নিজ কন্যার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান: সম্রাট শাহজাহান প্রায়ই অন্যান্য ধর্মের সাধুসন্তদের ধর্মালোচনা করার নাম করে আগ্রায় ডেকে আনতেন। শাহজাহানের ধর্মনিরপেক্ষতার ফাঁদে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁদের মুসলমান হওয়ার হুকুম দিতেন। যাঁরা ঐ হুকুম মেনে নিয়ে মুসলমান হতেন তাঁরা বেঁচে যেতেন। বাকিদের পরদিন সকালে নানাপ্রকার পৈশাচিক অত্যাচার করে হত্যা করা হত। সবচেয়ে বেশী অবাধ্যদের হাতির পায়ের তলায় পিষে মারা হত।
[তথ্যসূত্র- Trans-Arc. Soc. Agra. 1978. Jan-June, VIII-IX]
ঐতিহাসিক Keene লিখেছেন, "একবার শাহজাহান ফতেপুর সিক্রী অবরোধ করার সময় নির্মম অত্যাচার করে হিন্দু প্রজাদের যথাসর্বস্ব লুঠ করেন এবং অভিজাত হিন্দু রমণীদের ধর্ষণ করার পর তাঁদের স্তন কেটে ফেলেন।"
ইতিহাস লেখক আবদুল হামিদ লাহোরী তাঁর রচনা বাদশাহনামায় লিখেছেন, "একদা বাদশাহের গোচরে আনা হল যে, তাঁর পিতার (জাহাঙ্গীরের) আমলে বিধর্মী কাফেরদের শক্ত ঘাঁটি বারাণসীতে অনেক পুতুল পুজার মন্দির তৈরী করা শুরু হয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত থেকে যায়। বর্তমানে কাফেরের দল সেই সব মন্দির তৈরীর কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই কথা শুনে ধর্মের রক্ষক মহানুভব সম্রাট আদেশ জারী করলেন যে বারাণসী সহ তাঁর রাজ্যের যেখানে যেখানে অসম্পূর্ণ মন্দির খাড়া করা হয়েছে তার সবগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
অধুনা খবর এসেছে যে তাঁর আদেশ বলে এলাহাবাদ প্রদেশের বারাণসী জেলায় ৭৬ টি মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে।"
ঐতিহাসিক শ্রী কানোয়ার লালের মতে, "শাহজাহান ছিলেন একজন গোঁড়া সুন্নী মুসলমান। তাঁর পত্নী মমতাজ মহলের পরামর্শে তিনি নতুন করে হিন্দু মন্দিরগুলি ভাঙার কাজ শুরু করেছিলেন। মুসলমান হিসাবে শাহজাহান যে কতখানি উগ্র ও গোঁড়া ছিলেন তা একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভালভাবে বোঝা যাবে।
১৬৩২ সালে কাশ্মীর থেকে ফেরার পথে সম্রাটের নজরে আনা হল যে রাজৌরী, ভিম্বার, পশ্চিম পাঞ্জাব সহ গুজরাটের কিছু কিছু স্থানে হিন্দুরা নব্য মুসলমান মহিলাদের অর্থাৎ বাধ্য হয়ে ধর্মান্তরিত হওয়া হিন্দু মহিলাদের পত্নীরূপে গ্রহণ করেছে। এবং বিবাহ করার পর সেই সব মুসলমান মহিলাদের আবার হিন্দু করেছে।
এই কথা শুনে সম্রাটের ভীষণ ক্রোধ উপস্থিত হল। সম্রাটের আদেশে সেই সকল হিন্দুদের ধরে আনা হল এবং বিরাট অঙ্কের টাকা জরিমানা ধার্য করা হল। এত বেশী অর্থ জরিমানা করা হল যাতে কেউ তা দিতে না পারে। তারা অক্ষমতা জানালে তাদের বলা হল যে একমাত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেই তাদের মুক্তি দেওয়া হবে, অন্যথায় তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। তারা সকলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অস্বীকার জানালে তাদের সবাইকে হত্যা করা হল এবং তাদের ৪৫০০ বিবাহিতা মহিলাদের পুনরায় জবরদস্তি মুসলমান করা হল।
[তথ্যসূত্র- R.C.Majumder. BVB, Vol. VII. P-312]
ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের মতে আকবরের হারেমে মোট ৫০০০ রমণী ছিল। পিতার মৃত্যুর পর বাদশাহ হয়ে জাহাঙ্গীর ঐ হারেমের মালিক হন এবং রমণীর সংখ্যা আরও ১০০০ বাড়িয়ে মোট ৬০০০ করেন। হিন্দু পরিবারের মেয়েদের ধরে এনে এনে ওই অভিশপ্ত হারেমে যৌনদাসী বানিয়ে রাখা হত।
কারন ইসলামের নিয়ম হল:
