ফ্র্যাঙ্ক প্লামারের রহস্যময় মৃত্যু।

ফ্র্যাঙ্ক প্লামারের রহস্যময় মৃত্যু

চীনের জৈবাস্ত্র কেলেঙ্কারির মধ্যেই একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে গেছে – নামী জীবাণুবিদ ফ্র্যাঙ্ক প্লামার, যিনি সৌদি আরব থেকে পাঠানো করোনা জীবাণু নিয়ে এনএমএলে বসে গবেষণা করছিলেন; তিনি অত্যন্ত রহস্যময় পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে, ফ্রাঙ্ক প্লামার প্রথম ব্যক্তি, যিনি চীনের ওপর পশ্চিমী প্রযুক্তি চুরি করে জৈবাস্ত্র বানাবার প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

ক্যানাডা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা সিবিসি [Canadian Broadcasting Corporation (CBC)] দ্বারা প্রসারিত সংবাদ অনুসারে ৬৭ বছর বয়স্ক প্লামার কেনিয়ার নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন এইচআইভি/এইডস/এসটিডি ইত্যাদি যৌন সংক্রামক রোগের জীবাণু নিয়ে বাৎসরিক ভাষণ দিতে।

ডঃ ল্যারি জেলমোন (Larry Gelmon), যিনি এই লেকচারের আয়োজন করেছিলেন; তার মতে ভাষণ শেষ করার পরেই নাকি প্লামার চৈতন্য হারান এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালে পৌঁছতে জানা যায় প্লামার যাত্রাপথের মাঝপথেই মারা গিয়েছেন।

অদ্যাবধি তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডঃ ফ্রাঙ্ক প্লামার উইনিপেগেই জন্মেছিলেন এবং সেখানেই বড় হয়েছেন। তিনি এনএমএলের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও বিজ্ঞানী ছিলেন।

তিনি একইসাথে ম্যানিটোবা ও নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাথে যুক্ত ছিলেন। মুখ্যত তার প্রচেষ্টাতেই সারা দুনিয়ার লোক এইচআইভি/এইডস/এসটিডি জীবাণুর ভয়াবহতা নিয়ে সজাগ হয়েছিল।

ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যা ও সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক কেইথ ফৌকে (Keith Fowke) প্লামারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সিবিসিতে বলেন, “আপনারা ভাবতেও পারবেন না, এইচআইভি/এইডস/এসটিডি প্রসার রোধে ফ্র্যাঙ্ক প্লামারের ভূমিকা কতখানি ছিল। বস্তুত প্লামারের জন্যই আজ এইচআইভি/এইডস/এসটিডি প্রসার অন্তত ৯৩% কমেছে। ওনার সহযোগিতা বিনা এইচআইভি/এইডস/এসটিডি কোন স্তরে পৌঁছে যেত, ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়।”

“তিনি আশা করেছিলেন একদিন হয়ত এইডসের টীকা আবিষ্কার করতে পারবেন।” প্লামারের সহযোগী ডঃ অ্যাল্যান রোনাল্ড (Allan Ronald) বলেন, “তিনি এই নিয়ে সেই ১৯৯০ থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।”

সিবিসি অবশ্য এটা বলেনি যে, শিয়াংগুও ক়িউ ও কেন্ডিং চেং প্লামারকে চিনতেন কিনা। যদিও সে সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশী, কেননা প্লামার নিজেই এই দ্বয়ীর ওপর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।

তবে এটা জানা গেছে রণ ফৌশিয়ের সৌদি করোনা জীবাণু এই প্লামারকেই পাঠিয়েছিলেন। আগেই বলেছি যে, মোহাম্মদ জ়াকি জেদ্দাহের বাসিন্দা এক সৌদি রোগীর ফুসফুস থেকে করোনা আলাদা করে তা রণ ফৌশিয়েরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কেননা তিনি করোনা জীবাণু নিয়ে ততটা সচেতন ছিলেন না।

এটাও আগেই বলেছি যে, রণ ফুঁসিয়ের ইরাসমাস মেডিক্যাল সেন্টারে বসে ব্রোড-স্পেকট্রাম রিয়াল টাইম পলিমেরাস চেইন রিঅ্যাকশন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে সেটা করোনা জীবাণুই বটে এবং তা প্রথমবার প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রামিত হয়েছে।

৪ মে ২০১৩ সালে রটারড্যাম থেকে উইনিপেগে সেই করোনা ভর্তি শিশি পৌঁছায়। এনএমএল বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন করোনা কিভাবে মানবদেহে পৌঁছায়।

এই গবেষণায় ক্যানাডিয়ান ফুড ইন্সপেকশন এজেন্সি আর ন্যাশনাল সেন্টার ফোর ফরেন অ্যানিম্যাল ডিজিজ সংস্থার সদস্যরাও করোনা বিশ্লেষণে নেমে পড়ে। আগেই বলেছি, তিন সংস্থার ঠিকানা ছিল এক – আরলিংটন স্ট্রিট।

শিয়াংগুও ক়িউ যেটা করছিলেন এনএমএলেতে বসে, তাকে সহজ ভাষায় বলতে হয় – জীববিদ্যাগত গুপ্তচরবৃত্তি। এরপরই নাকি চীনা সদস্যরা এনএমএল থেকে জীবাণু আমেরিকা থেকে চীনের উহানে পাচার করে দেয়। সেখান থেকেই করোনাকে জৈবাস্ত্রে পরিণত করার নোংরা খেলা শুরু হয়, যার অন্তিম পরিণতি এখন সারা বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে।

এখানে একটা কথা না বলে পারছি না। ফ্রাঙ্ক প্লামার একই সময়ে কোরোনার পাশাপাশি এইচআইভি নিয়েও গবেষণা করছিলেন। কিছুদিন আগেই কয়েকটা বড় মাপের বইজ্ঞানিক পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছিল যে, ভারতীয় বৈজ্ঞানিকরা করোনা জীবাণুর মধ্যে এইচআইভি অনুপ্রবেশ করিয়ে তাকে আরও ঘাতক বানানো হচ্ছে এমন দাবি করেছিলেন। ভারতীয় বৈজ্ঞানিকরা এই দাবি তোলার কারণে সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্টের কাছ চরম নিন্দিত ও ধিক্কৃত হয়েছিলেন এবং সেই কারণে এই নিয়ে আরও গবেষণা করা বন্ধ রাখেন। কিন্তু প্লামারের এই নতুন দিক আবিষ্কারের পর তারা আবার নতুন করে কোমর বেঁধে নেমেছেন, এবং গবেষণায় বসেছেন। ইজারেয়েলের বিজ্ঞানীরাও মেনে নিয়েছেন যে, চীন সত্য সত্যই করোনা জীবাণুর মধ্যে এইচআইভি জীবাণু মিশিয়ে দিয়েছিল। আর ঠিক এই কারণেই করোনা এতখানি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

© Ayan Chakraborty

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted