রোহিঙ্গাদের ভৌগলক বাসস্থান এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

“রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু কথা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

রোহিঙ্গা জাতি এবং তাদের সমস্যা নিয়ে সারা পৃথিবী তোলপাড়।প্রায় ছয় লক্ষ রোহিঙ্গা আজ বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে বাস করছে। আমাদের ভারতে ও প্রায় ৪০০০০ এর কাছাকাছি রোহিঙ্গা এসে বাসা বেধেছে। এদের নিয়ে সমস্যায় আছে বাংলাদেশ, পাশ্চাত্যের অনেক দেশ এদের দুররদশা নিয়ে চিন্তিত। ভারত সরকার এদের ভারতে কার্যকলাপ নিয়ে ভাবিত।।

রোহিঙ্গাদের ভৌগলক বাসস্থান এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস---------- বর্তমান মায়ানমার দেশের একটি প্রদেশ, নাম ‘রাখাইন’। এই রাখাইন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার পুর্ব দিকে অবস্থিত। আরাকান পর্বত দিয়ে মায়ানমারের অন্য অঞ্চল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্নই বলা যায়। এই রাখাইন প্রদেশ ঐতিহাসিক ভাবে ‘আরাকান’ নামেই পরিচিত ছিলো এবং সুলতানী আমলে সমস্ত বাংলার সংগে যুক্ত একটি সুবা ছিলো।
 
উপরের ছবিতে সবুজ রঙ্গয়ের অঞ্চলটি বাংলা সুবা নামেই পরিচিত ছিলো সুলতানী আমলে এবং এর শাসক বাংলার সুবেদার ই ছিলেন। বর্তমানে এই বাংলা সুবার আরাকান অঞ্চল প্রাক্তন বার্মা ( ব্রহ্মদেশ) বা বর্তমান মায়ানমারের অধীনে এসেছে, ব্রিটিশ আমলে।
 
এই ছবিতে হলুদ রঙ্গয়ের অঞ্চল বর্তমান রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ঘন বসতি অঞ্চল।

রোহিঙ্গারা জাতিগত ভাবে বাঙ্গালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে এই আরাকান রাজ্যে এসে বাসবাস করছে অনেকদিন থেকে। এদের ভাষা চট্টগ্রামের বাংলা ভাষার অনুরুপ।

আরাকান অঞ্চল ‘মৌর্য’ সম্রাটদের ভারতীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো। ঐতিহাসিকেরা মোটা মুটি একমত যে আরবী ব্যাবসায়ীরা এই অঞ্চলে ঘাটি গাড়তে শুরু করে নবম শতাব্দী থেকে। আরব, ভারত এবং চীন এই সমস্ত এলাকায় সমুদ্র পথে ব্যাবসা বানিজ্যের প্রচলন চলে এসেছে প্রায় একই সময় থেকে যখন স্থল পথে ‘সিল্ক রুট’ ধরে আরব থেকে চীন অবধি ব্যাবসা বানিজ্য চলতো।

আরাকান মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে থাকায় এবং পশ্চিম দিকে বাংলার সংগে এবং উত্তরে মনিপুর সংলগ্ন হওয়ায় আরাকান হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দু সংষ্কৃতি সম্মৃদ্ধ ছিলো। বৌদ্ধ আমলে বার্মার উত্তরাঞ্চল থেকে বৌদ্ধ রা এসে ও বসবাস করতে শুরু করে। আরবী ব্যাবসাদারদের সংগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক রাও আসে। ঠিক যেমন ভাবে দক্ষিন ভারতের মালাবার অঞ্চল, ইন্দোনেশিয়ার হিন্দু এবং আদিবাসীরা এই ইসলামিক ধর্ম প্রচারকদের চতুরতায় ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ,অনুরূপ ভাবে আরাকানের স্থানীয় বাসিন্দারাও বেশ কিছু ইসলাম গ্রহন করে। ১৪৩০ সালেই ‘শান্তিকান’ মসজিদ তৈরী হয়ে যায়।
মিন শ মুন, ছিলেন বৌদ্ধ এবং আরাকানের রাজা।কিন্তু তিনি বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ শাহের কাছে পরাজিত হয়ে আরাকানের কিছু অঞ্চল বাংলাকে দেন এবং তার অধীনে সামন্ত রাজা হিসাবে থাকেন। এই সময়, সুলতানী প্রভাবে আরাকানের অনেক মানুষ মুসলমান হতে শুরু করে।এমনকি বৌদ্ধ রাজা নিজেও মুসলমানী নাম গ্রহন করতে বাধ্য হন এবং আরবী ভাষায় মুদ্রার প্রচলন করেন।
 

বৌদ্ধ রাজার এই সুলতানী প্রভাবে বাংলা থেকেও অনেক মুসলমান আরাকান এ এসে বাস করতে শুরু করে। ( ঠিক যেমন এখন বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরা এসে ভারতে বাস করছে আমাদেরই এক শাসক গোষ্ঠির মদতে।

মুঘল আমলে, সম্রাট শাজাহানের পুত্র শাহ সুজা বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। তিনি ভাই আওরংজেবের সংগে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আরাকানে আশ্রয় গ্রহন করেন।তার সংগে অনেক সৈন্য সামন্ত আসে।এরাও আরাকানের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়।এই ভাবে আরাকান এক মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট অঞ্চলে পরিনত হয়।
 
শাহ সুজা আরাকানে প্রবেশ করছে।

আরাকান কে ‘রাখাইন’ নাম দেওয়া হয় বার্মা যখন মিলিটারী শাসনে ছিলো। উত্তরে আরাকান পর্বত পেরিয়ে যে বৌদ্ধরা এই রাখাইনে বসবাস শুরু করে তারা  বার্মার আদিবাসী ‘রাখাইন’ জাতি হিসাবে পরিচিত। সেই হিসাবে আরাকান নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় ‘রাখাইন’।

মুসলমানরা জাতিগত ভাবে এবং ধর্মের নামে যেখানেই থাকে নিজেদেরকে ‘স্থানীয়দের থেকে আলাদা’ এই ভাবনা নিয়েই থাকে। সেই দেশের শিক্ষা, সংষ্কৃতি, জীবন ধারন প্রনালী কোনোটাই তারা গ্রহন করতে রাজী নয়। আজকাল আমরা আমাদের পশ্চিম বংগেও সেটা দেখতে পাচ্ছি। ওরা মাদ্রাসায় পড়বে, নাম পরিবর্তন করে আরবী বা উর্দু নাম নেবে, আরবী ভাষা কোনো ভারতীয় ভাষা না হলেও ওদের সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আরবীর ছড়াছড়ি। ক’দিন পরেই ভি আই পি রাস্তা ভরে যাবে আরবীতে লেখা নানা রকমের শব্দে। সারা পৃথিবীতে ওরা যেখানেই থাকে সেখানেই নিজেদেরকে স্থানীয় কৃষ্টি, আদর্শ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পছন্দ করে।  এই প্রবনতা যতোটা না ধর্মীয় তার থেকেও আসল সত্য হলো রাজনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলই মুল কথা।  রাজনৈতিক ভাবে ওরা নিজেদের একটি আলাদা ‘জাতি’ হিসাবেও দাবী করে। সেই জন্যই ৮০০ বছর ভারতে বাস করে ওরা ভারতীয় হতে পারেনি, নিজেদের ভারতের ‘ভুমিপুত্র’দের থেকে সম্পুর্ন একটি জাতি হিসাবে দাবী করে নিজেদের জন্য একটি আলাদা দেশ বানিয়ে নিয়েছে। অন্যের সম্পদ নিজের করে ভেবে সেই সম্পদ একদিন না একদিন নিজেদের করে নেওয়াই প্রচলিত প্রথা এবং অবশ্য কর্তব্য কর্ম, সেটাই “জেহাদ”।।

রাখাইনেও ঠিক সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। মৌর্য আমলের হিন্দুরা আরাকানে সংখ্যায় ছিলো কম। বার্মিজ রা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছে অনেক আগেই। আরাকান বলুন বা রাখাইন বলুন ওই অঞ্চল ভৌগলিক দিক দিয়ে ‘বৌদ্ধ বার্মা’ হিসাবেই স্বাভাবিক ভাবে পরিচিত। কিন্তু প্রথমে আরবী ব্যাবসায়ী, পরে সুলতানী আমলে বাংলা থেকে যাওয়া মুসলিম এবং পরে শাহ সুজার সংগে যাওয়া মুসলিম সৈন্য, এই তিন ধরনের মুসলিম রা ওখানে আজ মৌরষী পাট্টা নিয়ে বসে আছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওদের পরিবারে বাচ্চাকাচ্চা প্রচুর। কম হলে ৪ জন আর বেশ কিছু পরিবারে ২০ থেক ২৫ জন সন্তান জন্মায়। সেই সুবাদে, রাখাইনে মুসলিম জন সংখ্যা বেড়েছে গুনিতক হারে। 

‘রোহিংগা’ শব্দটা এসেছে আরবী শব্দ “রহম”। রহম শব্দের অর্থ “ আল্লার আশীর্বাদ”। আরবী ব্যাবসায়ীদের সংগে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারকরা ধর্ম পরিবর্তন কারী আরাকানি দের বলতো “আল্লার আশীর্বাদ প্রাপ্ত সম্প্রদায়”। সেই থেকে নাম হলো ‘রহং’, রহং থেকে রোহিং= রোহিংগা।এই রহং রা যেখানে থাকে তার নাম হলো ‘রোহাং’। সেই হিসাবে দেখতে গেলে ‘রোহিংগারা’ তাদের নিজ ধর্ম পরিবর্তন করে হয়েছে এক নতুন সম্প্রদায় ‘আল্লার আশীর্বাদ ধন্য সম্প্রদায়’। নৃতত্ব বিদ জ্যাকুইজ লেইডার বলেন, এই রোহিংগা’ দের মুলত ‘চিট্টাগংনিয়ান’ বলেই ডাকা হতো, কারন এরা মুলত বর্তমান বাংলাদেশের চিটাগাং বা চট্টগ্রাম থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী। ১৯৯০ সাল অবধি এদের এই “চিটাগাঙ্গী বাঙ্গালী’ বলা হতো।

১৯৩৬ সালে তৈরী হলো “রোহিংগা জামায়াত আল ঊলেমা”। এরা আরাকান (রাখাইন) কে এক স্বতন্ত্র মুসলিম দেশ বলে ব্রিটিশ দের কাছে থেকে স্বীকৃতি চাইলো। ওরা তখন পাকিস্তান নামে একটি দেশের অঙ্গীভুত হয়ে থাকার স্বপ্নে মশগুল। কিন্তু সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দিলো স্বয়ং জিন্না। তার ‘মুসলিম লীগ’ রোহিংগা দের বা তাদের বসতি পুর্ন প্রতন্ত্য পাহাড়ি দেশ এবং অশিক্ষিত , বর্বরীয় জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত একটি সম্প্রদায়কে নিজের “পাক”= “পবিত্র” দেশের অঙ্গীভুত করতে অস্বীকার করলো। (কি ঝামেলা বলুন তো) 
********* 
রোহিঙ্গা এবং ‘জেহাদী পরিকল্পনা’----
জিন্না, রোহিংগাদের, যারা আসলে বর্তমান চট্টগ্রামের থেকে আরাকানে অনুপ্রবেশকারী, তাদের বিচরন স্থান, যার বর্তমান নাম ‘রাখাইন’, মায়ানমারের একটি প্রদেশ, সেই অঞ্চলকে ‘পাকিস্তানের অঙ্গীভুত’ করতে অস্বীকার করায় অই অঞ্চল টি বার্মার অধীনেই থেকে যায়। কিন্তু আরাকান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অঞ্চল। মুসলিম রা যেখানে সংখ্যা গরিষ্ট হয়ে পড়ে সেখানে তারা অন্য সম্প্রদায়ের সংগে থাকা পছন্দ করে না। তারা ভাবে আমরা ‘আল্লার আশীর্বাদ ধন্য”, আর ওরা হচ্ছে কাফের, অনন্ত নরক বাস করাই ‘কাফের’ দের একমাত্র ভাগ্যলিখন। ওরা ভাবে ‘আমরা পাক’ অর্থ্যাত ‘পবিত্র’, ওরা ‘না পাক’ = অপবিত্র। অপবিত্রদের সংগে থাকতে পবিত্র মানুষদের পছন্দ না হবার ই কথা। যেমন ভাবা তেমনি কাজ।

কাশ্মীর উপত্যকা মুসলিম প্রধান ,তাই সেখানকার ‘পাক= পবিত্র’ বাসিন্দারা শুরু করলো ‘না=পাক হিন্দু বিতাড়ন। হিন্দুরা এমনই একটি প্রজাতি যারা পালাতে ভালোবাসে,‘য পলায়তি স জীবতি’ হিন্দুদের মুল মন্ত্র।কাশ্মীরি হিন্দুরা পালালো, ঠিক যেমন করে পুর্ব পাকিস্তান থেকে সাড়ে তিন কোটি হিন্দুরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে চলে এসেছে ভারতে। রুখে দাড়াতে বা ইটের বদলে পাটকেল দিতে এরা কোনোদিন পছন্দ করে না। অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামের পথে আমার ছোটবেলায় গা ছম ছম করতো ভুতের ভয়ে। ঠাকুরমা বলেছিলেন, “ভয় পেলে রাম নাম করবি”। আমরা তাই ভয় পেয়ে ‘মুখে রাম রাম’ বলি।কিছু হলে বুক চাপড়ে ‘হা ভগবান’ বলে ডুকরে কাঁদি। তারপর একদিন ভাবি ‘সব ঠিক হয়ে গেছে, আর হবে না’--- ঠিক এই মনোভাব নিয়েই এখনো ৮০ লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশে পড়ে আছে।
লেখক বার্মা তে প্রায় ১০ দিনের মতো নানা জায়গা ভ্রমন করেছেন। সমস্ত দেশটাই বৌদ্ধ। পাশের দেশ কম্বোডিয়াও বৌদ্ধ। বৌদ্ধরা অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী হলেও নিজের দেশ এবং ধর্মকে ভালো বাসে।ওরা ভাবের ঘরে চুরি করে না। ওরা মুখে মুখে ‘বিপ্লব’ করে না। বৌদ্ধ ভিক্ষুরাই বার্মার সামরিক শাসক দের রাইফেলের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলো, মারা গিয়েছিলো বেশ কয়েক শো। ওদের দেশ রাখাইনে যখন মুসলিম “রোহিংগা” রা তাদের নিজেদের দেশ ভাগ করে স্বতন্ত্র একটি মুসলিম দেশ তৈরী করার জন্য সংঘটিত হতে শুরু করলো নানা সঙ্ঘটন করে , তখন থেকেই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তার বিরোধিতা করতে শুরু করলো।

রোহিংগারা মুলত, পুর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে অসামাজিক কাজ কর্মের শাস্তির হাত থেকে পালিয়ে আসা অপরাধীদের বংশ ধর। আর ‘শাহ সুজার’ সৈন্য বাহিনীতে কাজ করা ‘যুদ্ধ বাজ’। এরা সমুদ্র পথে ছোট ছোট ডিঙ্গিতে করে চলে আসে আন্দামানে কাঠ চুরি করতে, ডাকাতি করতে। আন্দামানের পুলিশ চৌকি গুলোতে গেলে এদের দেখতে পাবেন—‘মনে হবে গোবেচারা, ভাজা মাছ উলটে খতে জানে না। লেখক আন্দামানে থাকা কালীন এদের অনেক পরিচয় পেয়েছেন—এরা বর্বর, নৃষংশ, নিষ্টুর,অসভ্য। মানুষ খুন করা এদের জল ভাত, ঠিক আরবী বেদুইন এবং আফগান উপজাতির মতো।

পাকিস্তানি সরকার, বেশ অনেক আগে থেকেই, এদের, অর্থ্যাত এই ‘আরাকানি রোহিংগা দের’ দিয়ে একটি সন্ত্রাসবাদি= জেহাদী যুদ্ধবাজ তৈরীর পরিকল্পনা করে রেখেছে, মুল উদ্দেশ্য,কাশ্মীরের মতো এদের দিয়ে ভারতের পুর্ব দিকে একটি গন্ডোগোল পাকিয়ে রাখা, ভারতকে চাপে রাখা, ভারতের উন্নতিকে ব্যাহত করা।আমাদের দেশকে, ভারতকে টুকরো টুকরো করার ফন্দি ফিকির তো চলছে সেই দেশ ত্রিখন্ডিত হবার পর থেকেই। পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করে ফ্রন্ট লাইনে, অর্থের জোগান দেয় সৌদি আরব এবং বেশ কিছু মধ্য প্রাচ্যের ইসলামিক দেশ, আর সেই পরিকল্পনার আংশীদার, ভারতের মধ্যেই বাস করা অনেক হিন্দু, বিধর্মী, সাংবাদিক, খবরের কাগজের মালিক, সিনেমার পরিচালক, প্রজোজক এবং নাম  করা বেশ কিছু অভিনেতা। এদের পেছনে আছে শক্তিশালী ‘পরিবার কেন্দ্রিক কিছু রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতারা”।
‘রাখাইন’ পাকিস্তান বা বাংলাদেশে নয়, বার্মাতে। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা, ঘন বন জঙ্গলে ভর্তি অনুন্নত একট অঞ্চল। এখানে যদি ‘জেহাদী’ ঘাটি গাড়া যায়, তাহলে অনেক সুবিধা। ভারতের মনিপুর এবং অন্যান্য পুর্বাঞ্চল দিয়ে ‘সন্ত্রাসী কাজ’ চালানো সহজ। আর এসব করলে সরাসরি বাংলাদেশ বা পাকিস্তান কে দ্বায়ী করা যাবে না, যদি করতে হয় তাহলে করতে হবে মায়ানমার সরকারকে। এই ভাবনা ‘ মাসুদ আজাহার (নাম শুনেছেন নিশচয়ই—একে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেন হাইজ্যাক করা হয়েছিলো, আর আমাদের বিদেশ মন্ত্রী যশবন্ত সিং কান্দাহার গিয়ে  একে ‘সন্ত্রাসী তালিবানদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন) এবং অন্যান্য বুদ্ধিমানের বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
****************** 

“রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সংঘটন”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

আরব থেকে উদ্ভুত ‘জেহাদী’ ঔপনবেশিকতা যেখানে পৃথিবীর যে দেশেই গেছে, সেখানেই দখল করে সেটা নিজেদের মতো করে নিয়েছে। পৃথিবীতে ধর্মের নামে ঔপনিবেশিকতা স্থাপন আজ নতুন কিছু নয়। রোম সম্রাট কনষ্টান্টাইন খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করে সারা বিজীত অঞ্চল খ্রীষ্টান ধর্মের ছত্র ছায়া নিয়ে এসেছিলেন। 

আমরা রাস্তা ঘাটে যে ‘পিজেরো’ নামে একটি গাড়ি দেখতে পাই, সেটা আসলে ‘পিজেরো’ নামে এক ভাড়টে গুন্ডা দলের সর্দারের নাম। সে ছিলো একজন স্প্যানিশ এবং তার মুল উদ্দেশ্য ছিলো প্রচুর অর্থ উপার্জন। ১৫৫২ সালে, আমাদের ভারতে যখন ‘মোঘল বংশ’ শাসন করছে, সেই সময় সে স্পেনের রাজার মদতে, এক ভাড়াটে সৈন্য বাহিনী নিয়ে দক্ষিন আমেরিকার ‘পেরু’ দখল করে ইঙ্কা রাজা আতাহুল্পাকে ‘বন্ধুত্বের ভান দেখিয়ে হত্যা করে’। সেদিন পেরুর রাজধানী ‘লিমা’ নিরীহ ইঙ্কাদের রক্তে ভেসে গিয়েছিলো। স্পেনের রাজার সংগে চুক্তি অনুযায়ী, দেশটি রাজার অধীনে আসে এবং সমস্ত পেরু বাসী ইঙ্কাদের রোমান ক্যাথলিক বানানো হয়। পিজেরো অতুল ঐশ্বর্য্যের মালিক হয়ে রাজার নামে ১০ বছর পেরু শাসন করে। আজ পেরু বাসী রোমান ক্যাথলিক,কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো স্বত্তা নেই। ধর্ম, সংষ্কৃতি হারিয়ে তারা আজ এক অদ্ভুত হতাশা গ্রস্থ জাতিতে পরিনত। ( লেখকের লেখা “দেবতাদের দেশে” পড়ুন, জানতে পারবেন এক অমানবিক কাহিনী )

তাই বলছি, এক সময় খ্রীষ্টানরা তাদের ধর্ম এবং যীশুর নামে দেশ দখল করেছে, মানুষের রক্তে হোলি খেলেছে। আর একটি অমানবিক শক্তিও ওই খ্রীষ্টানদের বৈমাত্রীয় ভাই ‘জেহাদ’ এর নামে সেই ৬২২ সাল থেকে একই কাজ করে চলেছে। দুই ভাই মিলে সারা পৃথিবীকে ভাগ করে নিয়েছে। বাদ শুধু পুবের কিছু বৌদ্ধ দেশ, আর পুরো দখল করে তাদের নিজস্ব ধর্ম সংষ্কৃতিকে গ্রাস করে নিতে না পারা ‘আমাদের এই ভারত’। তবে প্রায় এক তৃতীয়াংশ নেওয়া হয়ে গেছে, বাকী দুই তৃতীয়াংশ না নিতে পারলে ‘জেহাদ’ সম্পুর্ন হবে না। 

বৌদ্ধরা অহিংস হতে পারে কিন্তু নিজের দেশকে ভালো বাসে। কেউ একটু হুস করলো আর অমনি ‘মহাত্মা সাজার জন্য, কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে, প্রধান মন্ত্রী হবার খোয়াবে’ নিজের দেশকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয় না। তাছাড়া আর যে দেশে বৌদ্ধরা আছে সেখানে ঐ ‘জেহাদী’ নোংরামো করে পার পাওয়া যায় না। তাই ওদের নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই এখন। 

আশির দশকে ‘রোম’ থেকে উড়ে এসে পোপ জন পল দিল্লীতে ময়দানে বলেছিলো, ‘এক বিংশ শতাব্দী ভারতী ‘পাগান’ দের সভ্য বানানোর শতাব্দী’ ( Twenty first Century will be the century to make the Indian Pagans Civilised”—ঠিক এই উক্তিই সেই ভুদ্রলোক করেছিলো আমাদের ভারত সরকারের অতিথি হিসাবে এসে। একটি ভারতীয় ও একটিকথাওবলেনি।

সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একজন রোমান ক্যাথলিক কে ভারতের এক প্রাচীন রাজনৈতিক দলের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই কবে থেকে, খুব সুচতুর পরিকল্পনায়। তিনি তার কাজ খুব সুচারু ভাবে করে চলেছেন আজো। ভারতের ‘একজন কেন্দ্রিক/ ব্যাক্তি কেন্দ্রিক অগনতান্ত্রিক দল গুলো নেতা নেত্রী, বেশ করেকজন মুখ্য মন্ত্রী, কাউকে ফোর্ড ফাইন্ডেশন এর টাকা পাইয়ে দিয়ে, ম্যাগসেসে পুরষ্কার দিয়ে খোদ দিল্লীর মুখ্য মন্ত্রী করে দেওয়া হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজন কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রীত হয়ে দেশ টাকে বিকিয়ে দেবার পরিকল্পনার সংগে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত।এদের হয়ে হয়ে বাজনা বাজানোর জন্য সাংবাদিকরাও বিক্রীত। সিনেমার পরিচালক থেকে শুরু করে প্রযোজক, অভিনেতা তৈরী।

পাকিস্তান টাকা পাচ্ছে বিদেশ থেকে। সেই টাকা দিয়ে বানাচ্ছে ‘জেহাদী নেতা’। তারা পশ্চিম এবং পুর্ব দিকে থেকে ভারতকে পিষে মারার জন্য সারা ভারতে, বিশেষ করে কাশ্মীরে এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিম বংগে ‘জেহাদী সংঘটনের ঘাটি বানিয়েছে।‘

বাংলাদেশের পুবে ‘রোহিঙ্গা (আল্লার আশির্বাদ প্রাপ্ত) মুসলিমদের বাস স্থল এই ‘জেহাদী’ কাজ কর্মের জন্য এক নিরাপদ আস্তানা। সেই জন্য আজ সেখানে তৈরী হয়েছে  
 

1. Rohingya Solidarity Organization’ (RSO) was founded in early 1980’s- এদের কার্যকলাপ একেবারে তালিবান এবং কাশ্মীরের ‘হিজ বুল মুজাহিদিন’ এর মতো। এদের একমাত্র সাধনা ‘জেহাদ এবং ইসলামের জয়ধ্বজা ওড়ানো। বাংলাদেশের দুই ‘জেহাদী সংঘটন, ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জামাতী) এবং ‘হরকত-উল-জেহাদ-উল-ইসলামী’, এই দুই বাংলাদেশী সঙ্ঘটনের মাধ্যমে এরা রাখাইনে সন্ত্রাসী কাজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কর্ম পথ খুন খারাবি, লুট পাঠ, মানুষের মনে ভয় তৈরী করা। এদের নেতার নাম ‘নুরুল ইসলাম’।।
2. ১৯৯৮ সালে তৈরী হয়েছে Arakan Rohingya National Organization’
3. Arakan Rohingya Islamic Front’ in 1998।এই দুই মিলে হয়েছেArakan Rohingya National Organization’ (ARNO)।
4. এই সব জেহাদী দলের ছাত্র শাখার নাম IstehadulTullabulMuslemin (ITM)
5. এদের রাজনৈতিক দলের নামNational United Party of Arakan (NUPA)
6. 
7. Arakan Rohingya Salvation Army (ARSA) has suspected terror links with Al-Qaeda, Jamaat-udDawa (JuD) & other Gulf-based jihadi groups. Karachi-born Rohingya origin & Mecca-based fundamentalist leader ‘Ataullah alias Ameer Abu Amar, Abu Amar Jununi’ is said to be the head of both the ARSA & Harkat-ul Yakin.------এই ‘আরসা’ রাই কিছুদিন আগে  মায়ানমার সিকিউরিটি ফোর্সের ক্যাম্পে হামলা করে অনেক প্রান ও ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তার প্রতিশোধে সিকিউরিটিফোর্স ব্যবাস্থা নেওয়ায় সারা পৃথিবী কেদে ভাসাচ্ছে রোহিংগা উদ্বাস্তুদের জন্য। আগেই বলেছি, অন্যদেশ হিন্দুদের মতো নয়। তারা ইট মারলে পাটকেল দেয়।।

রোহিংগা দের এই সব সন্ত্রাসী দল আরো আছে। এরা সবাই অর্থ পায় পুরো দক্ষিন পুর্ব এশিয়া, বাংলাদেশ,পাকিস্তান এবং আফগানী জেহাদী “ গুলবুদ্ধিন হেকমাতিয়ারের ( আফিং এর ব্যাবসা) থেকে। আফগান যুদ্ধের সময় বহু রোহিঙ্গা যোগদান করে । এরা দেশ ফিরে এসে এই সব সন্ত্রাসী পবিত্র কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ‘আল কায়েদা’ র সংগে এদের যোগ বেশ আগের। বর্তমানে তার সংগে যুক্ত হয়েছে সিরিয়া ইরাক থেকে আসা জঙ্গীরা। রোহিংগা সন্ত্রাসীদের পৃথিবীর নানা জেহাদী সংগ্রামে পাঠানো হয়েছে। আফগানিস্তানে তালিবানদের সংগে মিলে এরা যুদ্ধ করেছে ওসামা বিন লাদেনের নেত্তৃত্বে। ওদের এই সব পবিত্র কর্মের সমস্ত খবর এবং ভিডিও ক্লিপ আমেরিকার কাছে আছে।

রোহীঙ্গা জঙ্গীরা সক্রিয় সাহায্য পায় লিবিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং ইরান থেকে। সৌদি সংঘটন Rabitat al-Alam al-Islami’এদের প্রচুর অর্থ সাহায্য করে। 

রোহিংগাদের সন্ত্রাসী কর্ম পদ্ধতি, উদ্দেশ্য (যা আগে লিখলাম) এবং এদের মদত দাতা দের নিষয়ে পুর্নাঙ্গ বিবরন লেখা আমার সাধ্যের বাইরে। সেই কাজ ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর। রাখাইনে কিছু হিন্দু ছিলো। আজ তাদের “গন কবর” পাওয়া যাচ্ছে। একটি ইসলামিক দেশে ‘না -পাক’ রা কি করে থাকে ? সেই জন্য এই হিন্দু গুলোকে মেরে কেটে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ছবি,ভিডিও ফেসবুকেই ছড়িয়েছে, একটি সংবাদ মাধ্যম ও প্রচার করেছে। প্রান নিয়ে বেচে থাকা হিন্দু রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে বা ভারতে এসেছে। 

আমাদের পশ্চিম বংগের বুদ্ধিজীবি, নেতারা এটা জানেন না তা হতে পারে না। এরা সব জানে ।কিন্তু ভোটের আশায় বা কোনো গোপন যোগাযোগের জন্য সবাই চুপ আছে। এই রোহিঙ্গারা যদি ভারতে ঘাটি গাড়ে, যার পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী রা করেছে, মাসুদ আজাহার, হাফিজ সৈয়দ দের মদতে আমাদের পুর্ব অঞ্চল আবার রক্তাক্ত হতে সময় লাগবে না। সেই আঁচ এসে পড়বে ত্রিপুরা এবং পশ্চিম বংগে। বর্তমানে যে ৪০০০০ রোহিংগা ভারতে এসেছে তাদের এক বিরাট অংশ কাশ্মীরে চলে গেছে ।এক অংশ পশ্চিম বংগের কিছু নেতাদের মদতে বেশ বহাল তবিয়তে থেকে সময়ের এবং আদেশের অপেক্ষায় আছে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted