‘আমার বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল খোলার খবরে এত প্রতিক্রিয়া দেখানোর কি আছে?

নতুন নামে জামাত ইসলামের আত্মপ্রকাশে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত কি ঘটল বুঝলাম না!

আপনি আগে স্পষ্ট করুন, আপনি কি ইসলামি রাজনীতি বা মৌলবাদী রাজনীতির বিরোধী নাকি শুধু জামাত ইসলামের রাজনীতি বিরোধী?

জামাত ইসলামী ১৯৭১ সালে গণহত্যা সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আইন করেই এই রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করা যায়। সেটি করা হয়নি। এখন তাদের ভোটের রাজনীতি বাতিল হওয়ার কারণে তারা কৌশলে নতুন নামে দল করেছে। আরো কৌশল হিসেবে ৭১-এর কোন যুদ্ধাপরাধীকে দলে না রেখে শিবিরের নেতারা যাদের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে তারাই উদ্যোগ নিয়ে দল গঠন করেছে। আইনত এটি করার অধিকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের আছে।

জামাতের নতুন আত্মপ্রকাশে যারা ‘মুক্তিযুদ্ধের’ ডাক দিচ্ছেন ফেইসবুকে তাদের জন্য সমবেদনা। কেননা বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। এমন কি জামাত ইসলাম বিরোধী এমন ডজনখানের ইসলামিক দল আছে যারা ভোটের বাজারে জামাত থেকে অনেক শক্তিশালী। তাদের সংগঠানিক শক্তি আওয়ামী লীগ বিএনপির চাইতেও অনেক বেটার। এইসব ইসলামী দল নিয়ে আপনাদের কোন সমস্যা আছে বলে কিন্তু মনে হয়নি। তারাও কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র, শরীয়া আইন, আল্লার আইন, নারীদের পর্দা রেখে পুরুষের শাসনের কথাই বলে। এদের মধ্যে খিলাফত মজলিসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ একবার চুক্তিও করেছিলো যে তারা ক্ষমতায় আসলে ইসলাম বিরোধী কোন কিছু করবে না। ইসলামের বিধানের মধ্যে থেকেই দেশ চালাবে ইত্যাদি।

বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা আকিদাগতভাবে মওদুদি বিরোধী। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামিক নেটওয়ার্ক হচ্ছে হেফাজত ইসলাম। এরা বর্তমানে সরকারের সঙ্গে অঘোষিত মিত্রতার বন্ধনে রয়েছে। তাদের নির্দেশ বা তাদের বাধার মুখে দেশে একের পর এক ইসলামিকরণ ঘটে গেছে। এই শক্তির ভয়ে নারী নীতি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাল্য বিবাহ আইন কঠোর করা যায়নি। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপন করা যায়নি। তাদের ভয়ে দেশের মুক্তচিন্তার লেখনী প্রকাশনী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশের নাস্তিক, ভিন্ন মতালম্বী, বাউল এদের হত্যা, জেল জরিমানা, আইসিটি আইনে তাদের গ্রেফতার জামাত ইসলাম সরকারকে দিয়ে করায়নি। বরং সরকার হেফাজত ইসলামের চাপেই এসব করে চলেছে। তাহলে জামাত ইসলামীর ‘আমার বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল খোলার খবরে এত প্রতিক্রিয়া দেখানোর কি আছে?

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে এই নতুন মোড়কে জামাতের আত্মপ্রকাশে আওয়ামী লীগের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে। কিন্তু ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে যদি কিছুর অস্বস্তি থেকে থাকে তাহলে সেই চেতনা এই খবরে আলাদা করে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। কারণ সে চেতনা অলরেডি আক্রান্ত। ইসলামিক রাজনীতি ও সেই রাজনীতির সঙ্গে অবৈধ সহবাসের দরূণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ মৃত প্রায়। সেক্যুলার প্রগতিশীল বাংলাদেশ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম শর্ত হয়ে থাকে তাহলে সেই চেতনাকে পায়ে মারিয়ে ইসলামিক চেতনায় হেঁটে যাওয়া কোন রাজনৈতিক কর্মীর জামাতের নতুন আত্মপ্রকাশে উদ্বিগ্ন সাজাটা ন্যাকামি মাত্র!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted