যদি ভারত আমেরিকাকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না দেয় তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আমেরিকা এই রকমই হুমকি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, আদেও কি তাই, আসল সত্যটা কি?

গত দুদিন ধরে একটা খবরে ছেয়ে গেছে দেশের সমস্ত মিডিয়া। খবরটা বেশ মুখরোচক, যদি ভারত আমেরিকাকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না দেয় তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আমেরিকা এই রকমই হুমকি দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাথে একটা দু'ঘণ্টা লম্বা ভিডিওর থেকে কয়েক সেকেন্ডের ক্লিপ দেখানো হচ্ছে তাতে ট্রাম্পবাবু বলছেন "রেটালিয়েশন তো হতেই পারে, কেন হবেনা"। ব্যাস আর কি চাই? খবরের সাথে সাথে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য ভিডিও ক্লিপিংও রয়েছে। সারাদেশের মিডিয়া, দেশের মোদিবিরোধী জনতা, এমনকি বিজেপি এবং মোদির সাপোর্টাররাও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রে রে করে উঠলেন এই বিষয়ে। কেউ এই খবরটা এই ভিডিওটার আসল গল্প খুঁজে বার করার চেষ্টাও করলেন না। বিজেপির আইটি সেল ইদানিং রভিশ কুমারের দয়ায় খুব নাম করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যেও কাউকে দেখলাম না এত বড় একটা মিথ্যা প্রচার এর বিরোধীতা করতে। সকাল থেকে যাদের যাদেরকে আমি এই বিষয়ে বলতে গেছি তারাই দেখেছি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে তেড়ে এসেছেন। "ট্রাম্প বলেছে তো, ভিডিও আছে। তুমি দেখনি ? দাড়াও তোমায় পাঠাচ্ছি।"

ঘটনাটা ভারতের সবথেকে প্রথম রিপোর্ট করে এনডিটিভি। ওদের এটাই কাজ, দেশবিরোধী কথা প্রচার করাতে ওদের বিশেষ পারদর্শিতা আছে। পরে, তাদের দেখাদেখি প্রিন্ট, অয়ার, এবিপি, মানি কন্ট্রোল ইত্যাদি মোটামুটি সব রকম নিউজ পোর্টালে এই খবরটা ছড়িয়ে পরলো। কিছু বিদেশী মিডিয়া হাউসঅ এই বিষয়টা নিয়ে বেশ রসিয়ে কয়েক পাতা লিখে ফেলল। কিন্তু কেউই আসল গল্প জানতে চাইল না বা জানলেও লিখল না। "Media Distortion Examples" বলে যদি গুগলে সার্চ করেন তাহলে এই ধরনের অনেক উদাহরণ দেখতে পাবেন। এইটাও বোধহয় পরবর্তীকালে এই সার্চ এর রেজাল্ট হিসাবে দেখতে পাওয়া যাবে।

এবার আসা যাক কাজের কথায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের তরফ থেকে আসা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন এক এক করে। সেখানে এক সাংবাদিক তাকে এই প্রশ্নটা করেন: "Are you worried about retaliation to your decision to ban export of medical goods like Indian Prime Minister Modi's decision to not export Hydroxychloroquine to the United States and other countries?"
এটার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়,

ঠিক যেমন প্রাইম মিনিস্টার মোদী হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তেমনি আপনি যে চিকিৎসা সংক্রান্ত দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পদ পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত ?

উত্তরের ট্রাম্প বাবু অনেক কথাই বলেন। বলেন মোদীজির সাথে তার কি কি কথা হয়েছে তিনি কেন আশাবাদী যে প্রাইম মিনিস্টার মোদী তাঁকে এই ওষুধগুলো পাঠাবেন। তারপর উত্তরের শেষের দিকে তিনি বলেন আর Retaliation, সে তো হতেই পারে, কেন হবেনা।

এখানে প্রশ্ন ছিল, তাঁর স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় সামগ্রী অন্য দেশে না পাঠাবার সিদ্ধান্তের জন্য আজ আমেরিকা ভুক্তভুগি হতে পারে কিনা সেই বিষয়ে। তিনি উত্তরে বলেন হ্যাঁ, সে তো হতেই পারে। এনডিটিভি যখন প্রথম এই বিষয়টা রিপোর্ট করে তখন এনডিটিভি ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন করার যে অংশটুকু ছিল ওটা বাদ দিয়ে দেয়। শুধু ট্রাম্পের উত্তরটাই শোনা যায় এবং তাতে শেষের দিকে তিনি বলছেন "Retaliation, সে তো হতেই পারে, কেন হবেনা"। ব্যাস, একটা মিথ্যা সাজানো গল্প সত্যি হয়ে গেল। সারাদেশে হৈ হৈ পড়ে গেল ট্রাম্প মোদীকে হুমকি দিয়েছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অফিসের তরফ থেকে কোনরকম সাফাই দেয়া হয়নি কারণ তারা বিশ্বব্যাপী মহামারী নিয়ে যৎপরোনাস্তি ব্যস্ত আছেন। কিন্তু লোকাল বিজেপি, রাজ্য বিজেপি, বিজেপির মুখপত্ররা এই বিষয়ে কেন কিছু বলতে পারলো না তার উত্তর আমার কাছে নেই।

এখন ভারত এই ওষুধ আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটাকেও "ট্রাম্পের হুমকির পরে ভারত ওষুধ পাঠাতে বাধ্য হলো" বলে প্রচার করা হচ্ছে। নেপথ্যে কি কি ঘটে গেল সেগুলো এখনও দেশের মিডিয়া কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।

যা যা ঘটলো :

আমেরিকা ভারতের কাছে #হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন চেয়ে পাঠানোর পর ভারত আমেরিকার কাছে কতকগুলি শর্ত রাখে | শর্তগুলি হলো : ১) আমেরিকায় ভারতীয় কোম্পানির নিঃশুল্ক বানিজ্য করতে পারবে।
২) ভবিষ্যতে, ভারতীয় কোনো কোম্পানিকে FDA ব্যান করতে পারবেনা |
৩) বর্তমানে যে সমস্ত ভারতীয় ফার্মা কোম্পানি গুলোর উপর FDA ব্যান আছে তা যতশীঘ্র সম্ভব তুলে নিতে হবে |

আমেরিকা এই সমস্ত শর্তই মেনে নিয়েছে এবং আমেরিকার মার্কেট ভারতের কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে । ৩ সপ্তাহ আগেই ভারতের বড় ওষুধ তৈরির কোম্পানি Ipca Laboratories Limited আর Zydus Cadila কে অ্যন্টিম্যালেরিয়ার ড্রাগ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বানাতে ভারত সরকার অর্ডার দিয়েছিলো এই COVID-19 এর কারনে গোটা বিশ্বের প্রয়োজন পরতে পারে জেনেই‌ । কোম্পানি দুটি আগামী মাসের মধ্যেই ৪(চার) মেগাটন থেকে ৩০ মেগাটন আমেরিকার মার্কেটে পাঠাবে । Intas Pharmaceuticals Ltd, McW Healthcare Pvt Ltd, Macleods Pharmaceuticals Ltd., Cipla, Lupin, Abbott India Ltd., Unichem, Laurus Labs Limited, Sun Pharma ছাড়াও প্রায় ১০০ টা কোম্পানিতে হয় প্রোডাকশন চলছে কিংবা তারা যথেষ্ট পরিমাণে বাজারজাত করবার জন্য তৈরি করে নিয়েছে। বাস্তবতা হলো ভারতীয় ছোট থেকে বড় সব কোম্পানির ব্যাপকভাবে তাদের কাছে পর্যাপ্ত এই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আছে। ফলে আমাদের দেশের মানুষদের জন্য কখনোই এই মেডিসিন কম পরবে না । এরপর বেশি উৎপাদন করে তার সঠিক ভাবে ব্যবসায়িক লাভের বিষয় মোদীজীর মাথায় যথেষ্ট আছে । মাত্র ২৪ ঘন্টায় মোদীজীর শর্ত মেনে নিলো আমেরিকা। Ministry of External Affairs, Government of India বিশ্বজুরে মহামারীর জন্য নিজের দেশের জন্য পর্যাপ্ত মেডিসিন রেখেই আমেরিকা ছাড়াও বিশ্বের ৩০ টি দেশ যারা মহামারীর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকেও এই ওষুধ সাপ্লাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা ব্যবসায়িক উন্নতির কারন তো অবশ্যই, সাথে মানবিকতার নিদর্শনও। এই সাহায্যের ফলে বিশ্বের কাছে ভারতের মর্যাদা বাড়বে এবং দেশ গুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নতি হবে। যদি আজ ভারত এই দেশ গুলোকে সাহায্য না করে তবে এদের আবার চিনের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। ফলে চিনের আধিপত্য কম করা সম্ভব হবেনা। হ্যাঁ এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও ভারত সরকার ভবিষ্যতের জন্য সারা বিশ্বে ভারতীয় ফার্মা কোম্পানির জন্য এক বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধার সুযোগ তৈরি করে নিলো। এটা একমাত্র মোদীজির বিচক্ষণতা আর উত্কৃষ্ট লিডারশিপের জন্যই সম্ভব হলো |

১) https://youtu.be/-C3OvkhtGW4
২) https://www.thepharmaletter.com/in-brief/brief-coronavirus-woes-see-us-fda-lift-ban-on-ipca-plants-in-india
৩) https://m.economictimes.com/industry/healthcare/biotech/pharmaceuticals/fda-lifts-curbs-on-indian-maker-of-malaria-touted-by-donald-trump-as-a-covid-counter/articleshow/74786575.cms
৪) দুটো ছবি ও ভিডিওটির সেইটুকু অংশও দিলাম সাথে |
@অনিন্দ্য

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted