ইবনে সিনা'কে কাফের, মুরতাদ তকমা দিয়েছিল মুসলমানরাই
মুসলিম উম্মাহর গর্ব, প্রখ্যাত 'মুসলিম' চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক ইবনে সিনা বা আভিসিনার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী কি ছিল? তিনি কি আদৌ মুসলিম ছিলেন? বেশ কয়েকটা বই আর ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে এই বিষয়টা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেলাম।
ইবনে সিনা ছিলেন একজন কুরানে হাফেজ। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি হাফেজ হন। কিন্তু তার ধর্মীয় দর্শন ছিল মৌল ও সুন্নি মতবাদের সম্পুর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহ এই বিশ্বজগৎকে কোন এক নির্দিষ্ট সময় সৃষ্টি করেন- এ মতের বিরোধী ছিলেন তিনি। তার দাবী অনুযায়ী এ বিশ্ব অনন্তকাল ধরে বিরাজমান। কিন্তু কোরান হাদিস অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব নির্দিষ্ট সময়ে তৈরী। এবং এটা সৃষ্টি হয়েছিল ৬ দিনে।
তিনি মনে করতেন স্রষ্টা বিশেষ কোন মানুষ যেমন আমি বা আপনি সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেন না অর্থাৎ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা পূর্বনির্ধারিত নয় এবং স্রষ্টা এ বিষয়ে অবগতও নন। কিন্তু অনেক ইসলামি পন্ডিতদের মতেই এ ধরণের দাবী পরোক্ষভাবে আল্লাহর সর্বশক্তিকে অস্বীকারের সমতুল্য, একই সাথে কোরান হাদিসে বর্ণিত তাকদীরকেও অস্বীকার করা হয়।
ইবনে সিনা আত্মায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তিনি মৃত্যুর পর মানুষের দৈহিক পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী ছিলেন। তার মতে মৃত্যুর পর পুণ্যাত্মা ফিরে যাবে বুদ্ধির জগতে, আর পাপাত্মা দেহ হারানোর বেদনায় অসুস্থ হয়ে পড়বে। এটাই হবে তার শাস্তি। এটিও কুরান হাদিসের পরিপন্থী। তিনিও ধর্মগ্রন্থের প্রকাশ্য অর্থের চেয়ে গূঢ় অর্থকে বেশি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও তিনি তার গ্রন্থে নবীদেরকে 'দার্শনিক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তার মতে ইসলামের নবীদের মর্যাদা দার্শনিকদের থেকে বেশি। তিনি কুরানের বিজ্ঞান ও দর্শন সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে নিজের মত করে ব্যাখা করেছিলেন।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে তিনি একটি আর্গুমেন্ট তৈরী করেন যার নাম 'প্রুফ অব দ্যা ট্রুথফুল'। যার সারসংক্ষেপ হল- প্রতিটা ঘটনা বা সৃষ্টির পেছনে কারণ থাকে, ঐ কারণের পেছনেও কারণ থাকে। এভাবে পেছনে যেতে থাকলে আমাদের কোথায় থামা উচিত? তিনি দাবী করেন এই ইনফিনিট রিগ্রেসকে থামাতে অবশ্যই একজন সত্তার দরকার। এছাড়াও হামাদানের জেলে থাকা অবস্থায় তিনি আত্মার অস্তিত্ব বিষয়ে একটি দাবী লেখেন। যেটি 'ফ্লোটিং ম্যান' নামে পরিচিত।
ইবনে সিনাকে তার ধর্মীয় দর্শনের কারণে আর রাজনৈতিক কারণে অনেক ত্যাগই স্বীকার করতে হয়েছে। তার রাজনৈতিক আর ধর্মীয় দর্শনের কারণে তিনি অনেকের চক্ষুশূল ছিলেন। তার শত্রুর সংখ্যাও কম ছিলনা। একারণে তিনি এক জায়গায় বেশিদিন থাকতেননা। তিনি বিভিন্ন রাজদরবারে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করতেন। এর ভেতরেও তিনি প্রায় ৪৫০ টির মত বই লেখেন। যার প্রায় ২৪০ টি এখনো টিকে আছে।
হামাদানে থাকাকালীন একবার সেনাবাহিনীর কয়েকজন কঠোর রক্ষণশীল বিশ্বাসীর সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তর্কে না পেরে তারা ইবনে সিনাকে কতলের ফতোয়া দিল। সৈন্যরা তাকে খুঁজতে তার বাড়িতে গেল, না পেয়ে বাড়িতে লুটপাট চালালো, ফিরে এসে তাদের আমিরের কাছে মৃতুদন্ড দাবী করলো। ইবনে সিনা ভবিষ্যত আঁচ করতে পেরে আগেই তার এক বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি বেশ কম বয়সেই মারা যান। তার মৃত্যুর পেছনে তার জীবনের নানা রকম অনিয়মকে অনেকেই দায়ী করেন। মৃত্যুর পরও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েননি। তার মৃত্যুর বহু বছর পর ঈমাম গাজ্জালী তাকে কাফের ফতোয়া দেন।
আজ মুসলমানরা যেই ইবনে সিনাকে নিয়ে এত গর্ব করে। তাকে মুসলিম বিজ্ঞানী, মুসলিম চিকিৎসক, মুসলিম দার্শনিক বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু জীবিত এবং মৃত উভয় অবস্থায় তাকে কাফের, মুরতাদ তকমাও দিয়েছিল মুসলমানরাই।
https://imranshakh.blogspot.com/2020/01/blog-post_29.html?m=1
https://m.youtube.com/watch?v=44Ngl0fCvac&feature=youtu.be
- Nafis Sadique Shatil
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................