বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং এক শ্রেণীর ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্তান প্রেমের ইতিহাস।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং এক শ্রেণীর ভারতীয় মুসলিমদের পাকিস্তান প্রেমের ইতিহাসঃ --
--------------------------------------------

১৯৭১ সালে ভারতে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।ভারতের সাধারণ হিন্দু - মুসলিম নির্বিশেষে পূর্ব বাংলার অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের জাতীয় মিডিয়া ও মেইন স্ট্রিম মিডিয়া পশ্চিম পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য গাথা অনবরত প্রচার করছিল।তখন কি ভূমিকা পালন করেছে ভারতের মুসলিম সমাজ??



জানলে অবাক হয়ে যাবেন, তখন ইসলামের লেবাস ধারী বেশ কিছু  ভারতীয় মওলানা ও স্কলার মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল।এর অগ্রভাগে যে নাম টি সর্ব প্রথম  চলে আসে তিনি হলেন, মাওলানা আব্দুল মাজিদ দারিয়াবাদী।

তিনি তাঁর "সিদক -ই -জাদিদ" পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ১১ জুন লেখেন, “পাকিস্তানের ইসলামিজম নিয়ে আমাদের মন্তব্য নাই, কিন্তু সেখানকার সরকার মুসলিম সরকার, এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ক্ষমা করা যায় না।” কি বুঝলেন ?? পাকিস্তানের চালানো গণহত্যাকে আমলে না নিয়ে গণহত্যাকে জাস্টিফাই করার জন্য ধর্ম নিয়ে আসা কি বাড়াবাড়ি নয়?? ধর্ম অবমাননার প্রমাণ করতে গিয়ে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি লাগে?? 

মুক্তিযুদ্ধের সফল সমাপ্তির পরে ও তার দাবিতে অনড় তিনি অনড় ছিলেন।তিনি লিখেছিলেন  “ আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়ার মত পাকিস্তান ও একটি মুসলিম রাষ্ট্র। যারা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে তারা একটি মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে বলে ধরে নিতে হবে। এটা শরিয়ার নিয়ম, যা মুক্তি ফৌজ বা মুক্তি যোদ্ধা বলে চালিয়ে দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।” (সিদক-ই-জাদিদ, ২ জুলাই, ১৯৭২) শুধু পূর্ব বাংলার মাটিতে বসে বিশাল ধার্মিক শ্রেণী পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ায় নি, ভারতের মুসলিম সমাজের একটি অংশ ও সেদিন ধর্মের অপব্যবহারে পাকিস্তানকে মানসিক শক্তি দিয়েছে।বার বার বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই সুমহান সময়ে ২০ নভেম্বর ঈদ-উল-ফিতর এসেছিলো বাঙালিদের জীবনে। এ রকম ঈদ বাঙ্গালীর ইতিহাসে আর এসেছিল কিনা আমার জানা নাই। সরনার্থী জীবনের দুঃসহ কষ্টের মাঝে এক ফালি ঈদের চাঁদ সেদিন নিয়ে এসেছিল আনন্দ বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি।মৃত্যুর মাঝে ঈদ,স্বজন হারানোর বেদনার মাঝে ঈদ আর কখনো বাঙালি দেখেনি। সেদিন রণাঙ্গন, শরনার্থী শিবির আর দেশের ভেতরে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছিলো ঈদ।  

কিন্তু কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের  সদস্যরা বাংলাদেশে সংগঠিত হানাদার বাহিনীর গনহত্যার প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের কোন ধরনের প্রতিবাদ না দেখে দুঃখিত হয়।বিরূপ আচরণে ব্যথিত হয়। এর মধ্যে চলতে থাকে ধর্মীয় অপপ্রচার ও।সো কল ধর্মের ধ্বজ্জা ধারীরা বাংলাদেশের মুসলমানদের বেঈমান উপাধী ও প্রদান করেন সেদিন ।ভারতীয় সরকারের বিশেষ উদ্যেগে ও নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার আলাদা ভাবে ঈদের জামাত আয়োজন করে।সে সময়ের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। 

বিজয়ের ঠিক আগে ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১,"জমিয়াত টাইমস অব দিল্লী" লিখলঃ “আমরা আগে ও লিখেছি এবং আবারও লিখতে দ্বিধা নেই যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান যে দ্বন্দ এবং পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি-অবাঙালিদের যে গণহত্যা চলছে বা লাখ লাখ গৃহহীন উদ্বাস্তু যে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে এই সব কিছুর জন্য সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা দায়ী।(যেন পশ্চিম পাকিস্তানিরা একদম ধোঁয়া তুলসী পাতা !! সব দোষ বাঙ্গালীর !! আফসোস --- )

একজন মানুষ ই একটি সম্পূর্ণ বাগানকে দগ্ধ করে ফেলতে সক্ষম।ভারতেরই হোক বা পাকিস্তানের, আমরা সেই সব  বিশ্বাসঘাতকদের অভিশাপ দেই ---- (অভিশাপের স্টাইল দেখে আর বাঁচিনা)

একজন মানুষের তার নিজের দেশের কল্যানের কথা ভাবা উচিৎ,আর যদি সে দেশে তার ভালো না লাগে তাহলে দেশ ত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়া উচিৎ।” ( কি বুঝলেন?? একদম মনের কথা, বলে ফেলা নয় কি??)

পত্রিকাটি আরও লিখে  লেখে, “ভারতের মুসলিমরা এটা জানে যে বাঙ্গালীদের কিছু অভিযোগ হয়তো সত্য।(এখানে ও কনফিউশন) কিন্তু,তারা এটাও মানতে পারব না যে এভাবে তারা ইসলামিক রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে ফেলতে চায়"!! প্রতিটি কথায় পাকিস্তান আর ইসলাম কে এক জায়গায় দাঁড় করানোর কি চেষ্টা !!

তারা আরও লিখে, “এই অপরাধ যারা করছে তারা হয়তো সাময়িকভাবে কিছু সম্মান অর্জন করতে পারে কিন্তু মুসলিম জনতা তাদের সবসময় শৃঙ্খলাভঙ্গকারী হিসেবেই দেখবে, যারা কিনা মিল্লাত বা ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের এর অখণ্ডতা ভেঙ্গে ফেলছে।” -----

আজ যদি সেই সো কল মওলানা সাহেবরা আজ বেঁচে থাকতো তাহলে আজকের বাংলাদেশের সাথে আজকের পাকিস্তানকে কিভাবে মাপতো জানতে মন চায়!!পাকিস্তানের ভগ্ন দশা দেখে আফসোস করে মাথা ফাঁটাতো আমি আমি নিশ্চিত। যদি সামান্য আত্মসম্মান থাকতো বর্তমান অবস্থা দেখলে নিশ্চিত হার্ট এটাক্ট করতো।

গণহত্যা ও ধর্ষণ কখনো মানবিক নয়। এই অমানবিকতাকে ধর্মের মাঝে ঢুকালে অপবিত্র হয় ধর্ম। ইতিহাস কি সেই শিক্ষাই দেয় না?? এই পাপ থেকে কি শিক্ষা নিবে না,আগামী প্রজন্ম?? 

তাই বলি সত্য জানুন, সত্য শোনার মত কান তৈরী করুন। ঘাতক নানা দেশে,নানা বেশে হাজির থাকে।শুধু মঞ্চটা পাল্টে যায়। বাকি সব এক। সংগৃহীত।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted