ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ভবিষ্যৎ ।

ভারতীয়  চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ভবিষ্যৎ ।
 আজ সারাবিশ্বে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ভারতের যোগদর্শন   বহুলভাবে প্রচলিত।যোগশাস্ত্র বেদ ও উপনিষদ সহ প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। মুনিঋষিরা এসব শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। এসবই শ্লোকের মাধ্যমে সিন্ধু সভ্যতারও আগ হতে হাজার হাজার বছর পেরিয়ে খৃষ্টপুর্ব কালে ঋষি পতঞ্জলীর মাধ্যমে যোগসূত্র হিসেবে সঙ্কলিত হয়ে শ্লোক হিসেবেই প্রচলিত থাকে। সপ্তম শতাব্দীতে লিখিত ভাবে প্রথম স্থান পায়। এর এক হাজার বছরেরও বেশী সময় পর স্বামী বিবেকানন্দ এই যোগের সাথে পশ্চিমের পরিচয় করান। 

   কিন্তু কেন ভারতের আয়ুর্বেদ এবং যোগশাস্ত্রের সাথে পশ্চিমের পরিচয় এর আগে ঘটেনি তার কারন অনুমান করা যায়। সুলতানী আমল থেকে মুঘল আমল পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষা এবং ভারতের দর্শনের প্রতিটি দিককে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়। ভিনদেশীরা এসে ভারতীয়দের নিজের ভাষার উপর চাপিয়ে দেয় তাদের ভাষা। এটাই সকল উপনিবেশবাদীদের শ্রেণী চরিত্র। এর ফলে  যে সভ্যতা মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে ছিল বিশ্বের  অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাইই হয়ে গেল এক অশিক্ষিত জনপদ। মগধ এবং তক্ষশীলা দুটি শহর ছিল জ্ঞান আরোহনের কেন্দ্র। অসংখ্য বিদেশী বিশেষত চীনারা সেসব শহরে বিদ্যা লাভের জন্য আসত। এরপর এলো ইংরেজরা। ওরাও ইংরেজী চাপিয়ে দিল। সংস্কৃত এরই মধ্যে সম্পুর্ণ মৃত ভাষা হয়ে গেল। তবে ইউরোপের রেনেসাঁর সময়ে প্রাচীন দর্শণ ইত্যাদির দিকে খৃস্টানরা ঝুকেছিল বলেই ভারতীয় দর্শন তাদের আকৃষ্ট করেছিল। এর জন্য তারা আবার সংস্কৃতকে নিয়ে চর্চা শুরু করে।  ইংরেজ শাসন আমলে ইউরোপীয়রা ভারতীয়দের বেদ উপনিষদ পুনরায় উদ্ধার করে এবং সেসব নিয়ে গবেষনা শুরু করে। জার্মানীতে সংস্কৃত ভাষার উপর অনেক চর্চা হয়েছিল।( এখনও সংস্কৃতকে most scientific ফনেটিক ভাষা হিসেবে গন্য করা হয়। যেমন CAT আর KAT  এখানে C এবং K এর উচ্চারণ একই হচ্ছে। এই অসংগতি Sanskrit এ নেই। লেখা আর উচ্চারণ এক হতেই হবে। বাংলাভাষা সংস্কৃত থেকে তার alphabet ও grammar  নিয়েছে বলেই এর সাথে সংস্কৃতের গভীর যোগসূত্র। বাংলা উন্নত ভাষা হিসেবে তাই ইংরেজ আমলে দ্রুত স্থান করে নিতে পারে। )
  তবে সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে ভারতীয়দের চুড়ান্ত পশ্চিমমুখী চিন্তা ভাবনার জন্য। ভারতীয়রা আজ জানেনা plastic surgery খৃষ্টপুর্ব ৮ম শতব্দীতে ভারতে চালু হয়েছিল । চীন কিন্তু তাদের সংস্কৃতিকে এককালে দেয়াল দিয়ে আগলে রেখেছিল; এখনও তারা নিজেদের সব স্বাতন্ত্র্য বহাল রেখেছে। যদি বলা হয় চীন তাদের এই চরম রক্ষণশীল মনোভাবের কারনেই আজ সবাইকে টপকে এগিয়ে যাচ্ছে তবে ভুল হবেনা। 
   ভারতীয়দের উচিত ছিল ইংরেজের কাছ থেকে স্বাধীনতা নেবার আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার। অথচ আমরা অর্থহীন এক সাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিয়ে নিজেদের অতীতকে প্রতিমূহুর্তে কালিমালিপ্ত করেছি এবং সব জ্ঞানশাস্ত্রকে ধর্মশাস্ত্র বলে কিছু ধর্মান্ধ লোকের কাছে তুলে দিয়েছি। যার ফলে গরুতেই গডাগডি দিচ্ছে এরা। আর আমরাও নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আমাদের সমস্ত অতীত ছিল লজ্জার -এই শিক্ষা আমাদের নৈতিকতার বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় কারন। নিজের বা নিজেদের উপর আস্থা হারানোর ফল ভোগ করছে ভারতের মানুষ। 
    এখনও সময় আছে ঘুরে দাঁড়াবার। সারা বিশ্বে যেভাবে যোগ শাস্ত্র আজ আদৃত; ঠিক একই ভাবে এর আয়ুর্বেদ শাস্ত্রও বিশ্বকে নতুন চিকিতসার দ্বার খুলে দিতে পারে। আগামীতে alternative medicine বিশাল এক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলেই মনে করেন অনেকে। হার্বাল মেডিসিন অ্যামেরিকায় দ্রুত প্রসার লাভ করছে। ভারতীয়দের উচিত ভারতের শাস্ত্র সমূহকে reinvent করা।বিজ্ঞান চলমান। ফলেই ভারতের অতীত চিকিতসা যে সঠিক বা বর্তমানের জন্য প্রযোজ্য হবে তা নয়।  আজ থেকে ২০ বছর আগে যে medicine দেয়া হত সেটা এখন বেন্ড। প্রায় ঔষধই একসময় নিষিদ্ধ হয়ে যায় তাই বলে কি আমরা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করি? না, ভুল হবেই; আর ভুল থেকেই শিখতে হবে। ভারতে প্রচুর শাস্ত্র আছে সেগুলি আবার নতুন করে যাচাই করতে হবে। এভাবেই ভারত একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতিতে পরিনত হতে পারবে। ময়ূর পুচ্ছ কাক সেজে খুব বেশী যাওয়া যাবেনা -এটা এখন বুঝা দরকার।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted