি জ্বলেছে, প্রতিষ্ঠান পুড়েছে, আম জনতা, ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবী মরেছে আর ধর্ষিত হয়েছে অগুন্তি নারী । পাকিস্তানের জেলে আটক শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতার চলমান অগ্রগতির খবর জানত না, জানতো না অস্থায়ী সরকারের অনেক মন্ত্রীও, আপ টু ডেট খবর জানতো দুই জন। একজন চিত্তরঞ্জন সুতার আর অপরজন ইন্দিরা গান্ধী । পাকিস্তানের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে শেখ মুজিব যে ভুল করেছিল, ঠিক সেই একই ভুল করেছিল ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে হিন্দু খেঁদিয়ে । হিন্দু খেঁদানোর ফলে ভারতে এসে জুটলো প্রায় ৯৯ লক্ষ শরণার্থী আর সুগম হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ । পাঠক, এটা বুঝতে হবে যে এই বিপুল পরিমানের শরণার্থী ভারতে আগমনের ফলেই তৈরী হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঘিরে ভারত পাকিস্তানের সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পরিস্থিতি যার শেষ পরিণতি পাকিস্তানের সেনার সমর্পন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা । এর বেশ কিছু আগেই ভারতের গোয়েন্দা দফতরের কাছে খবর ছিল যে শেখ মুজিবকে সামনে রেখে ডিসেম্বর, '৭১ এর শেষের দিকে ডাকা হবে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন এবং শেখ সাহেবকে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা গঠনের আহবান জানানো হবে । এই ঘটনাটি ঘটলে বাংলাদেশের স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে উঠে আসা সম্ভভ হতো না ! ভারত সরকার তাই দীর্ঘ মেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের পরিবর্তে সার্বিক যুদ্ধের পরিকল্পনা নিলো এবং বাস্তবায়িত করলো যাতে করে আগত শরণার্থীদের তড়িগড়ি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যায় । এর পেছনে আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল:
১. এই বিপুল পরিমান শরণার্থীর চাপ বহন করা ভারতের পক্ষে বেশিদিন সম্ভব হতো না ।
২. শরণার্থীদের বাংলাদেশ গ্রহণ না করলে কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেত না ।
ভারত সরকার একটা বড় ভুল করেছিল এখানে । তারা ভেবেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আর কোনোদিনও শরণার্থী সমস্যা হবে না । তারা ভুলে গিয়েছিল যে এই স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ হলো সেই বাঙালি মুসলমান, যারা 'হাত মে বিড়ি মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান' বুলি ফুটিয়ে সবথেকে বেশি পাকিস্তানের পক্ষে সরব হয়েছিল । তাই '৭৩ পরবর্তী বাংলাদেশের শরণার্থীদের আবারও মানবেতর জীবনে ফেরত যেতে হয়েছিল এবং এখনের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে চলে আসছে সেই একই কায়দায় ধর্ম ভিত্তিক নিপীড়ন, বিতাড়ন............
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................