১। হানা দিয়ে সকল কাফের বা বিধর্মী পুরুষকে হত্যা করতে হবে।
২। যুদ্ধবন্দী নারী ও শিশুদের গণিমতের মাল হিসেবে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিতে হবে। তারপর পছন্দ মতো ভোগ করতে হবে বা বিক্রি করে দিতে হবে।
৩। অমুসলমানের সমস্ত সম্পত্তি, নারী ও শিশু সমেত গণিমতের মাল। সুতরাং তা ভোগ দখল করতে হবে।
নতুন নতুন হিন্দু রমণীদের দ্বারা হারেমের নবীকরণ করা হত এবং পুরনো ও বয়স্কদের তাড়িয়ে দেওয়া হত।
নূরজাহানের পিতা ইদমত-উদ-দৌলার মতে, "এইসব হতভাগিনী হারেম-বাসিনীদের কন্যা সন্তান জন্মালে তাদেরকেও হারেমেই রাখা হত এবং বড় হলে বাদশাহদের ভোগে লাগানো হত। আর পুত্র সন্তান হলে তাদের সারা জীবনের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করা হত, লিঙ্গচ্ছ্বেদ করে খাঁজা করা হত, অথবা হত্যা করা হত।
[তথ্যসূত্র- P.N Oak, Tajmahal-The true story, p-207]
ইউরোপীয় পর্যটক বঁর্ণীয়ে তাঁর ভ্রমণ কাহিনী 'Travels in the Mughal Empire' -এ লিখেছেন, "প্রাসাদের মধ্যে ঘন ঘন মীনাবাজার অর্থাৎ যৌন দাসীর বাজার বসানো হত। সেখানে জোর করে ধরে আনা শতশত হিন্দু রমণীদের বেচা-কেনা করা হত। সম্রাটের জন্য ধরে আনা হত শতশত হিন্দু রমণী, যাদের পরখ করে হারেমে জায়গা দিতেন খোদ সম্রাট।
আবার কিছু কিছু পুরাতন যৌন দাসীদের হারেম থেকে বের করে এনে পুণরায় বেচে দেওয়া হত আমীর ওমরাহদের হাতে; অনেক সময় উপহার হিসাবেও প্রদান করা হত। এছাড়া সরকারী খরচে বেশ কয়েকশত নৃত্য-পটিয়সী যৌন দাসীদের ভরণ-পোষণ করা হত। হারেমের সুরক্ষার জন্য কয়েকশত খাঁজা প্রহরীদের ব্যাবহার করেও কামুক শাহজাহান তাঁর কামনা ও লালসা চরিতার্থ করতেন।"
পর্যটক পিটার মান্ডি লিখেছেন, "শাহজাহানের ছোট মেয়ে চিমনি বেগমের সাথে শাহজাহানের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাঁর বড় মেয়ে জাহানারার সঙ্গেও শাহজাহানের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।" এ ব্যাপারে অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একমত। শাহজাহান তাঁর সম্পর্কের কথা গোপন করতেন না বরং প্রকাশ্যেই বলতেন এবং যুক্তি দেখাতেন যে, "গাছে ফল ধরলে বাগানের মালিরই অধিকার আছে সবার আগে তার স্বাদ গ্রহণ করার।"
মোগল আমলে প্রায়ই ভয়াবহ আকাল হত। ১৫৭৩ থেকে ১৫৯৫ সালের মধ্যে পাঁচবার আকাল হয়। ১৫৯৫ সালের আকাল পাঁচবছর ধরে চলতে থাকে। ১৬১৪ থেকে ১৬৬০ সালের মধ্যে মোট ১৩ বার আকাল হয়। এগুলোর ভেতর শাহজাহানের আমলে ১৬৩০-৩১ সালে যে আকাল হয় তাই ছিল সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ। সমগ্ৰ দাক্ষিণাত্য ও গুজরাট অঞ্চলে সেই আকাল ছড়িয়ে পড়ে।
এই আকাল সম্বন্ধে ইতিহাস লেখক আবদুল হামিদ লাহোরী তাঁর বাদশাহনামায় লিখেছেন, "দাক্ষিণাত্য ও গুজরাট এই দুই প্রদেশের মানুষের অবস্থা পৌঁছেছিল খুবই শোচনীয় অবস্থায়। লোকেরা একখানা রুটির জন্য সারা জীবন দাসত্ব করতেও রাজী হত, কিন্তু কোন ক্রেতা পাওয়া যেত না। এক টুকরো রুটির বদলে একদল মানুষ কেনা যেত, কিন্তু সেই সুযোগ নেবার জন্য কোন লোক ছিল না।
অনেকদিন ধরে কুকুরের মাংস বিক্রি হচ্ছিল। তারপর হাড়ের গুঁড়ো ময়দার সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা আরম্ভ হল। ক্রমে ক্রমে দুর্দশা এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছল যে মানুষ মানুষের মাংস খেতে শুরু করল। পিতা মাতার কাছে সন্তানের প্রতি স্নেহ ভালবাসার থেকে তার শরীরের মাংসই বেশী প্রিয় হয়ে উঠল!"
এমন দূর্ভিক্ষ হওয়ার কারণ কি ছিল?
কারণ লক্ষ লক্ষ হিন্দু কৃষকদের মুসলমান না হওয়ার অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল, আর তাদের স্ত্রীদের বানানো হয়েছিল যৌনদাসী! তাহলে আর চাষ আবাদ করবে কে? অথচ অদ্ভুত ব্যাপার, কোন মুসলমানকে এই দুর্ভিক্ষ স্পর্শ পর্যন্ত করে নি। কারণ হচ্ছে দখলীকৃত হিন্দুদের জমি ভূমিহীন মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা আর হিন্দুদের বাড়ীঘর লুঠপাট করা হয়েছিল।
এই আকালের সময় অনাহারে এত লোক মারা যায় যে মৃত দেহের স্তুপের জন্য রাস্তাঘাটে চলাচল করা পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ঠিক এইভাবেই এক অতি উর্বর শস্য শ্যামল দেশ শ্মশানে পরিণত হয়েছিল।
ইংরেজ পর্যটক পিটার মান্ডি নিজের চোখে এই বিভৎস্য দৃশ্যগুলি দেখেছিলেন। তাঁর রচনায়ও অনুরূপ বিবরণগুলি পাওয়া যায়। হতভাগ্যদের দেহ এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল যে পিটার মান্ডি পরিদর্শনে গিয়ে একটি তাঁবু খাটাবার মতন স্থানও পান নি।
একাধিক ইউরোপীয় পর্যটক ও ঐতিহাসিকরা শাহজাহানকে অত্যাচারী নিষ্ঠুর, বিলাসপ্রিয় ও ব্যাভিচারী বলে চিহ্নিত করেছেন। স্যার টমাস রো, চেরী, বঁর্ণীয়ে, ডিলিয়েঁ প্রমুখ ইউরোপীয় পর্যটক ও যাজকদের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক ডঃ স্মিথও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। শাহজাহান খ্রীস্টান, হিন্দু ও পর্তুগীজদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করতেন এবং হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতেন ও নতুন করে মন্দির নির্মাণে বাধা দিতেন। তিনি হিন্দুদের ওপর তীর্থকর পুনরায় প্রবর্তন করেছিলেন।
তাজমহল, ময়ূর সিংহাসন, কোহিনুর হীরার মুকুট এবং বিবিধ ইসলামিক স্থাপত্য নির্মাণের জন্য হিন্দু প্রজাদের উপর মাত্রাতিরিক্ত কর বসিয়েছিলেন।
সেই কর দিতে না পারলে চলত অকথ্য অত্যাচার। এমনকি তাজমহলের স্থপয়িতাকে তিনি নিজেই খুন করিয়েছিলেন। কতবড় নিষ্ঠুর ও বেইমান হলে এরকম কাজ করা যায় একবার ভাবুন।
অথচ বিড়ম্বনা দেখুন আমাদের পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে সম্রাট শাহজাহানের রাজত্ব কালকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুবর্ণ যুগ হিসাবে পড়ানো হচ্ছে ৭২ বছর ধরে। তাঁর রাজত্বের কালো অধ্যায়গুলি সম্পূর্ণ চেপে যাওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে। এটা নিছক কোনো ভুল নয় বরং কংগ্রেস সরকারের একটা প্রি-প্ল্যানড এজেন্ডা। যে এজেন্ডা দিয়ে ভারতীয় হিন্দুদের মজ্জায় মজ্জায় সেকুলারিজমের ভ্রান্ত ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বহু কঠোর সত্যকে গোপন করা হয়েছে। নির্মম নিষ্ঠুর সম্রাটগণকে প্রজাহিতৈয়সী, উদার, দয়ালু, ধর্মনিরপেক্ষ দেখিয়ে ভ্রান্ত মূল্যবোধ সৃষ্টি করা হয়েছে।
অথচ আজকে যদি আপনি করব খুঁড়ে সত্যকে উদঘাটন করতে যান, তাহলে সহজেই আপনার গায়ে সাম্প্রদায়িকতার তকমা সেঁটে দিয়ে আপনার বক্তব্যকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হবে।
এটাই সিয়াসত; যা বাম, কংগ্রেস ও বিভিন্ন কংগ্রেসপন্থী দলগুলি যুগযুগ ধরে আমাদের সঙ্গে করে আসছে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................